Sukanta Majumdar

উত্তর-ভাগ: ন্যায্য দাবি, নাকি শুধুই রাজনৈতিক কৌশল?

প্রশ্ন হল, এমন একটা দাবি এক বিরাট অংশের মানুষের মান্যতা বা সমর্থন পেল কেন? এই সমর্থন তৈরি হয়েছে দীর্ঘ বঞ্চনা ও অবহেলা থেকে। রাজ্যের সমস্ত কিছুর কলকাতা-কেন্দ্রিকতাও এর জন্য দায়ী।

Advertisement
রূপন সরকার
শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২৪ ০৮:৩২
Sukanta Majumdar

সুকান্ত মজুমদার। —ফাইল চিত্র।

বিষয়টি এমন নয় যে, বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার হঠাৎ করে কোনও নতুন কথা বলছেন। এর আগে বহু পক্ষ, বহুবার একই কথা বলেছেন। কেউ সমর্থন করুক বা না করুক, রাজ্যভাগের দাবি বহুদিনের, বহু স্থানীয় মানুষের সমর্থনের।

Advertisement

প্রশ্ন হল, এমন একটা দাবি এক বিরাট অংশের মানুষের মান্যতা বা সমর্থন পেল কেন? এই সমর্থন তৈরি হয়েছে দীর্ঘ বঞ্চনা ও অবহেলা থেকে। রাজ্যের সমস্ত কিছুর কলকাতা-কেন্দ্রিকতাও এর জন্য দায়ী। চিকিৎসা থেকে শিক্ষা, প্রশাসন থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থা সবেতেই রয়েছে কলকাতা-কেন্দ্রিকতা। এই কেন্দ্রিকতার মানসিকতা তৈরি হয়েছে ঔপনিবেশিক সময়কাল থেকেই। সাধারণ পরিবারের এক ছাত্র পরীক্ষা থেকে ইন্টারভিউ— সব কিছুতেই রাজধানী শহরে যেতে বাধ্য হয়, যা তার আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিপন্থী। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যে কোনও সরকারি আদান-প্রদান রাজধানী-কেন্দ্রিক। সাধারণ রোগ-ব্যাধি ছাড়া একটু বড় কিছু হলেই কলকাতা, নয় দক্ষিণ ভারত দৌড়তে হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থার কথা যত কম বলা যায় ততই ভাল। উত্তরের বহু জনপদ আছে যেখানে রেল তো দূরের কথা সড়ক পথেও যোগাযোগ স্থাপিত হয়নি। উত্তরের জনজাতির জীবনশৈলী, চালচিত্র না বুঝে ঝাঁকে ঝাঁকে রাজধানী শহরের সম্পদশালী মানুষেরা ডুয়ার্সের বনজ সম্পদ ধ্বংস করে শত শত রিসর্ট বানিয়ে পরিবেশ ধ্বংস করে চলেছে। নদীর পাথর-বালির বরাতও ভোগ করেন কলকাতার ব্যবসায়ীরা। উত্তরের রাজনৈতিক নেতৃত্বই অবহেলিত থেকে যায় যে কোনও দলে গুরুত্ব পাওয়ার নিরিখে।

এর সঙ্গে যুক্ত দেশের নিরাপত্তার প্রশ্ন। কৌশলগত কারণেও উত্তরের জেলাগুলি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রতিবেশী রাজ্যগুলির সঙ্গে পরিবর্তিত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এতদঞ্চলের সামরিক গুরুত্ব বৃদ্ধি করেছে। নেপাল-ভুটান-বাংলাদেশের পাশেই রয়েছে চীনের মতো দেশের নজরদারি, যা নিরাপত্তা ক্ষেত্রে ভীষণ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। উত্তর-পূর্ব ভারতকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে অটুট রাখতে গেলে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে উত্তরের এই জেলাগুলি।

এক দিকে অবহেলা ও বঞ্চনার অভিযোগ, অন্য দিকে এই ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিকেই বিজেপি কাজে লাগাতে চাইছে। মাঝে মাঝেই, একে-তাকে দিয়ে উত্তরের দাবিকে হাওয়ায় ভাসিয়ে দিয়ে গ্রহণযোগ্য করার চেষ্টা করছে। এটা বিজেপির রাজনৈতিক কৌশলেরই অঙ্গ। তার সঙ্গে মিলে যাচ্ছে ছোট রাজ্যের দাবির রাজনৈতিক অবস্থান। এখন দেখতে হবে, সুকান্ত মজুমদারের সাম্প্রতিক বক্তব্য শুধুই কি রাজনৈতিক কৌশলেরই অঙ্গ, নাকি এটা উত্তরের উন্নয়নের পক্ষে ন্যায্য ও আন্তরিক দাবি?

(শিক্ষক, প্রসন্নদেব মহিলা মহাবিদ্যালয়, জলপাইগুড়ি)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement