তপন ব্লকের মনোহলি শতাব্দী প্রাচীন দুর্গো পুজো এখন করে গ্রামবাসীরাই। এই মন্দিরে আগে হতো পুজো। এখন গ্রামবাসীরাই পুজো বাইরে করে। চলছে প্রতিমা গড়ার কাজ। ছবি অমিত মোহান্ত
জমিদারি প্রথা বিলীন। কিন্তু জমিদারের প্রতিষ্ঠিত প্রায় দু’শো বছরের পুরনো পুজো আজও অমলিন দক্ষিণ দিনাজপুরের তপনের মনোহলি গ্রামে। প্লাস্টার খসে ইট বেরিয়ে পড়া বড় বড় থাম নিয়ে জমিদারবাড়ির বিরাট ঠাকুরদালান আজও অপেক্ষায় থাকে দেবী বন্দনার। খড়ের কাঠামো থেকে পূর্ণ দেবীরূপের সাক্ষী থাকতে এই সময় সারা বছরের নিস্তব্ধতা ভেঙে কচিকাঁচাদের ভিড়ে সরগরম হয়ে ওঠে জমিদার বাড়ি চত্বর।
দেবী এখানে মৃন্ময়ী। অন্তত ২০০ বছর আগে মনোহলির প্রয়াত জমিদার তারাচাঁদ বন্দ্যোপাধ্যায় এই পুজো চালু করেন। জমিদারি চলে যাওয়ার পর পরিবারের পরবর্তী প্রজন্ম ভিন্ দেশে চলে যান। ফলে অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে যায় এলাকার একমাত্র পুজো। ফলে মুখভার হয়ে পড়ে কচিকাঁচাদের। সেই সময়ে এগিয়ে আসেন গ্রামের বাসিন্দারা। পুজো প্রস্তুতি থেকে আয়োজনের সমস্ত দায়িত্ব কাঁধে নেন তারা। একদা পারিবারিক পুজো আজ গ্রামবাসীদের মিলিত উদ্যোগে সর্বজনীনে পরিণত।
মনোহলি গ্রামের বাসিন্দা পুজো উদ্যোক্তা চন্দন বর্মণ, রতন সরকারেরা জানান, কমিটি তৈরি করে এ বারেও সকলে মেতে উঠেছেন পুজোর আয়োজনে। প্রবীণ বাসিন্দারা জানান, জমিদারি আমলের সেই জাঁকজমক নেই। তবে পঞ্জিকা মেনে পুজোর আয়োজন ও উৎসবে ঘাটতি হয় না। জমিদার বাড়ির বর্তমান প্রজন্মের অমর বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, জমিদার বাড়ির একাংশ এখন প্রায় ভগ্নদশা। কেউ থাকেন না। একটা অংশে কেয়ারটেকার রয়েছেন। এক সময় জমিদার অংশের দালান-বারান্দায় প্রতিমা তৈরি থেকে পুজো—সবই হত। এখন মনোহলির জমিদার বাড়ির কাছেই ওই বারোয়ারি দুর্গাপুজোয় তাঁরা উপস্থিত থাকার চেষ্টা করেন।