নিজস্ব চিত্র।
করোনার কারণে কাজ হারিয়েছেন স্বামী। সংসার চালাতে তাই টোটো নিয়ে পথে বেরোলেন রাধিকা দেবনাথ।
শুরুতে বাঁকা কথা শুনতে হলেও তাতে টলে যাননি তিনি। সংসার চালাতে মরিয়া রাধিকা এখন শহরের অনেকের প্রশংসা পাচ্ছেন। অনেকে শুধু তাঁরই টোটোতে যাতায়াত করেন।
রাধিকা জানান, সকাল থেকে টোটো নিয়ে কৃষ্ণনগরের রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। যাত্রী বহন বাবদ যা আয় হচ্ছে তার থেকে টোটোর কিস্তির টাকা সরিয়ে রাখেন। বাকিটায় সংসার চলে।
বছর চল্লিশের রাধিকা দেবনাথের বাড়ি কৃষ্ণনগরের চৌধুরীপাড়া এলাকায়। দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। স্বামী তারক দেবনাথকে নিয়ে সংসার। তারক ভাগবত পাঠ করে এত দিন সংসার চালিয়ে নিয়ে এসেছেন। কিন্তু করোনার কারণে গত বছর থেকে তাঁর কাজ পুরোপুরি বন্ধ। তিনি অন্য কোনও কাজ বিশেষ পারেন না। ফলে পরিবার আয় শূন্য হয়ে পড়ে। তখনই রাধিকা ঠিক করেন যে, সংসার চালাতে টোটো চালাবেন। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। পরিচিত এক জনের মাধ্যমে ১ লক্ষ ৮ হাজার টাকা দিয়ে টোটো কেনেন। ঠিক হয় টোটো চালিয়ে তিনি মাসে মাসে কিস্তিতে টাকা পরিশোধ করবেন।
রাধিকা বলেন, “আমার স্বামী ভাগবত পাঠ ছাড়া আর কিছুই করতে পারেন না। সংসার চালাতে বাধ্য হয়ে টোটো নিয়ে বার হতে হয়েছে।” তিনি বলেন, “তবে প্রথম দিকে নানা ধরনের সমস্যা হয়। মহিলা চালক দেখে অনেকেই আমার টোটোতে ওঠার সাহস পেতেন না।”
তিনি আরও বলেন, “স্টেশনের স্ট্যান্ডে দু’একদিন দাঁড়াতে গিয়েছিলাম। আমাকে হটিয়ে দেওয়া হয়েছে। নানা ভাবে বিদ্রুপ করা হয়েছে। বাড়ির কাছেই শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল। সেখানেও দাঁড়াতে পারিনি পুরুষ চালকদের অসহযোগিতার কারণে।” অগত্যা তাই কোনও নির্দিষ্ট স্ট্যান্ডে না দাঁড়িয়ে তিনি রাস্তা থেকে যাত্রী তোলেন।
তবে সকলেই বিষয়টিকে সমান ভাবে দেখেননি। অনেকেই এগিয়ে এসেছেন। তাঁকে সহযোগিতা করেছেন। রাধিকা বলেন, “অনেকে আমার ফোন নম্বর নিয়ে রেখেছেন। তাঁদের কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন হলে আমাকে ফোন করে ডেকে নেন। আগে থেকে জানিয়ে রাখেন। বিশেষ করে বেশ কিছু স্কুলশিক্ষিকা এখন আমার টোটোতেই যাতায়াত করেন।”
দিন গেলে পাঁচশো থেকে সাতশো টাকা আয়। টোটোর নিয়ে পথে বেরিয়ে সংসারটাকে পথে বসার হাত থেকে রক্ষা করছেন রাধিকা।