—ফাইল চিত্র।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না শুভেন্দু অধিকারী? নন্দীগ্রাম বিধানসভা শেষমেশ কার দখলে থাকবে? ২ মে বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার দিন ওই কেন্দ্রে শুভেন্দুকে জয়ী ঘোষণা করা হলেও তা নিয়ে বিতর্ক পিছু ছাড়েনি। নন্দীগ্রাম বিধানসভার ফলকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে দ্বারস্থ হয়েছেন মমতা। শুক্রবার আদালতের সেই শুনানি পিছিয়ে গিয়েছে আগামী বৃহস্পতিবার। ফলে মমতা না শুভেন্দু— কোন দিকে গড়াবে দুই মহারথীর ভবিষ্যৎ, তা নিয়ে হাই কোর্টের রায়ের দিকেই আপাতত তাকিয়ে নন্দীগ্রামবাসী।
মমতা আদালতে গেলেও নন্দীগ্রামের ভোটারেরা নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকেই ভোট দিয়েছেন বলেই দাবি বিজেপি-র। গোটা রাজ্যে ২১৩টি আসন জয় করলেও নন্দীগ্রামে হারের যন্ত্রণা তৃণমূল ভুলতে পারেনি বলেই মনে করেন বিজেপি-র তমলুক সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি প্রলয় পাল। তাঁর দাবি, “আইনের দ্বারস্থ হওয়ার সকলের অধিকার রয়েছে। এ নিয়ে বিজেপি চিন্তিত নয়। নন্দীগ্রামের মানুষ এ বার নিজে থেকে ভোট দিয়েছে। যে অধিকার মানুষ আগে প্রয়োগ করতে পারছিল না। এখানে যা ফলাফল হওয়ার সেটাই হয়েছে। এ নিয়ে কাটাছেঁড়া করে মানুষের রায়কে বদলে দেওয়া যাবে না।”
যদিও নির্বাচনের দিন থেকেই নন্দীগ্রামের কিছু এলাকায় ভোট লুঠের অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। ভোটগ্রহণ চলাকালীন নন্দীগ্রাম ২ ব্লকের ভেকুটিয়া ১ নম্বর অঞ্চলের ৬ নম্বন বুথে ভোট লুঠ হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী মমতা। বুথের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ বসে থেকে বাইরে থাকা বিপক্ষ দলের লোকেদের সরিয়ে ফেলার দাবিতেও সরব হয়েছিলেন তিনি। নন্দীগ্রাম ব্লক তৃণমূলের সভাপতি স্বদেশ দাসের দাবি, “সে দিন আমরা পুনর্গণনার দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু কোনও এক অজ্ঞাত কারণে সে দাবি মানেননি নির্বাচনী আধিকারিক। এক প্রকার গায়ের জোরে সে দিন নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হয়েছিল।”
হলদিয়ায় গণনাকেন্দ্রের ভিতর একাধিক অসঙ্গতির অভিযোগ করে স্বদেশ বলেন, “সে দিন ৩টে হলে নন্দীগ্রামের ভোটগণনা হয়েছিল। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে একই সময়ে রুমগুলিতে গণনার রাউন্ডের ব্যাপক তারতম্য হচ্ছিল। সেই সঙ্গে গণনা চলাকালীন প্রায় ৪৫ মিনিট বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়। শেষ মুহূর্তে একনাগাড়ে প্রায় ২ ঘণ্টারও বেশি সময় গণনা স্থগিত থাকে।” তাঁর অভিযোগ, “১৫ রাউন্ডের শেষে যেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৮ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিলেন, সেখানে ১৬ ও ১৭তম রাউন্ডে গোকুলনগর এবং সোনাচূড়ার গণনায় ফলাফলের সময় একাধিক ইভিএম মেশিনের সঙ্গে থাকা ফর্ম ১৭ সি-তে তৃণমূলের বুথ এজেন্টের স্বাক্ষর দেখা যায়নি। এ নিয়ে গণনাকেন্দ্রে থাকা তৃণমূলের প্রতিনিধিরা প্রতিবাদ করলেও কেন্দ্রীয় বাহিনী এক প্রকার জোর করে সবাইকে সরিয়ে দিয়ে গণনা শেষ করতে সাহায্য করেছিল।” স্বদেশের দাবি, “আদালতের হস্তক্ষেপে পুনরায় গণনা হোক। তা হলেই দেখা যাবে, নন্দীগ্রামে জয়ী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই।”
২ মে ভোটগণনায় টানটান উত্তেজনার পর্ব পার করে রাজ্য বিধানসভার সব থেকে চর্চিত নন্দীগ্রাম কেন্দ্রের ফল ঘোষিত হয়েছিল। এক সময় শোনা যায় যে, নন্দীগ্রামে ১২০০ ভোটে জয়ী হয়েছেন মমতা। তবে পর মুহূর্তেই জানা যায় যে, নন্দীগ্রামে জিতেছেন বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু। তাঁর কাছে মাত্র ১৯০০-র কিছু বেশি ভোটের ব্যবধানে হেরে গিয়েছেন মমতা। পরে শুভেন্দুকে জয়ী ঘোষণা করেন রিটার্নিং অফিসার। প্রাথমিক ভাবে নন্দীগ্রামে হার স্বীকার করে নিলেও সে সময় থেকেই গণনায় কারচুপির অভিযোগ তুলে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা। গণনায় কারচুপির অভিযোগ তুলে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন তিনি। সেই মতো নন্দীগ্রামে ফল ঘোষণার দেড় মাসের মাথায় আদালতে মামলা রুজু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
তৃণমূল এবং বিজেপি, যুযুধান দু’দলের মধ্যে নন্দীগ্রামের জয় নিয়ে তরজার মধ্যে রীতিমতো চাপা আতঙ্কে ওই কেন্দ্রের আম জনতা। নন্দীগ্রামের জয় নিয়ে ফের কাটাছেঁড়া শুরু হওয়ায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়াতে পারে বলেই আশঙ্কা তাঁদের একাংশের। ভোট পরবর্তী হিংসার শিকার নন্দীগ্রামের কেউই এই রাজনৈতিক তরজায় মুখ খুলতে রাজি নন। আদালতের রায় যে দিকেই যাক না কেন, এলাকার শান্তি যাতে বিঘ্নিত না হয়, সে কামনাই করছে নন্দীগ্রাম।