Padmashree Awardee

‘দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল’, বললেন ‘পদ্মশ্রী’ পার্বতী

অসমের বাসিন্দা পার্বতী বড়ুয়ার বেশ কিছু খেতাব রয়েছে। রয়েছে নানা ব্যতিক্রমী শিরোপাও। দেশের প্রথম মহিলা মাহুত তিনি।

Advertisement
অনির্বাণ রায়
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:৫০
হাতির পিঠে পার্বতী বড়ুয়া।

হাতির পিঠে পার্বতী বড়ুয়া। —নিজস্ব চিত্র।

দেড় মাসের এক রত্তি মেয়েকে হাতির পিঠে শুইয়ে দিয়েছিলেন লালজি বড়ুয়া। তিনিও তখন ডাকসাইটের হাতি বিশেষজ্ঞ। কোলের মেয়েকে এনে হাতির সামনে রেখেছিলেন। হাতিরা না কি শুঁড় দিয়ে আদর করে দিয়েছিল সদ্যোজাতকে। সেই মেয়ে হাতির ‘ভাষা’ বুঝবে না তো বুঝবে কে! ফোনে কথাগুলি বলতে বলতে হাসছিলেন পার্বতী বড়ুয়া। প্রজাতন্ত্র দিবসের আগের দিক ঘোষণা করা হয়েছে এ বারের পদ্মশ্রী সম্মান পাচ্ছেন তিনিও। শনিবার ফোনে বললেন, “দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল।”

Advertisement

অসমের বাসিন্দা পার্বতী বড়ুয়ার বেশ কিছু খেতাব রয়েছে। রয়েছে নানা ব্যতিক্রমী শিরোপাও। দেশের প্রথম মহিলা মাহুত তিনি। জঙ্গলের দুরন্ত হাতিকে কী ভাবে বশে আনা যায় সে বিদ্যেও তার মুঠোয়। দুরন্ত হাতিকে ফাঁদে ফেলে ধরতেও তিনি পুরুষ মাহুতদের টেক্কা দেন বলে কথিত রয়েছে। উত্তরবঙ্গের বহু কুনকি হাতি এবং মাহুতের প্রশিক্ষণ পার্বতী বড়ুয়ার হাত ধরে। বয়স ষাট পেরিয়ে সত্তরের দিকে ছুটছে। তবে এখনও নিয়মিত হাতির সঙ্গে সখ্য তাঁর। এ দিন ফোনে বললেন, “এখনও কাজে যাই। কাজে মানে হাতিদের সঙ্গে গিয়ে দেখা করি। হাতিদের যত্ন করি। যে দিন কাজে যাই না, সে দিন বই পড়ি, বাগান করি।”

এর আগে কোনও মাহুত ‘পদ্ম’ সম্মাননা পেয়েছেন কি না তা মনে করতে পারলেন না পরিবেশ এবং বন্যপ্রাণীপ্রেমীরা। অসম থেকে বার বার কাজের সূত্রে উত্তরবঙ্গের বনাঞ্চলে এসেছেন পার্বতী। উত্তরের জঙ্গলে তাঁকে নিয়ে নানা গল্পও ছড়িয়ে রয়েছে। একবার জলদাপাড়ার গভীর জঙ্গলে বুনো হাতি দেখে গাড়ি থেকে নেমে গিয়েছিলেন তিনি। সেই স্মৃতি মনে করলেন প্রাক্তন বনাধিকারিক বিমল দেবনাথ।
তিনি বলেন, “আমরা একই গাড়িতে ছিলাম। গাড়িচালক অতটা অভিজ্ঞ ছিলেন না। গভীর জঙ্গলের মাঝে একটা বড় বুনো হাতি চলে এল সামনে। পার্বতী বড়ুয়া বলে বসলেন, বাহঃ লেজটা কী সুন্দর। সেই লেজ দেখে তিনি গভীর জঙ্গলের মাঝে গাড়ি থেকে নেমে পড়লেন। হাতিটাকে ভাল করে দেখলেন। বললেন, খুব ভাল হাতি। তিনি এমনই
হাতিপাগল মানুষ।”

পার্বতী বড়ুয়ার বোন প্রতিমা বড়ুয়া বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী। ঘরোয়া আলাপচারিতায় বিমল দেবনাথ জানতে চেয়েছিলেন, দিদির মতো তিনিও তো গানবাজনা নিয়ে থাকতে পারতেন, জঙ্গলে এলেন কেন? প্রাক্তন বনাধিকারিকের কথায়, “উত্তরে তিনি বললেন, দিদি-বোনেরা প্রাণহীন পুতুল নিয়ে ছোটবেলায় খেলে বড় হয়েছে। আমি হয়েছি জীবন্ত পুতুল নিয়ে।”

জীবন্ত পুতুল মানে হাতির শাবকেরাই ছোট থেকে খেলার সঙ্গী ছিল পার্বতীর। এ দিন তিনি বললেন, “ছোট থেকে যা বুঝেছি হাতিরাও আমাদেরই মতো, ওদেরও বাঁচতে দিতে হবে, আমাদেরও বাঁচতে হবে।”

আরও পড়ুন
Advertisement