পাহাড় সুনসান! ছাত্রীকে যৌন হেনস্থা এবং খুনের প্রতিবাদে দার্জিলিঙের বন্‌ধে মিলল সর্বাত্মক সাড়া

শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের মাটিগাড়ায় নেপালি এক স্কুলছাত্রীকে যৌন হেনস্থা করে খুনের অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে উত্তেজনা পাহাড়ে। শনিবার বন্‌ধে সাড়া মিলল দার্জিলিং এবং কালিম্পঙে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
দার্জিলিং শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০২৩ ১২:৪১
Darjeeling Strike

শনিবারের বন্‌ধে সুনসান দার্জিলিং। —নিজস্ব চিত্র।

নাবালিকাকে যৌন হেনস্থা করে খুনের অভিযোগে শনিবার পাহাড়ের বন্‌ধ মনে করিয়ে দিল ২০১৭ সালের কথা। ৬ বছর আগে দার্জিলিং থেকে কালিম্পঙের জনজীবন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল গোর্খা আন্দোলনের জন্য। মাটিগাড়ায় ছাত্রী খুনের প্রতিবাদে শনিবারের বন্‌ধেও দেখা গেল সেই ছবি। বন্‌ধের সমর্থনে শামিল হলেন সমগ্র পাহাড়বাসী। কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সকাল থেকেই দার্জিলিং, কালিম্পঙের রাস্তার বিভিন্ন মোড়ে পুলিশ পিকেটিং বসেছে। দোকানপাট একেবারে বন্ধ। গড়াচ্ছে না বেসরকারি গাড়ির চাকা। সরকারি বাস পরিষেবা চালু রয়েছে। কিন্তু তাতে যাত্রী নেই।

Advertisement

শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের মাটিগাড়ায় নেপালি এক নাবালিকা স্কুলছাত্রীকে যৌন হেনস্থা করে খুনের অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে উত্তেজনা পাহাড়ে। বৃহস্পতিবার বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ডাকা বন্‌ধের প্রভাব শিলিগুড়ি শহর এবং সংলগ্ন এলাকাতেও পড়েছিল। শহরের ছোট থেকে বড় মার্কেট, বেসরকারি যান চলাচল প্রায় বন্ধ ছিল। সে দিন প্রায় ২,০০০ গাড়ি বন্ধ ছিল। সমতলের পর এ বার পাহাড়ে গোর্খা সেবা সেনার তরফে ডাকা বন্‌ধে প্রভাব পড়ল আরও বেশি। এই বন্‌ধকে সমর্থন করেছে বিমল গুরুংয়ের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা, অজয় এডওয়ার্ডের হামরো পার্টি, বিজেপি-সহ পাহাড়ের অন্যান্য আঞ্চলিক দল। এই অবস্থায় নিজেদের ‘নিরপেক্ষ’ রেখেছে ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা। তারা জানাচ্ছে, এই বন‌্‌ধে তাদের সমর্থন নেই। আবার বিরোধিতাও করছে না।

শনিবার সকাল থেকেই দার্জিলিং-সহ কালিম্পঙের যে ছবি দেখা গেল, বন্‌ধকে ‘সফল’ বলা চলে। কোনও রাজনৈতিক কারণ নয়, এক নাবালিকার উপর এই হিংসা পুরো পাহাড়বাসীর ভাবাবেগে আঘাত হেনেছে। তাই এই বন্‌ধে সবাই অংশ নিয়েছেন বলে জানাচ্ছেন স্থানীয়রা। দার্জিলিংয়ের বাসিন্দা কৃষ্ণা খেমকার কথায়, ‘‘এ তো কোনও রাজনৈতিক দলের ডাকা বন্‌ধ নয়। একটি ছোট মেয়ের উপরে যা হয়েছে, তার প্রতিবাদে আমরা সবাই এক হয়েছি।’’ একই কথা বলছেন জুন প্রধানও। তিনি বলেন, ‘‘এই রকম অপরাধ বন্ধ হওয়া উচিত। এগুলো সভ্য সমাজে মেনে নেওয়া যায় না। আমাদের সবার সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তাই আমরা সমস্ত পাহাড়বাসী বন্‌ধকে সমর্থন করে প্রতিবাদে শামিল হয়েছি।’’

পাহাড়ে বেসরকারি যান চলাচল বন্ধই বলা চলে। জরুরি পরিষেবা ছাড়া গাড়ির দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার দার্জিলিং এবং কালিম্পং ডিপো থেকে সময় মতো বাস ছাড়ছে। তাই যে পর্যটকেরা পাহাড়ে উঠবেন বা সমতলে নামবেন, তাঁদের তেমন অসুবিধে হচ্ছে না। কিন্তু যাত্রীসংখ্যা অনেক কম। কালিম্পং ডিপো ইনচার্জ নিহার কান্তি নাথের কথায়, ‘‘সময় অনুযায়ী বিভিন্ন রুটে বাস চলছে। তবে যাত্রী নেই বললেই চলে। খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ বার হচ্ছেন না।’’

এই বন্‌ধ নিয়ে তৃণমূল নেতা তথা শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব বলেন, ‘‘যে ঘটনা ঘটেছে, তাকে নিন্দা জানানোর মতো ভাষা আমাদের নেই। দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি করেছি। অনেক আন্দোলন সংগঠিত হয়েছে। প্রতিবাদ হয়েছে এবং তা হওয়া উচিত।’’ পরমূহূর্তে তাঁর সংযোজন, ‘‘কিন্তু বন্‌ধ করে সাধারণ মানুষের আরও বেশি অসুবিধা হয়। এই ঘটনা নিয়ে মানুষের মনে ক্ষোভ থাকবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘পাহাড়ে শান্তি বজায় আছে। অনিত থাপারা এবং রাজ্য সরকার মিলে পাহাড়কে পরিচালনা করছেন। সামনে পুজোর মরসুম। পর্যটন শিল্পের জন্য ভাল সময়। এই সময় পাহাড়ে যে কোনও প্রকারে শান্তি বজায় রাখতেই হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement