মহম্মদ আসিফ। নিজস্ব চিত্র
ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন জঙ্গিদের সঙ্গে কি যোগ রয়েছে কালিয়াচক হত্যাকাণ্ডে ধৃত মহম্মদ আসিফের? তার নানা কর্মকাণ্ড দেখে এমনটাই সন্দেহ তদন্তকারীদের। তার অপরাধমনস্কতা এবং পুলিশকে ‘ঘোল খাওয়ানো’র চেষ্টা দেখে গোয়েন্দাদের ধারণা, ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন বা অন্য কোনও জঙ্গি সংগঠন তার মগজধোলাই করেছে। এমনকি সে কোনও আন্তর্জাতিক চক্রের পাল্লায় পড়ে থাকতে পারে বলেও তদন্তকারীদের ধারণা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ আধিকারিকের কথায়, ‘‘বছর উনিশের আসিফকে আমরা যত দেখছি, তত তার পাকা মাথার পরিচয় পাচ্ছি এবং ততই অবাক হয়ে যাচ্ছি।’’ তাঁদের মতে, আসিফকে দেখে অবাক হওয়ার যথেষ্ট কারণও রয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় আসিফ। এমনকি তার বাড়িতে মুক্তিপণের জন্য ফোনও আসে বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। সেই সময় বছরখানেক নিখোঁজ ছিল সে। পরে অবশ্য জানা যায়, ওই কাণ্ড সে নিজেই ঘটিয়েছিল। বাবার কাছ থেকে টাকা হাতাতে অপহৃত হওয়ার নাটক করেছিল সে। কিন্তু ওই এক বছর সে কোথায়, কী ভাবে, কাদের সঙ্গে কাটিয়েছে, সে সম্পর্কে কেউ কিছু জানে না। বস্তুত তার দাদা মহম্মদ আরিফকে বাদ দিয়ে পরিবারের সকলের মৃত্যুর পর আসিফ সম্পর্কে অনেক তথ্যই সহজলভ্য হবে না বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। এর কারণও রয়েছে। তদন্তকারীদের মতে, আসিফ অত্যন্ত ‘পাকা মাথার অপরাধী’। সে সহজে মুখ খুলতে নারাজ। এক বছর ‘অজ্ঞাতবাসে’ থাকার পর, বাড়িতে ফিরে এসে স্থানীয় মাদ্রাসা মিশন স্কুল ছেড়ে কালিয়াচকের চামাগ্রাম হাইস্কুলে ভর্তি হয় সে। সেখান থেকেই মাধ্যমিক পাশ করে।
তদন্তকারীদের মতে, এই এক বছর পরে আসিফ ফিরে আসে ভিন্ন মূর্তিতে। কিশোর বয়সেই সে পরিবারের কর্তা হয়ে ওঠে। তার নির্দেশ ভেঙে বাইরের লোকজনের সঙ্গে পরিবারের অন্যান্যরা কথাবার্তা বললে সে তাঁদের উপর শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচার করত বলেও অভিযোগ। এ সব দেখে তদন্তকারীদের ধারণা, ‘অজ্ঞাতবাসে’ থাকার সময় ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন বা অন্য কোনও জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছিল সে। সেখানে প্রশিক্ষণ পেয়েই সাইবার অপরাধে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। হয়ে ওঠে ‘পাকা’ অপরাধীও। ইতিমধ্যেই পাসওয়ার্ড ক্র্যাক করে আসিফের দামি দামি ল্যাপটপগুলির হার্ডডিস্কের অন্দরে ঢুকতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। তাঁদের মতে, কম্পিউটারের ‘হিস্ট্রি’ থেকে জানা গিয়েছে, আসিফ যে যে ওয়েবসাইটে ঘোরাফেরা করত, সেগুলি ভারতে নিষিদ্ধ। সে সেক্স চ্যাটও করত। একইসঙ্গে বাড়ির পাশেই ওই রকম অদ্ভুতদর্শন নির্মাণ ঘিরেও জোরালো সন্দেহ গোয়েন্দাদের। যা একান্তই আসিফের মস্তিষ্কপ্রসূত। ওই নির্মাণের পিছনে অনেক সূত্র লুকিয়ে রয়েছে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।