Vegetables High Price

আনাজ বেচা ছেড়ে পাটের কাজে অনেকেই

বেশ কিছু দিন ধরে আনাজের এমন আগুন দর কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। একমাত্র পটল ১৫-২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। জ্যোতি আলু ১৬-২০ টাকা, চন্দ্রমুখী প্রায় ২৮-৩০ টাকা।

Advertisement
দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় ও সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়
নবদ্বীপ  শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০২৩ ০৯:৩৪
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

নবদ্বীপের অন্যতম ব্যস্ত আগমেশ্বরী বাজারে অনেক দিন ধরেই আনাজ বিক্রি করেন পরিতোষ হালদার। ভাল জিনিস আনেন বলে ক্রেতারাও তাঁর অপেক্ষায় থাকেন। সম্প্রতি বাজারে আসছেন না পরিতোষ। জানা গেল, আনাজের চড়া দামের জেরে নিয়মিত লোকসান হচ্ছিল। তাই ব্যবসা বন্ধ রেখে আপাতত পাট ছাড়ানোর কাজে লেগে পড়েছেন পরিতোষ।

Advertisement

শুধু একা পরিতোষ নন, কাঁচা আনাজের বাজারে প্রতি দিন কমছে বিক্রেতার সংখ্যা। ক্রেতার সংখ্যা না কমলেও কমেছে তাঁদের প্রতি দিনের কেনাকাটার পরিমাণ। ফলে, বিক্রি না হওয়া কাঁচা আনাজ নিয়ে ঘরে ফিরতে হচ্ছে অনেককেই। বিক্রেতাদের কথায়, বেশির ভাগ আনাজই দুপুরের মধ্যে বিক্রি করতে না পারলে তা শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। বিশেষ করে, শাকপাতা। আলু, আদা, পেঁয়াজের মতো অল্প কিছু আনাজ বাদ দিলে পর দিন কোনও আনাজই বিক্রি হয় না। কেননা, এক দিনের পুরনো হলেই চেহারার মধ্যে ছাপ পড়ে। কেউ কিনতে চায় না। আড়ত থেকে চড়া দামে জিনিস কিনে এ ভাবে নিত্য লোকসান স্বীকার করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই পাটের মরসুমে অনেকেই এখন রুটিরুজির তাগিদে বাধ্য হচ্ছেন পেশা বদলে। এই ছবি জেলা জুড়েই।

বেশ কিছু দিন ধরে আনাজের এমন আগুন দর কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। একমাত্র পটল ১৫-২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। জ্যোতি আলু ১৬-২০ টাকা, চন্দ্রমুখী প্রায় ২৮-৩০ টাকা। এ ছাড়া লাউ, মিষ্টি কুমড়ো, চালকুমড়ো, ঝিঙে— সব ৩০ টাকার আশেপাশে। বেগুন ৬০-৭০ টাকা, ফুলকপি ১০-৩০ টাকা। টোম্যাটো, ক্যাপসিক্যাম সবই অস্বাভবিক চড়া।

এক খুচরো বিক্রেতা বলাই বিশ্বাস বলেন, “বাজারে আসব কেন? প্রতি দিন লাভ-লোকসান বাদ দিয়ে বাজারে এলে ১০০ টাকা খরচ আছে। তার পর কেনাবেচার প্রশ্ন। আগে যে লোক ২০০ গ্রাম আদা কিনত, এখন সে ৫০ গ্রাম কেনে। তিন কেজি আলুর ক্রেতা এক কেজি কিনে ফিরে যায়। দিনের শেষে ২০০ টাকা রোজগার হয় না। তার পর জিনিস বিক্রি না হলে তো সোনায় সোহাগা। কিন্তু পাট ছাড়াতে গেলে দিনে ৫০০ টাকার কামাই আছে। তাই অনেকেই সে কাজে যাচ্ছে।”

আগমেশ্বরী বাজারে প্রতি দিন ২০০ জনের উপর বিক্রেতা বসেন আনাজ নিয়ে। বিশেষ বিশেষ দিনে অনেক বেড়ে যায় বিক্রেতার সংখ্যা। তাতেও ভিড় সামাল দেওয়া যেত না। ছবিটা আমূল বদলে গিয়েছে কয়েক মাসে। বাজার কমিটির দেওয়া শেষ এক সপ্তাহের হিসাব বলছে, বিক্রেতার সংখ্যাটা অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বাজারে বসেছিলেন ১১০ জন বিক্রেতা, শুক্রবার ৯৯ জন, শনিবার ৯৫ জন, ছুটির দিন রবিবারে কিছুটা বেড়ে ১৪৫ জন, সোমবার থেকে ফের কমতে শুরু করে সংখ্যাটা।

বাজারের সভাপতি হিমাংশু সাহা বলেন, “মানুষের ক্রয় ক্ষমতার উপর বিরাট প্রভাব ফেলেছে দাম। তারই জের ফাঁকা হচ্ছে প্রতি দিনের বাজার। আগে বেলা ২টো পর্যন্ত বাজারে ভিড় থাকত। এখন কোনও কোনও দিন বেলা ১১টা বাজলেই বাজার ফাঁকা।”

অন্য দিকে, প্রতি দিনের বাজারে আনাজ কিনতে গিয়ে আমজনতার নাভিশ্বাস উঠছে। তার কোপ পড়ছে আনাজ চাষি থেকে ছোট-বড় বিক্রেতাদের উপরে। প্রবীণ চাষি এবং করিমপুর উদ্যান ও কৃষি কল্যাণ সমিতির সম্পাদক বিশ্বনাথ বিশ্বাস বলেন, “মানুষের যদি কেনার ক্ষমতা না থাকে, তা হলে সে বাজারমুখো হবে না। যার প্রথম কোপ পড়ে যাঁরা ডালা সাজিয়ে আনাজ নিয়ে বসেন, তাঁদের উপরেই। প্রতি দিনের লাভের কড়ি দিয়েই তাঁদের সংসার চলে।’’ তাঁর দাবি, রোজ লোকসান করে অবিক্রিত আনাজ নিয়ে ঘরে ফিরলে মহাজনের টাকা শোধ হবে না। পর দিন আড়তে জিনিস কিনতে নগদ টাকা লাগবে। তাই অনেকেই এই কাজ এখন করতে চাইছেন না।

ছোট চাষি বা বাজারের বিক্রেতাদের দাবি, সরকার আনাজের দাম বেঁধে দিক। প্রাকৃতিক কারণে ভিন রাজ্যের আনাজ আসছে না। বৃষ্টি নেই বলে স্থানীয় ফলনের অবস্থা খুব খারাপ। এই সুযোগে যাঁদের কাছে মজুত আছে, তাঁরা চুটিয়ে কালোবাজারি করছে।

আরও পড়ুন
Advertisement