Daughter Chained By Parents In Howrah

চাকরি ছেড়ে বিয়ে করতে হবে, রাজি না-হওয়ায় তরুণীর পায়ে শিকল বেঁধে রাখলেন বাবা-মা! উদ্ধার করল রাজ্য পুলিশ

১৯ বছরের আরতি বড়বাজারের সাবিত্রী মহাবিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। পড়াশোনার পাশাপাশি নিউ ব্যারাকপুরের একটি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। কিন্তু মেয়ের চাকরি করা নিয়ে আপত্তি বাবা-মায়ের।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২৫ ২১:২৪
Legs Chained

এ ভাবেই বাড়িতে বন্দি করে রাখা হয়েছিল ১৯ বছরের আরতি সাউকে। —নিজস্ব চিত্র।

কলেজে পড়তে পড়তে চাকরি করছিলেন ১৯ বছরের আরতি সাউ। তিনি চান, স্বাবলম্বী হতে। কারও উপর অর্থনৈতিক ভাবে নির্ভর করতে চান না। কিন্তু বাবা-মা চান, তাড়াতাড়ি মেয়ের বিয়ে দিতে। চাকরি, পড়াশোনা ছেড়ে বিয়ে করতে রাজি না হওয়া মেয়ের পায়ে শিকল বেঁধে ঘরবন্দি করে রাখার অভিযোগ তাঁদের বিরুদ্ধে। খবর পেয়ে কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের সেই ছাত্রীকে উদ্ধার করল পুলিশ। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর হাওড়ার ঘুসুড়ি এলাকায়।

Advertisement

পুলিশের কাছে বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন মেয়ে। পাল্টা বাবা-মায়ের যুক্তি, বিপথে যাচ্ছিলেন মেয়ে। ‘সন্দেহজনক জায়গায়’ চাকরি করছিলেন। তাই মেয়ের ভাল করতে গিয়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছিলেন তাঁকে।

পুলিশ সূত্রে খবর, ১৯ বছরের আরতি বড়বাজারের সাবিত্রী মহাবিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। পড়াশোনার পাশাপাশি নিউ ব্যারাকপুরের একটি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। কিছু দিন আগে ওই কোম্পানির সেল্‌স টিমের ট্রেনিং শুরু হয়। প্রতিদিন বাড়ি থেকে অফিসে আসা-যাওয়ার অসুবিধা হচ্ছিল। তাই নিউ ব্যারাকপুর এলাকাতেই থাকা-খাওয়ার একটা ব্যবস্থা করেছিলেন আরতি। ট্রেনিং শেষ করে বাড়ি ফিরতেই শুরু হয় অশান্তি।

তরুণীর অভিযোগ, বাবা-মা তাঁকে চাকরি ছাড়তে জোর করেন। এ-ও জানিয়ে দেওয়া হয়, তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে হবে। পাত্র দেখা হচ্ছে। আপত্তি করেন কলেজছাত্রী। কিন্তু তাতে ফল হল আরও খারাপ। কলেজ পড়ুয়া আরতির কথায়, ‘‘চাকরি করতে চাওয়ায় আমায় মারধর করা হত। চাকরি করব বলে বাড়ি ছেড়ে চলেও গিয়েছিলাম। কিন্তু ফিরে আসাই ভুল হয়েছে।’’ তাঁর অভিযোগ, বাড়িতে ফেরার পর বাবা-মা তাঁকে একটি ঘরে বন্দি করে রাখেন। এমনকি, ঘরের বাইরে যাতে মেয়ে পা দিতে না পারেন, সে জন্য পায়ে শিকল বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। কোনও ভাবে সেই খবর যায় পুলিশের কাছে। তার পর শুক্রবার পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থাতেই আরতিকে উদ্ধার করে মালিপাচঘরা থানার পুলিশ। থানায় ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় বাবা-মাকে।

আরতির বাবা গৌর সাউয়ের যুক্তি, মেয়ে চাকরি করবে বলে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিল। তাতে তাঁদের আপত্তি। তাঁরা চান, তাড়াতাড়ি মেয়ের বিয়ে দিতে। গৌরের কথায়, ‘‘ও (মেয়ে) যে কোম্পানিতে কাজ করত, সেই কোম্পানি ওকে ভুল বুঝিয়ে কাজে রেখেছে। মেয়ে কোনও প্রতারণা সংস্থায় কাজ করছে বলে আমার সন্দেহ। বাড়ি থেকে অনেক বার টাকা নিয়ে গিয়েছে। তাতেই আমাদের সন্দেহ।’’ ওই প্রৌঢ় জানান, সকাল হলে তিনি কাজে বেরিয়ে যান। স্ত্রী-ও ব্যস্ত থাকেন। মেয়ে যাতে ওই সুযোগে পালিয়ে যেতে না পারেন, সেই জন্য তাঁর পায়ে শিকল পরিয়ে ঘরবন্দি করেছিলেন। পুলিশের কাছে আরতির বাবা জানিয়েছেন, প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের পায়ে শিকল বাঁধা অন্যায় জেনেও মেয়ের ভাল চান বলে তিনি এই কাজ করেছেন।

বাবা-মেয়ে, দুই পক্ষের অভিযোগ খতিয়ে দেখছে পুলিশ। বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে বেশ কিছু মৌখিক অভিযোগ করেছেন কলেজছাত্রী। কিন্তু তাঁদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে চাননি তিনি। তবে পুলিশের কাছে আবেদন করেছেন, তাঁকে যেন বাড়ি ফেরানো না-হয়। তিনি নিজের পায়ে দাঁড়াতে চান। কারও উপর নির্ভর করে জীবন কাটাতে চান না। পুলিশ সূত্রে খবর, আপাতত তরুণীকে ‘নিরাপদ আশ্রয়ে’ পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে তারা।

Advertisement
আরও পড়ুন