মৃত তৃণমূল নেতা দুলাল সরকার। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
মালদহের তৃণমূল কাউন্সিলর দুলাল সরকারের খুনের ঘটনায় বিহার যোগ স্পষ্ট। পুলিশ সূত্রে দাবি, বিহার থেকে ‘সুপারি কিলার’ ভাড়া করে এনেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। তবে খুনের বরাত কে বা কারা দিলেন, তা এখনও অজানা। পুলিশ ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় আট জনকে গ্রেফতার করেছে। তবে পুলিশের অনুমান, এরা কেউই দুলাল-খুনের মূলচক্রী নন। কাউন্সিলর খুনের ঘটনায় মাথার খোঁজ শুরু করেছেন তদন্তকারীরা।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ ইংরেজবাজার শহরের ঝলঝলিয়ার কাছে নিজের প্লাইউড কারখানার কাছে দাঁড়িয়েছিলেন ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দুলাল। বাইকে চেপে এসে তিন জন দুষ্কৃতী তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় বলে অভিযোগ। একটি গুলি দুলালের মাথার কাছে লাগে। সঙ্কটজনক অবস্থায় তাঁকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়। পরে সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর।
প্রকাশ্যে দুলালের খুনের ঘটনার পর থেকেই শোরগোল পড়ে যায় রাজ্য রাজনীতিতে। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ ব্যাপারে উদ্বেগপ্রকাশ করেন। এমনকি পুলিশ সুপারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। ঘটনার পরই তদন্তে নেমে পুলিশ বৃহস্পতিবার দু’জনকে গ্রেফতার করে। পরে ধাপে ধাপে এখনও পর্যন্ত আট জনকে গ্রেফতার করেছেন তদন্তকারীরা। তাঁদের মধ্যে বিহারের বাসিন্দাও রয়েছেন। তাঁদের বয়স ২০-২২ বছরের মধ্যে। পুলিশ ধৃতদের জেরা করে খুনের কারণ, খুনের নেপথ্যে আর কারা জড়িত— তা অনুসন্ধান করছে।
খুনের কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। তবে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, জমি কারবার বা মাদক কারবার এই খুনের নেপথ্যে থাকতে পারে। ‘অবৈধ’ কারবারের প্রতিবাদ করায় দুলালকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে। তদন্তে পুলিশ এ দিকটাও খতিয়ে দেখছে। পাশাপাশি অন্য কোনও ‘মোটিভ’ ছিল কি না, তা-ও নজরে রয়েছে তদন্তকারীদের।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিগত কয়েক দিন ধরেই দুলাল কোথায় যাচ্ছেন, কখন যাচ্ছেন, সেই সব দিকে নজর রাখছিল দুষ্কৃতীরা। প্রাথমিক ভাবে তারা ঠিক করেছিল, বড়দিনের অনুষ্ঠানে ভিড়ের মধ্যে দুলালকে গুলি করে খুন করবে। কিন্তু দুলালকে একা না পাওয়ায় বড়দিনের পরিকল্পনা বাতিল করা হয়। তদন্তে আরও জানা গিয়েছে, দুলালের মাথা লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েও তাঁর মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হয়নি দুষ্কৃতীরা। মৃত্যু নিশ্চিত করতে ফের তারা এলাকায় ঢোকে। তার পর মানিকচক হয়ে বিহারে পালানোর পরিকল্পনা ছিল তাদের। এই দুষ্কৃতীদের কে বা কারা ভাড়া করল, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
দুলালকে খুনের অভিযোগে বৃহস্পতিবার যে দু’জনকে গ্রেফতার করেছিল মালদহ জেলা পুলিশ, তাঁদের মধ্যেই ছিলেন সামি এবং টিঙ্কু। তাঁদের মধ্যে সামি বিহারের কাটিহারের বাসিন্দা। অপর জন টিঙ্কু ঘোষ, ইংরেজবাজারের গাবগাছি অঞ্চলের বাসিন্দা। পরে মালদহ জেলা পুলিশ এবং হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশের যৌথ অভিযানে বিহার থেকে গ্রেফতার করা হয় আব্দুল গনি নামের এক দুষ্কৃতীকে। জানা যায়, তিনিও বিহারের বাসিন্দা। শুক্রবার এই তিন জনকেই আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। তাঁদের পক্ষে মালদহ জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনের কোনও আইনজীবী দাঁড়াননি। বিচারক তিন জনকেই ১৪ দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। ধৃতদের মধ্যে আরও দু’জনকে শনিবার আদালতে হাজির করাবে পুলিশ। অমিত রজক এবং অভিজিৎ ঘোষ— দুই অভিযুক্তকেও ১৪ দিনের হেফাজত চেয়ে আবেদন করবে পুলিশ।
অন্য দিকে, দুলাল-খুনের পরের দিন শুক্রবারই নবান্নে জরুরি বৈঠক করেন রাজ্য পুলিশের শীর্ষকর্তারা । শুক্রবারে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সমস্ত জেলার পুলিশ সুপার এবং বিভিন্ন পুলিশ কমিশনারেটের কমিশনার। সূত্রের খবর, এই বৈঠকে রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কারা এখন কী পর্যায়ের নিরাপত্তা পাচ্ছেন, কাদের নিরাপত্তা দেওয়া উচিত, কাদের নিরাপত্তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে, তার বিস্তারিত তথ্য দ্রুততার সঙ্গে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।