বাতাস ভারী সাট্টারির, হাঁড়ি চড়েনি পুখুরিয়ায়

পরিবারগুলির দাবি, পঞ্চায়েত ভোটের ফলের পরেই মালদহ থেকে ৪০ জন পরিযায়ী শ্রমিক মিজ়োরামের আইজলে রেল-সেতু নির্মাণের কাজে যান।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০২৩ ০৯:৪০
মিজোরামে ব্রিজ দুর্ঘটনায় একই গ্রামের মারা গেছেন ১১ জন। মৃত শ্রমিকদের পরিবারের বাড়ির সামনে উদ্বিগ্ন গ্রামবাসীরা। ছবি স্বরূপ সাহা

মিজোরামে ব্রিজ দুর্ঘটনায় একই গ্রামের মারা গেছেন ১১ জন। মৃত শ্রমিকদের পরিবারের বাড়ির সামনে উদ্বিগ্ন গ্রামবাসীরা। ছবি স্বরূপ সাহা

পাকা এক তলা পলেস্তারাহীন বাড়ি। এখনও জানলা-দরজা বসানো হয়নি। বৃহস্পতিবার দুপুরে পাকা বাড়ির মাটির মেঝেয় আছড়ে আছড়ে পড়ছেন চল্লিশোর্ধ্ব মহিলা সারথি সরকার। বুধবার মিজ়োরামে নির্মীয়মাণ রেল-সেতু দুর্ঘটনায় স্বামী, ছেলে, জামাই, নাতিকে হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন তিনি। কান্নার সুরে তিনি বলেন, “বাড়ি যে একেবারে পুরুষশূন্য হয়ে গেল।” মিজ়োরামের দুর্ঘটনার পরে কান্নার শব্দে বাতাস ভারী ইংরেজবাজার ব্লকের সাট্টারি গ্রামের। এ দিনও হাঁড়ি চড়েনি পুখুরিয়ার চৌদুয়ার গ্রামে মৃত ১১ জন পরিযায়ী শ্রমিকের বাড়িতে।

Advertisement

পরিবারগুলির দাবি, পঞ্চায়েত ভোটের ফলের পরেই মালদহ থেকে ৪০ জন পরিযায়ী শ্রমিক মিজ়োরামের আইজলে রেল-সেতু নির্মাণের কাজে যান। তাঁদের সঙ্গেই ছেলে জয়ন্ত সরকার (২৭), জামাই রঞ্জিত সরকার (৪৫), নাতি সুমন সরকার (১৮)-কে নিয়ে কাজে যান ইংরেজবাজারের বিনোদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সাট্টারি গ্রামের বাসিন্দা ঝাল্লু সরকার (৫৬)। এক বছর আগে সুদে তিন লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে বাড়ি তৈরি শুরু করেন তিনি। তবে এখনও বাড়ি তৈরির কাজ শেষ হয়নি। মৃতের খুড়তুতো ভাই অনুপ সরকার বলেন, “দাদার (ঝাল্লু) পাকা বাড়ির খুব শখ ছিল। ঋণ নিয়ে বাড়িও বানিয়েছিল। বাড়ির কাজ অনেক বাকি আছে। হাতে টাকাও ছিল না। তাই ছেলে, জামাই, নাতিকে নিয়ে বাড়তি রোজগারের আশায় মিজোরামে কাজে গিয়েছিল দাদা। দুর্ঘটনায় চার জনই শেষ হয়ে গেল। পুরো পরিবারই এখন ভেসে গেল।” তাঁর কথা শুনে কান্না ধরে রাখতে পারেননি সারথি। এরই মাঝে তাঁর ছেলের বউ রূপালি সরকার কয়েক বার জ্ঞান হারান।

তাঁদের বাড়ি থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে মিজ়োরামের দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে গ্রামেরই বাসিন্দা নব চৌধুরীরও (২১)। তাঁর বাড়িতেও কান্নার ভেঙে পড়েছে পরিবার। কান্নার একই ছবি পুখুরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের চৌদুয়ার গ্রামেও। মিজ়োরাম সরকারের প্রকাশিত নিখোঁজদের তালিকায় নাম রয়েছে চৌদুয়ার গ্রামের মোজাফ্ফর আলি ও সেনাউল হকের। এর পরেই, উদ্বেগে দিন কাটছে পরিবারগুলির। নিখোঁজ সেনাউল হকের স্ত্রী মিলি বিবি বলেন, “কালকে শুনলাম, স্বামী মারা গেছেন। এ দিন বলা হচ্ছে, আমার স্বামী নিখোঁজ। কী হচ্ছে, কিছুই বুঝতে পারছি না!” এ দিকে, প্রিয়জনকে হারিয়ে কান্নায় চোখের জল শুকিয়ে এসেছে বাকি পরিবারগুলিরও।

এ দিন রাজনৈতিক দলের নেতা, নেত্রীদের পাশাপাশি, পুলিশ, প্রশাসনের কর্তারা গ্রামগুলিতে যান। মালদহের জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়া বলেন, “মিজোরাম সরকারের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। দেহগুলি ফেরানো হচ্ছে। পাশাপাশি, নিখোঁজদেরও উদ্ধারের চেষ্টা হচ্ছে।” জানা গিয়েছে, আ জ শুক্রবার মালদহে যাবেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস।

আরও পড়ুন
Advertisement