The Oldest Inmate

৩৬ বছর পর কারামুক্তি! মালদহের ১০৪ বছরের বৃদ্ধ জেল থেকে বেরিয়ে বললেন, ‘বাগান করব’

৩৬ বছর আগে একটি খুনের ঘটনায় নাম জড়ায় মালদহের মানিকচক গ্রাম পঞ্চায়েতের পশ্চিম নারায়ণপুরের বাসিন্দা রসিক মণ্ডলের। সেই থেকে তিনি জেলবন্দি ছিলেন। রসিক সম্ভবত রাজ্যের প্রবীনতম বন্দি।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
মালদহ শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ২২:৩৫
Rasik Mondal

জেল থেকে মুক্তির পর রসিক মণ্ডল। —নিজস্ব চিত্র।

ঠিক কত বছর আগে জেল হয়েছিল?

Advertisement

মনে নেই।

বয়স কত?

(খানিক ভেবে) ১০৮ বছর।

বাড়ি ফিরে কী করবেন?

এ বার হাসি খেলে গেল বলিরেখা ভরা মুখে। জবাব এল, ‘‘বাগান করব।’’

৩৬ বছর সংশোধনাগারে কাটিয়েছেন মালদহের বাসিন্দা রসিক মণ্ডল। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে অবশেষে মঙ্গলবার মুক্তি পেলেন শতায়ু ওই বৃদ্ধ। পরিবারের দাবি, তাঁর বয়স ১০৪ বছর। আর বৃদ্ধ নিজে বলছেন, বয়স ১০৮ হবে! তার মধ্যে অনেকগুলো বছর ‘লৌহকপাটের আড়ালে’ কাটল।

প্রায় ৩৬ বছর আগে একটি খুনের মামলায় নাম জড়ায় মালদহের মানিকচক গ্রাম পঞ্চায়েতের পশ্চিম নারায়ণপুরের বাসিন্দা রসিক-সহ বেশ কয়েক জনের। সালটা ছিল ১৯৮৮। তারিখ ৮ নভেম্বর। রাতের অন্ধকারে বাড়িতে ঢুকে রসিকের ভাই সুরেশ মণ্ডলকে গুলি করে খুন করা হয়। সেই সময় জমি নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে বিবাদ চলছিল। তাই সুরেশের পরিবার দাবি করে, রসিকই খুন করেছেন ভাইকে। মানিকচক থানায় রসিক-সহ বেশ কয়েক জনের নামে খুনের অভিযোগে মামলা রুজু হয়। রসিকের সঙ্গে মথুরাপুরের বাসিন্দা জিতেন মণ্ডল নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার পর তারিখের পর তারিখ। শুনানির পর শুনানি। শুরু হয় রসিকের বন্দিদশা। মাঝে বেশ কয়েক বছর অবশ্য জামিনে মুক্তি পেয়েছিলেন। কিন্তু আবারও ঠাঁই হয় সেই সংশোধনাগারে। একটা সময় রসিকের স্থায়ী ঠিকানা হয়ে দাঁড়ায় মালদহ সংশোধনাগার। কারা আধিকারিকদের মতে, রসিকই রাজ্যের প্রবীণতম বন্দি।

ভারতীয় আইন অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর জেলবন্দিদের মুক্তি দেওয়া হয়। তবে রসিকের সঙ্গে এমনটা ঘটেনি। তাই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বৃদ্ধের পুত্র-পৌত্রেরা। কখনও হাই কোর্ট, কখনও সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছেন তাঁরা। শেষমেশ গত ২৯ নভেম্বর ১০৪ বছরের রসিকের জামিন মঞ্জুর করে সর্বোচ্চ আদালত। মঙ্গলবার জামিনের কাগজ মালদহ জেলা সংশোধনাগারে পৌঁছয়। তার পর মুক্তি।

রসিক জানিয়েছেন, বাড়ি ফিরতে পারবেন জেনে ভাল লাগছে। বাড়ি ফিরে তিনি বাগান করবেন। চাষবাস করবেন। এ-ও জানালেন, কারাগারে নিয়মিত শরীরচর্চা করেছেন। তাই ১০০ পেরিয়েও তিনি সমর্থ। বৃদ্ধের ছেলে উত্তম বলেন, ‘‘বাবার সঙ্গে কথা হল। আমার সঙ্গে দেখা হওয়া মাত্র বলল, বাড়ি যাব। বাবা ব্যায়াম করত নিয়মিত। তাই স্বাস্থ্য মোটামুটি ভালই আছে। আমরা সকলে আজ খুব খুশি।’’

Advertisement
আরও পড়ুন