TMC Leader murder

বোমা-গুলিতে নওদায় গিয়ে খুন তৃণমূলের নেতা

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মতিরুলের ছেলে নওদার মহম্মদপুর এলাকায় একটি বেসরকারি স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। তাকে দেখতে মাঝেমধ্যেই হস্টেলে আসতেন ওই নেতা।

Advertisement
মফিদুল ইসলাম
মহম্মদপুর শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২২ ০৬:৫১
ভেঙে পড়েছেন নিহত তৃণমূল নেতা মতিরুল বিশ্বাসের আত্মীয়েরা। বৃহস্পতিবার মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে।

ভেঙে পড়েছেন নিহত তৃণমূল নেতা মতিরুল বিশ্বাসের আত্মীয়েরা। বৃহস্পতিবার মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক। ইনসেটে, নিহত মতিরুল বিশ্বাস। নিজস্ব চিত্র

নওদায় খুন হলেন নদিয়ার এক তৃণমূল নেতা। মৃতের নাম মতিরুল বিশ্বাস (৪৫)। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নওদার শিবনগর এলাকায় তাঁর উপর চড়াও হয় দুষ্কৃতীরা। বোমা ও গুলি করে তাকে খুন করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। ওই তৃণমূল নেতার বাড়ি নদিয়ার থানারপাড়া থানার সাদিপুরে। তাঁর স্ত্রী রিনা বিশ্বাস নারায়ণপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান। মতিরুল নিজেও করিমপুর ২ ব্লকের তৃণমূল সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি। রিনা বলেন, ‘‘ওকে কারা কেন গুলি করল, এই মুহূর্তে আমার কিছু মাথায় আসছে না।’’ ঘটনার পর থেকে নওদা ও সাদিপুর দুই এলাকাই থমথমে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মতিরুলের ছেলে নওদার মহম্মদপুর এলাকায় একটি বেসরকারি স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। তাকে দেখতে মাঝেমধ্যেই হস্টেলে আসতেন ওই নেতা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত প্রায় সাত-আট বছর ধরে ওই নেতার ব্যক্তিগত নিরপত্তারক্ষী ছিলেন। তা ছাড়াও, একাধিক সিভিক ভলান্টিয়ার তাঁর সঙ্গে থাকতেন বলে সূত্রের খবর।

Advertisement

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি নওদার মহম্মদপুর এলাকা থেকে মোটরবাইকে চড়ে বাইকে ফিরছিলেন। স্থানীয় সূত্রে খবর তিনি নিজেই চালাচ্ছিলেন। পিছনের সিটে বসে ছিলেন তাঁর নিরাপত্তারক্ষী। অন্য একটি মোটরবাইকে সাদিপুর এলাকার এক সিভিক ভলান্টিয়ার ছিলেন বলে খবর। নওদার টিয়াকাটা ফেরিঘাটের আগেই শিবনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে তাঁদের দিকে বোমা ছোড়ে দুষ্কৃতীরা। মোটরবাইক ফেলে শিবনগর গ্রামের দিকে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন মতিরুল। কিছুটা যাওয়ার পর তাঁর দিকে একাধিক গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। তার পরে দুষ্কৃতীরা বাইক চড়ে নওদার দিকে পালিয়ে যায় বলে সূত্রের খবর। স্থানীয় বাসিন্দারা মতিরুলকে উদ্ধার করে আমতলা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয় তাঁর।

মৃতের আত্মীয়দের দাবি দলের গোষ্ঠী কোন্দলের জেরেই তাকে খুন করা হয়েছে। নদিয়া জেলা পরিষদের সদস্য টিনা ভৌমিক, তাঁর ঘনিষ্ঠ রাজকুমার কবিরাজ ও নওদার ব্লক তৃণমূল সভাপতি সফিউজ্জামান সেখের যোগসাজশে তাকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় নওদা থানার পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয়েছে একাধিক গুলির খোল। পরে বৃহস্পতিবার রাত আটটা নাগাদ ঘটনাস্থলে আসেন জেলা পুলিশ সুপার সুরিন্দর সিংহ সহ জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্তারা। জেলা পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘গুলি ও বোমার আঘাতে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।’’ ঘটনার ঘণ্টা তিনেক পর ওই নেতার নিরপত্তারক্ষীকে নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় থানারপাড়া থানার পুলিশ। জানা গিয়েছে, বোমা ছোড়ার পর ওই নিরাপত্তারক্ষী টিয়াকাটা ঘাটের দিকে ছুটে যান। তাঁকে নিয়ে ঘটনাস্থলে সরেজমিনে খতিয়ে দেখেন জেলা পুলিশের শীর্ষকর্তারা।

যদিও নওদার ব্লক তৃণমূল সভাপতির কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তিনি ফোনের উত্তর দেননি। উত্তর দেননি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজেরও।

মুর্শিদাবাদের সাংসদ তথা দলের জেলা চেয়ারম্যান আবু তাহের খান বলেন, ‘‘উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে কারও নাম করা হচ্ছে। খুনের ঘটনায় যে বা যারা জড়িত প্রকৃত তদন্ত করে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করুক। যদি খুনের পিছনে দলের কেউ জড়িত থাকে, দলও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। পুলিশকে বলা হয়েছে নিরপেক্ষ তদন্ত করতে।’’

আরও পড়ুন
Advertisement