RG Kar Rape and Murder Case

বীর্য মেলেনি, লালা এক জনেরই! আরজি কর-কাণ্ড এক জনের পক্ষেও সম্ভব, রিপোর্ট দিল বিশেষজ্ঞ দল

দিল্লির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলকে আরজি করের ঘটনা সম্পর্কে মোট ন’টি প্রশ্ন করেছিল সিবিআই। তার উত্তরগুলি দিয়ে একটি রিপোর্ট প্রস্তুত করে বিশেষজ্ঞ দল। তাতেই উঠে এসেছে একাধিক তথ্য।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৭:৫৭
আরজি করে নির্যাতিতার দেহের আঘাত এবং অন্যান্য তথ্য খতিয়ে দেখে বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, যা হয়েছে, তা এক জনের পক্ষেও ঘটানো সম্ভব।

আরজি করে নির্যাতিতার দেহের আঘাত এবং অন্যান্য তথ্য খতিয়ে দেখে বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, যা হয়েছে, তা এক জনের পক্ষেও ঘটানো সম্ভব। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

এক জনের পক্ষেও ঘটানো সম্ভব আরজি কর-কাণ্ড। সিবিআইকে দেওয়া রিপোর্টে তেমনটাই জানিয়েছে দিল্লির বিশেষজ্ঞ দল। নির্যাতিতার শরীরে যে ধরনের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে, সেগুলি বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, আরজি করে ধর্ষণ-খুনের ঘটনা এক জনও ঘটিয়ে থাকতে পারেন। সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তবে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যামূলক প্রতিবেদনের সঙ্গে ঘটনার তথ্যপ্রমাণ মিলিয়ে দেখে এ সম্পর্কে আরও ‘নিশ্চিত’ হওয়া যাবে বলেই অভিমত প্রকাশ করেছে দিল্লির ওই চিকিৎসক দল।

Advertisement

দিল্লি এমসের ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ আদর্শ কুমারের নেতৃত্বাধীন ১১ সদস্যের বিশেষজ্ঞ দল ‘মাল্টি ইনস্টিটিউশনাল মেডিক্যাল বোর্ড’ (এমআইএমবি) আরজি করে নির্যাতিতার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট, ময়নাতদন্তের ভিডিয়োগ্রাফি, সুরতহালের রিপোর্ট এবং এই সংক্রান্ত অন্য প্রয়োজনীয় রিপোর্টগুলি খতিয়ে দেখেছে। আরজি কর-কাণ্ডের তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই এমআইএমবি-কে নির্যাতিতা এবং আরজি করের ঘটনা সম্পর্কে মোট ৯টি প্রশ্ন করেছিল। অন্তর্বর্তিকালীন রিপোর্টে ওই প্রশ্নগুলি ধরে ধরে তার উত্তর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞেরা। রিপোর্টটি কেন্দ্রীয় সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার আগে এমআইএমবি-র সদস্যেরা মোট চার বার বৈঠক করেন।

পূর্ণাঙ্গ রিপোর্টটি আনন্দবাজার অনলাইনের হেফাজতে রয়েছে। সেই রিপোর্টেই তৃতীয় প্রশ্নের উত্তরে উল্লেখ করা হয়েছে, আরজি করের ঘটনা যে এক জনের পক্ষেও ঘটানো সম্ভব, সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। প্রসঙ্গত, ওই ঘটনার তদন্তে নেমে প্রথমে কলকাতা পুলিশ অভিযুক্ত হিসেবে এক জন সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেফতার করেছিল। তাঁর বিচার হচ্ছে নিম্ন আদালতে। ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মন্ডলকে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। কিন্তু তাঁরা দু’জনেই ওই মামলায় জামিন পেয়ে গিয়েছেন। তবে আর্থিক তছরুপের মামলায় জামিন পাননি সন্দীপ। তিনি এখনও হেফাজতেই রয়েছেন।

রিপোর্টে বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, আরজি করে নির্যাতিতা তরুণীর শরীরের বিভিন্ন অংশে কামড়ের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। সেই সব জায়গা থেকে যে লালার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, তা মিলে গিয়েছে ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারের লালার সঙ্গে। এ ছাড়া, নির্যাতিতার যোনিতে বীর্য মেলেনি। কিন্তু সেখানে বলপ্রয়োগে প্রবেশের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।

যে ৯টি প্রশ্নের জবাব বিশেষজ্ঞদের দেওয়া ওই রিপোর্টে রয়েছে, সেগুলি হল—

১. শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা: শ্বাসরুদ্ধ করেই আরজি করের নির্যাতিতা তরুণীকে হত্যা করা হয়। ময়নাতদন্তকারী মেডিক্যাল বোর্ডের রিপোর্ট এবং অন্যান্য তথ্য খতিয়ে দেখে এমআইএমবি-র সদস্যেরা এ বিষয়ে একমত হয়েছেন। গত ৯ অগস্ট সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে ময়নাতদন্ত শুরু হয়। ৭টা ১০ মিনিট পর্যন্ত ময়নাতদন্ত চলে। ময়নাতদন্তের সময়ে দেহের কিছু কিছু অংশে পচন ধরেছিল। মনে করা হচ্ছে, নির্যাতিতার মৃত্যু হয়েছে ৯ তারিখ রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টার মধ্যে।

২. যোনিতে রক্ত, ছেঁড়া হাইমেন: আরজি করের মহিলা চিকিৎসক যে যৌন নিগৃহের শিকার হয়েছিলেন, তাঁকে যে ধর্ষণ করা হয়েছিল, তার একাধিক প্রমাণ মিলেছে। তাঁর হাইমেন ছেঁড়া ছিল। সেখান থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছিল। হাইমেনের ডান পাশে যোনিতে ছিল ক্ষতচিহ্ন। নির্যাতিতার থুতনিতে এবং গলার উপর ডান দিকে ছিল কামড়ের ক্ষত, যা যৌন নির্যাতনের প্রমাণ দেয়। নির্যাতিতার শরীর থেকে সংগ্রহ করা লালার নমুনা মিলে গিয়েছে ধৃত সিভিকের লালার সঙ্গে। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

৩. এক জনের পক্ষেও সম্ভব: রিপোর্টে বলা হয়েছে, নির্যাতিতার মুখে, ঘাড়ে এবং যোনিতে যে ধরনের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে, তা এক জনের পক্ষেও যে করা সম্ভব, সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। আনুষঙ্গিক তথ্যপ্রমাণ বিশ্লেষণ করেও এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে বিশেষজ্ঞ দল। তবে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের প্রকাশ করা বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক রিপোর্ট খতিয়ে দেখে এবং এমআইএমবি-র সঙ্গে আলোচনা করে এই তথ্য যাচাই করা যেতে পারে।

৪. চোখ বিস্ফারিত: নির্যাতিতার শরীরে যে সমস্ত আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে, মৃত্যুর আগেই সেই আঘাত করা হয়েছে। শ্বাসরোধের ফলে নির্যাতিতার চোখ বিস্ফারিত হয়ে গিয়েছিল। মৃত্যুর আগে তিনি ছটফট করছিলেন। সেই প্রমাণ মিলেছে। নাকের কাছে যে আঘাত রয়েছে, বহিরাগত কোনও চাপে চশমা ভেঙে যাওয়ার কারণে তা হতে পারে। এ ছাড়াও, ঘাড়ে এবং থুতনিতে কামড়ের ক্ষত রয়েছে। যোনিতে রয়েছে বলপ্রয়োগে প্রবেশের চিহ্ন।

৫. যোনিতে বলপ্রয়োগ: নির্যাতিতার যোনিতে যে ধরনের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে, তা বলপ্রয়োগের দিকেই ইঙ্গিত করে। অর্থাৎ, জোর করে সেখানে কিছু প্রবেশ করানো হয়েছিল। তা পুরুষাঙ্গ হতে পারে, শরীরের অন্য কোনও অঙ্গ হতে পারে অথবা ভোঁতা কোনও বস্তু হতে পারে।

৬. প্রতিরোধের চেষ্টা: ধর্ষণকারীকে বাধা দিয়েছিলেন নির্যাতিতা। প্রতিরোধের চেষ্টাও করেছিলেন বার বার। অভিযুক্তের দেহে যে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে, তা নির্যাতিতার প্রতিরোধের ফলেই তৈরি হয়েছে।

৭. ময়নাতদন্তের সময়ে নিয়মভঙ্গ: আরজি করে নির্যাতিতার ময়নাতদন্তের সময়ে কিছু নিয়মভঙ্গ হয়েছিল। রিপোর্টে তার উল্লেখ করেছে এমআইএমবি। ময়নাতদন্তের ভিডিয়োগ্রাফি থেকে জানা গিয়েছে, ময়নাতদন্ত চলাকালীন ওই কক্ষে অনেকে উপস্থিত ছিলেন। অনেকে আবার ব্যক্তিগত মোবাইলে ছবি তুলছিলেন এবং ভিডিয়ো রেকর্ড করছিলেন, যা একেবারেই নিয়মবিরুদ্ধ।

৮. বীর্য মেলেনি: নির্যাতিতার যোনিতে বীর্য মেলেনি। কিন্তু সেখানে বলপ্রয়োগে প্রবেশ ঘটানো হয়েছিল। কী ভাবে তা সম্ভব? রিপোর্টে ব্যাখ্যা করেছে এমআইএমবি। তাদের মতে, নির্যাতিতার যোনি থেকে সংগ্রহ করা নমুনায় একাধিক কারণে বীর্য না-ও থাকতে পারে। এক, যদি পুরুষাঙ্গ ছাড়া শরীরের অন্য কোনও অঙ্গ (সম্ভবত হাতের একাধিক আঙুলের কথা বলতে চেয়েছেন বিশেষজ্ঞেরা। যদিও রিপোর্টে নির্দিষ্ট করে তেমন কিছুর উল্লেখ নেই) বা অন্য কোনও ভোঁতা বস্তু যোনিতে জোর করে প্রবেশ করানো হয়। দুই, পুরুষাঙ্গ প্রবেশ করালেও যোনির ভিতর বীর্যপাত না ঘটে। তিন, যদি কন্ডোম ব্যবহার করা হয়।

৯. দাঁতে ব্রেস লাগানো ছিল: নির্যাতিতা তরুণীর দাঁতে ব্রেস (দাঁতের গঠন সঠিক করার জন্য বসানো বিশেষ তার) বসানো ছিল। চোখে ছিল চশমা। ফলে তাঁর মুখের ভিতরে, ঠোঁট এবং গালের ক্ষতগুলি আরও বেশি করে চোখে পড়েছে।

Advertisement
আরও পড়ুন