Reclaim the Night Movement

রাত দখলের মেয়েরা ডাক দিলেন বিকল্প মানুষের মঞ্চ গঠনের! পরামর্শদাতাদের তালিকায় অপর্ণা সেন থেকে জঁ দ্রেজ

এই মঞ্চে রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রবেশ নিষিদ্ধ বলে জানিয়ে দিয়েছেন রিমঝিম সিংহেরা। তবে সাধারণ কর্মীরা শামিল হতেই পারেন। নেতারা কেন নিষিদ্ধ, সে ব্যাপারে যুক্তিও দিয়েছেন তাঁরা।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০০
Organizers of Reclaim the Night movement called for a new platform

নতুন মঞ্চে রিমঝিম সিংহদের সঙ্গে পরামর্শদাতা হিসাবে থাকবেন অপর্ণা সেন এবং জঁ দ্রেজ। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

দেশের সরকার মহিলাদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ। রাজ্য সরকারও তা-ই। বাংলায় আগে যারা শাসন ক্ষমতায় ছিল তারাও একই গতের। এ ভাবেই বিজেপি, তৃণমূল, সিপিএমকে এক বন্ধনীতে ফেলে প্রথাসিদ্ধ রাজনীতির বাইরে গিয়ে বিকল্প মানুষের মঞ্চ গড়ার ডাক দিলেন ‘রাত দখল করো, দিন বদল করো’র মেয়েরা। শুক্রবার রামমোহন লাইব্রেরিতে সাংবাদিক বৈঠক করে সেই মঞ্চ গড়ার আহ্বান জানিয়েছেন রিমঝিম সিংহ, রুবিয়া মণ্ডল, অনুষ্ণা দাসেরা।

Advertisement

গত ১৪ অগস্ট রাত দখলের আহ্বানে মানুষের হিল্লোল দেখেছিল গোটা বাংলা। আগামী ৮ সেপ্টেম্বর রাতে ফের রাত দখলের ডাক দিয়েছেন রিমঝিমেরা। সেই সময়েই রিমঝিমেরা জানিয়েছিলেন, বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সমন্বয়কেরা তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে নিজেদের এলাকায় কর্মসূচি নিচ্ছেন। এ বার সেটাকেই সংগঠিত রূপ দিতে চাইছেন তাঁরা। ‘বিকল্প মানুষের ইতিবাচক সমন্বয়ক মঞ্চ’ গড়ার ডাক দিয়ে মহিলাদের সুরক্ষা, অধিকারকে সুনিশ্চিত করার কথাও বলেছেন। পাশাপাশিই তাঁরা জানিয়ে দিয়েছেন, এই মঞ্চে রাজনৈতিক নেতাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। তবে সাধারণ কর্মীরা শামিল হতেই পারেন। কেন নেতারা নিষিদ্ধ? এই প্রশ্নে রুবিয়া বলেন, ‘‘নেতারা নীতি নির্ধারণের জায়গায় রয়েছেন। তাঁরা সুরক্ষা দিতে পারছেন না, পারেননি। তাই তাঁদের এই মঞ্চে প্রয়োজন নেই। তবে সাধারণ যে কর্মী হয়তো বাধ্য হয়ে সেই দল করেন, পোস্টার লাগান, তাঁরা অবশ্যই স্বাগত।’’ এই মঞ্চ গঠনের জন্য বিশিষ্টজনেদের পরামর্শও নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন রুবিয়া। সেই তালিকায় রয়েছেন, অপর্ণা সেন, দীপেশ চক্রবর্তী, জঁ দ্রেজ, নিবেদিতা মেনন, কলকাতা হাই কোর্টের আইনজীবী পার্থসারথি সেনগুপ্ত, সুপ্রিম কোর্টের আইজীবী বৃন্দা গ্রোভার।

আরজি কর-কাণ্ডে কলেজ কর্তৃপক্ষের ভূমিকার তীব্র নিন্দা করেছেন রিমঝিমেরা। একই সঙ্গে পুলিশের বিরুদ্ধে তথ্য ধামাচাপা দেওয়ারও অভিযোগ তোলা হয়েছে। আরজি করের নির্যাতিতার বিচারের পাশাপাশিই কাঠামোগত বদলের কথা বলেছেন নতুন মঞ্চের আহ্বায়কেরা। সংসদীয় রাজনীতিতে যুক্ত সমস্ত রাজনৈতিক দলকেই এক বন্ধনীতে ফেলে আক্রমণ শানানো হয়েছে সাংবাদিক বৈঠক থেকে। যে ভাবে মানুষ ধারাবাহিক ভাবে রাস্তায় থেকে আন্দোলন করছেন, তাকে স্বাগত জানিয়ে উদ্যোক্তাদের তরফে দাবি করা হয়েছে, রাজ্যে সমস্ত শ্রেণির মানুষ এই আন্দোলনে শামিল হয়েছেন। যাকে স্বাধীন ভারতের প্রথম স্বতঃস্ফূর্ত গণআন্দোলন বলে দাবি করা হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, এই মঞ্চ কি ভবিষ্যতে রাজনৈতিক দল গঠনের অভিমুখে অগ্রসর হবে? রুবিয়ার কথায়, ‘‘এখনই তা বলা সম্ভব নয়।’’ আন্দোলন কোন দিকে বাঁক নেবে, তাকে সময়ের উপরেই ছাড়তে চেয়েছেন ‘মেয়েরা রাত দখল করো, দিন বদল করো’র উদ্যোক্তারা। ধর্ষণ, ধর্ষণ সংস্কৃতি-সহ মহিলাদের উপর বিভিন্ন অপরাধের দিক তুলে ধরে আর্থিক বৈষম্যকে বিঁধেছেন। একটি অংশের ক্রমশ ফুলেফেঁপে ওঠা এবং অন্য দিকে নিরন্ন মানুষের সংখ্যাবৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটেই যে অতি দক্ষিণপন্থা মাথা তুলছে, তা-ও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন রিমঝিম।

রাজ্য সরকার যে ভাবে মহিলাদের নিরাপত্তার স্বার্থে রাতে মেয়েদের যথাসম্ভব কাজ থেকে বিরত রাখার কথা বলেছে, তাকেও তীব্র আক্রমণ করেছেন রাত দখলের আন্দোলনের সংগঠকেরা। যাদবপুরের পড়ুয়া অনুষ্ণা দাস বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি এটা করে রাতে মেয়েদের ঘরে ঢুকিয়ে রাখতে চাইছেন?’’

(ভ্রম সংশোধন: এই প্রতিবেদনে প্রথমে লেখা হয়েছিল, রাত দখল করো আন্দোলনের সংগঠকেরা বিকল্প মঞ্চ গড়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁরা বিকল্প মানুষের সমন্বয়ক মঞ্চ গড়ার কথা বলেছেন, বিকল্প মঞ্চ নয়। বিষয়টি আমাদের বোঝার ভুল ছিল। সেই কারণে রিমঝিম সিংহ-সহ রাত দখল আন্দোলনের সমস্ত সংগঠকের কাছে আমরা নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থী)

আরও পড়ুন
Advertisement