মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
বিধানসভায় দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্পর্কে যে মন্তব্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করেছেন, তাকে হাতিয়ার করে পাল্টা সরব হল বিরোধীরা। প্রধান বিরোধী দল বিজেপির অভিযোগ, দুর্নীতি এবং কেলেঙ্কারির ফাঁস থেকে বাঁচতেই মুখ্যমন্ত্রী এই ভাবে প্রধানমন্ত্রীর নাম নিচ্ছেন। অন্য দুই বিরোধী দল সিপিএম ও কংগ্রেসের দাবি, তৃণমূল নেত্রী যে বরাবরই মোদীর সঙ্গে সমঝোতা করে চলেন এবং দরকার মতো বিজেপির মধ্যে ‘ভাল-খারাপ’ প্রভেদ করেন, সেই কথাই ফের স্পষ্ট হয়ে গেল তাঁর নিজের কথায়। তাদের আরও দাবি, মোদী-দিদির ‘সেটিং’ হয়েই আছে, সেটাই সামনে আসছে।
কেন্দ্রীয় সংস্থা ইডি-সিবিআইয়ের ‘অতি-সক্রিয়তা’র বিরুদ্ধে বিধানসভায় সরকারি প্রস্তাবের উপরে বলতে গিয়ে সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা মন্তব্য করেছেন, ‘‘আমি বিশ্বাস করি না, নরেন্দ্র মোদী এটা করাচ্ছেন। বিজেপির নেতারা করাচ্ছেন।’’ প্রধানমন্ত্রীকে সরিয়ে রেখে ইডি-সিবিআইয়ের কাজকর্মের জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকেও তোপ দেগেছেন মমতা। তার প্রেক্ষিতে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর পাল্টা মন্তব্য, ‘‘‘উনি কী ভাবছেন, প্রধানমন্ত্রী বাঁচাবেন? ফাঁদ পেতে কোনও লাভ নেই! অমুক ভাল, তমুক খারাপ, এ সব বলে কিছু হবে না। দুর্নীতির প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীর নীতি ‘জ়িরো টলারেন্স’। মুখ্যমন্ত্রী এখন ভাইপোকে বাঁচাতে চান, তাই এ সব বলছেন।’’ শুভেন্দু মনে করিয়ে দিয়েছেন, আর্থিক নয়ছয়ের মামলায় ইডি-র কী ক্ষমতা, সম্প্রতি তা আবার নির্দিষ্ট করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সেই সঙ্গেই তাঁর বক্তব্য, ‘‘সিবিআই অধিকর্তা বাছাই প্রক্রিয়া রাজনৈতিক ভাবে হয় না। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি থাকেন সেখানে, প্রধানমন্ত্রী সভাপতিত্ব করেন। গত ২০২১ সালের ৫ মে-র পর থেকে যে ১৫টি সিবিআই তদন্ত এ রাজ্যে চলছে, তার কোনওটির সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকার বা বিজেপির কোনও যোগ নেই। সবই আদালতের নির্দেশে হচ্ছে।”
সিপিএম এবং কংগ্রেসেরও দাবি, বিপদে পড়লেই মুখ্যমন্ত্রী দ্বারস্থ হন প্রধানমন্ত্রীর। সেই সূত্রেই এখন আবার প্রধানমন্ত্রীকে ‘ক্লিন চিট’ দিচ্ছেন। তারা উল্লেখ করতে ছাড়েনি, আর আগেও তৃণমূল নেত্রী কখনও বলছেন বাজপেয়ী ভাল, আডবাণী খারাপ। পরে বলেছিলেন আডবাণী ভাল, মোদী খারাপ। এখন আবার মোদী ভাল, শাহ খারাপ। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের মন্তব্য, ‘‘বিপদে পড়লেই ওঁর সুর ‘দাদা পায়ে পড়ি রে’! মোহন ভাগবতকে ভাল বলছেন, মোদীকে শংসাপত্র দিচ্ছেন। দরকার পড়লে শাহকেও ডেকে মালপো খাইয়ে দিতে পারেন!’’ বোলপুরে এ দিন সিপিএমের মিছিলের পরে বিজেপি-তৃণমূল সম্পর্ক নিয়ে সরব হয়েছেন সেলিম। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ক’দিন আগে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, বিশ্বাস করি না আরএসএস খারাপ। এ বার বিশ্বাস করছেন, মোদী ভাল। যিনি গোটা দেশে গণতন্ত্রের টুঁটি টিপে ধরেছেন, সাংবিধানিক অধিকারকে লাটে তুলে দিচ্ছেন, তাঁকে তো মুখ্যমন্ত্রীর ভাল লাগবেই! কারণ, এখানে উনি ওই পথেই চলেন।’’
একই সুরে তৃণমূল নেত্রীকে নিশানা করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। বিধান ভবনে এ দিন তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর এই কথা শুনে অনেকের নবীন মনে হলেও মোদী-দিদি সম্পর্ক বহু পুরাতন! আমরা অনেক দিন ধরেই যা বলে আসছি, এখন তিনি নিজেই তা স্পষ্ট করে দিচ্ছেন। দিল্লিতে ওঁদের ‘সেটিং’ হয়েই আছে, বাংলার মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা করছেন! মোদী-দিদি মিলে সাম্প্রদায়িক বিভাজন করেন, তাতে উভয়েরই সুবিধা হয়। ভোটের সময় লোককে বিরোধ বোঝানোর জন্য বলেছিলেন, মোদীকে কোমরে দড়ি দিয়ে ঘোরাবেন। এখন ইডি-সিবিআই থেকে বাঁচতে হবে, তাই মোদী-বন্দনা!’’ গুজরাতে মুখ্যমন্ত্রী মোদীর আমলে অসংখ্য নিরীহ মানুষের হত্যার পরেও কেন্দ্রে বিজেপির মন্ত্রিসভায় তৃণমূল নেত্রীর থাকা-সহ পুরনো ঘটনা মনে করিয়ে দিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি।