Success of Chandrayan-3

‘তোকে দেখছি, বাবা! বিজ্ঞানীদের সঙ্গে!’

প্রথমে জলপাইগুড়ি হোলিচাইল্ড স্কুল। পরে, জলপাইগুড়ি সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে উত্তীর্ণ কৌশিক।

Advertisement
অনির্বাণ রায়
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০২৩ ০৫:২১
কৌশিক নাগের মা, টিভিতে ছেলেকে দেখছেন।

কৌশিক নাগের মা, টিভিতে ছেলেকে দেখছেন। —নিজস্ব চিত্র।

‘‘মা, খবর কী?’’টিভির শব্দ কমিয়ে কাঁপা গলায় মায়ের উত্তর— ‘তোকে দেখছি, বাবা! বিজ্ঞানীদের সঙ্গে! স্বপ্ন সফল!’

Advertisement

তখন সবে মিনিট পনেরো হয়েছে ইসরো-র পাঠানো চন্দ্রযান-৩ চাঁদের দক্ষিণ মেরুর মাটি ছুঁয়েছে। টিভির পর্দায় ভেসে উঠছে চন্দ্রযানের সাফল্যের নেপথ্যে থাকা কারিগর বিজ্ঞানীদের উচ্ছ্বাসের ছবি। সে ছবিতে ছিলেন জলপাইগুড়ির বাসিন্দা কৌশিক নাগও। ইসরো-র চন্দ্রযান নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকেই কৌশিক ফোন করেছিলেন জলপাইগুড়ির বর্ধিত মোহন্তপাড়ার বাড়িতে মা সোনালি নাগকে। বুধবার দুপুরেও ফোন করেছিলেন মাকে। তখনও চন্দ্রযানের গতি কমেনি। গত কয়েক দিন ‘মিশন’-এ ব্যস্ত থাকায় ভাল করে কথা হয়নি ছেলের সঙ্গে। মা তাঁকে বলেছিলেন— ‘‘কত দিন দেখি না তোকে!’’ চন্দ্রযানের সাফল্যে প্রত্যয়ী কৌশিক মাকে উত্তর দিয়েছিলন— ‘‘সন্ধেবেলাই দেখতে পাবে, সব বিজ্ঞানীদের সঙ্গে!’’

প্রথমে জলপাইগুড়ি হোলিচাইল্ড স্কুল। পরে, জলপাইগুড়ি সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে উত্তীর্ণ কৌশিক। একটি বেসরকারি সফটওয়ার সংস্থা এবং দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনে কাজের পরে, ২০১৮ সালে ইসরো-যোগ। চন্দ্রযান ২ অভিযানেও ছিলেন। সে অসাফল্যের যন্ত্রণা রয়ে গিয়েছে মা সোনালি নাগের মনেও। তিনি বলেন, ‘‘বাবু (কৌশিক) খুব হতাশ হয়ে পড়েছিল সে বার! কিন্তু এ বার প্রথম থেকেই আত্মবিশ্বাসী ছিল!’’ ছোট থেকে পড়াশোনার সঙ্গে খেলাতেও পারদর্শী কৌশিক। স্কুলের হয়ে একাধিক শহরে খেলতে গিয়েছেন ছাত্রাবস্থায়। তবে তাঁর মায়ের কথায়, ‘‘ছোট থেকেই ও বিজ্ঞানী হতে চাইত।’’

গত দু’বছরে ঝড়ঝাপটা কম যায়নি কৌশিকের উপর দিয়ে। গত বছর কৌশিকের বাবা বিমাকর্মী কল্যাণ নাগ হৃদ্‌‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। সব প্রতিবন্ধকতার সঙ্গেই লড়াই করে গিয়েছেন কৌশিক। এ দিন ফোনে তিনি বলেন, ‘‘এই অনুভূতি বলে বোঝানোর নয়! আমরা আজ সকাল থেকে কন্ট্রোল রুমে বসে রয়েছি। একটাই অপেক্ষা— কখন চন্দ্রযান চাঁদের মাটি ছোঁবে!’’ তার মধ্যেই ফোন করেছেন মাকে, জলপাইগুড়িতে থাকা পিসিকে। বছর-তিরিশের এই তরুণ বিজ্ঞানীর কথায়, ‘‘সবার জন্যই আজ এই জায়গায় পৌঁছতে পেরেছি। আমার মা-বাবা, শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আমার থেকে যাঁরা বয়সে বড়— সকলের জন্য।’’

জলপাইগুড়ি সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ২০০৪ সালের ব্যাচের আরও এক প্রাক্তনী সুজয় দলুইও ইসরো-র চন্দ্রযান অভিযানের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। সুজয়ের বাড়ি দক্ষিণবঙ্গে।

আরও পড়ুন
Advertisement