লোকসানের মুখে দাঁড়িয়ে মাথায় হাত চাষির। প্রতীকী ছবি।
ঘূর্ণিঝড় জওয়াদ-এর জেরে অসময়ের বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে রাজ্যের একাধিক জেলার ধান ও আলু চাষিরা। চাষের জমিতে জল জমায় সব্জির ফলনেও অনেকে লোকসানের মুখে পড়বেন। অন্য দিকে, ফসল কম হলে শীতের মরসুমে ধান, আলু-সহ একাধিক সব্জির দাম বাড়ারও সম্ভাবনা।
হুগলি, হাওড়া, পূর্ব বর্ধমান, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর-সহ রাজ্যের একাধিক জেলায় শনিবার থেকে বৃষ্টিতে জলের তলায় বসতি এলাকা-সহ চাষের জমি। চলতি মরসুমে জাঁকিয়ে শীত পড়ার আগেই স্বাভাবিক ফলন কম হওয়ার চাষিরা যে ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়বেন, তা স্বীকার করে নিয়েছে জেলার কৃষি দফতরগুলি।
পৌষের শেষে হুগলি জেলার বহু জমিতেই ধান পেকে গিয়েছে। তবে অসময়ের বৃষ্টিতে তা কাটা অবস্থায় মাঠে পড়ে রয়েছে। বহু জমিতে ধান কাটায় হাত দিতে পারেননি চাষিরা। জমিতে বৃষ্টির জল জমে যাওয়ায় ধান নষ্টের আশঙ্কা করছেন তাঁরা। সেই সঙ্গে আশঙ্কা আলুর ফলন নিয়েও।
সোমবার ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে হুগলি জেলায়। জেলা কৃষি উপ-অধিকর্তা জয়ন্ত পারি বলেন, ‘‘জেলায় প্রায় ১০ শতাংশ জমির ধান তোলা বাকি। মঙ্গলবার থেকে রোদ উঠলে হয়তো সে ভাবে ধানের ক্ষতি হবে না। তবে আলু চাষে ভাল ক্ষতির সম্ভাবনা। প্রায় ৩০ শতাংশ জমিতে আলু বসানো হয়ে গিয়েছিল। গোটা জেলার রিপোর্ট এলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে।’’
বেহাল দশা পূর্ব বর্ধমানেও। বৃষ্টিতে ধান, আলু-সহ সব্জি চাষেও ক্ষতি হয়েছে। জমি তৈরি করে সবে আলুর বীজ বসানোর কাজ শুরু হয়েছিল। নিম্নচাপের বৃষ্টিতে ফের ক্ষতির মুখে জামালপুর, রায়না, ভাতার, আউশগ্রাম, গলসি, মেমারি-সহ একাধিক এলাকার চাষিরা।
সাধারণত, পোখরাজ প্রজাতির নতুন আলু এ সময় বাজারে চলে আসে। কিন্তু খামখেয়ালি আবহাওয়ায় সে আলু বসানোও পিছিয়ে গিয়েছে। জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া বলেন, ‘‘চাষিদের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে বৈঠক হবে। তবে কৃষি বিমা করা থাকলে টাকা পেয়ে যাবেন ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা।’’ সোমবার জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ এবং জেলা কৃষি দফতরের সহ-আধিকারিককে নিয়ে রায়না, জামালপুর-সহ বেশ কয়েকটি ব্লকের জমি পরিদর্শন করেন তিনি।
ক্ষয়ক্ষতির হয়েছে বাঁকুড়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়ও। ভারী বৃষ্টিতে বাঁকুড়ের কোতুলপুর, ইন্দাস, পাত্রসায়র এবং জয়পুরে বড়সড় ক্ষতির মুখে এই দ্ধান ও আলু চাষিরা। পাশাপাশি, বাঁধাকপি, ফুলকপির মতো শীতকালীন সব্জিরও ক্ষতির আভাস। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কৃষি দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর দুলাল দাস অধিকারী বলেন, ‘‘এ বার ধান কাটার পর আলু চাষের জন্য জমি তৈরি করে বীজ লাগানোর সময় নিম্নচাপের জেরে বৃষ্টি হল। ফলে নিম্নচাপের ক’দিন আগে লাগানো আলু বীজ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।’’
হাওড়ায় চাষের জমি ছাড়া বসতি এলাকাও জলমগ্ন হয়েছে। হাওড়া পুর এলাকার কমপক্ষে ১২টি ওয়ার্ডের বহু গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা জলের তলায়। ৫০ নম্বর ওয়ার্ডে কাশীপুর এলাকায় যাত্রী নিয়ে উল্টে যায় বেশ কয়েকটি টোটো। গুরুতর জখম হন চালক ও যাত্রীরা। বৃষ্টির জেরে টিকিয়াপাড়া কারশেডের রেল লাইনে জল জমে যায়। পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান সুজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘১২টি ওয়ার্ডে (৭, ৮, ৯,১০,১৯, ২০, ২১, ৪৭, ৪৮, ৫০) জল জমেছে। জল নামাতে ৪০টি পাম্প চালানো হচ্ছে।’’