TMC

গ্রামাঞ্চলে ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে চাইছে শাসক দল 

গত লোকসভা ভোটেই দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছিল বিজেপি। কিন্তু ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির থেকে ১৫ হাজারের বেশি ভোটে এগিয়ে থেকে পঞ্চম বারের জন্য নবদ্বীপ কেন্দ্র দখল করে তৃণমূল।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:০৯
Representative Image

—প্রতীকী ছবি।

গত লোকসভা ভোটে নবদ্বীপ বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের মুখরক্ষা করেছিল গ্রামীণ নবদ্বীপ। অথচ পঞ্চায়েত ভোটে সেই গ্রামাঞ্চলেই বিরোধীদের শক্তিবৃদ্ধির কথা মাথায় রেখে বছরের শুরু থেকেই বুথ স্তরের সংগঠনে জোর দিচ্ছে তৃণমূল। সাধারণ ভোটারের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিবিড় সংযোগ গড়ে তোলার সঙ্গেই বুথ স্তর থেকে ঝাড়াই-বাছাই করে কমিটি গড়ে তুলতে চাইছে তারা। বেঁধে দেওয়া হয়েছে নতুন বুথ কমিটি গঠনের সময়ও‍। দলের নেতারা জানাচ্ছেন, প্রতিটি মানুষের বাড়ি গিয়ে বোঝার চেষ্টা হচ্ছে, কেন তাঁরা পঞ্চায়েত ভোটে মুখ ফেরালেন। বিভিন্ন দলীয় পদাধিকারী সম্পর্কে মানুষের মনোভাব। বয়স বা অভিজ্ঞতার নয়, কাজ করার ইচ্ছা এবং গ্রহণযোগ্যতাই কমিটিতে স্থান পাওয়ার মাপকাঠি হিসাবে ধরা হচ্ছে। নতুন মুখ বাড়ছে প্রায় সব কমিটিতে।

Advertisement

গত লোকসভা ভোটে নবদ্বীপ পুর এলাকায় ১২ হাজারের বেশি ভোটের ঘাটতি সত্ত্বেও গোটা কেন্দ্রে তাদের চার হাজারের বেশি ভোটে বিজেপির চেয়ে এগিয়ে থাকার পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল পঞ্চায়েতগুলি। কিন্তু পঞ্চায়েত দখলে রাখার হিসাবে বিশেষ হেরফের না হলেও গ্রামীণ নবদ্বীপে বিরোধীদের শক্তি অনেকটা বেড়েছে গত ভোটে। বিশেষ করে বিজেপির আসন দ্বিগুণ বেড়েছে। প্রায় শূন্য হয়ে যাওয়া সিপিএম একক ভাবে দখল করেছে মায়াপুরের মতো পঞ্চায়েত। গ্রামীণ নবদ্বীপে তৃণমূলের বহু কালের শক্ত ঘাঁটি স্বরূপগঞ্জ পঞ্চায়েত হাতছাড়া হয়েছে।

গত লোকসভা ভোটেই দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছিল বিজেপি। কিন্তু ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির থেকে ১৫ হাজারের বেশি ভোটে এগিয়ে থেকে পঞ্চম বারের জন্য নবদ্বীপ কেন্দ্র দখল করে তৃণমূল। দু’বছরের মাথায় ফের গ্রামাঞ্চলে কিছুটা হলেও হারানো জমি ফিরে পেয়েছে বিজেপি। ২০১৮-এর পঞ্চায়েত ভোটের নিরিখে নবদ্বীপের আটটি পঞ্চায়েতে তাদের আসন ছিল ১৩টি। এ বার তা বেড়ে হয়েছে ২৬টি। স্বরূপগঞ্জ পঞ্চায়েতে গত বারের তিন আসন বেড়ে ১০ হয়েছে। মাজদিয়া-পানশিলা পঞ্চায়তে ২৪টির মধ্যে বিজেপি পেয়েছে ১১টি আসন। এই প্রথম বাবলারি এবং সংখ্যালঘু প্রধান ফকিরডাঙা ঘোলাপাড়ায় খাতা খুলেছে বিজেপি। যদিও বিজেপি ব্যর্থ মায়াপুরে। দু’টি পঞ্চায়েতে ৪১টি আসনের মধ্যে মাত্র দু’টি পেয়েছে তারা। ও দিকে, তৃণমূলের কাছ থেকে মায়াপুর-বামুনপুকুর ১ নম্বর কেড়ে নিয়েছে সিপিএম। পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের এই ফলাফলের পিছনে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকেই দায়ী করছেন অনেকে। যদিও নবদ্বীপ ব্লক তৃণমুল সভাপতি কল্লোল কর তা মানতে নারাজ। তাঁর দাবি, “বিরাট সংসারে একটু ঠোকাঠুকি লাগতেই পারে। কিন্তু ভোটের সময় আমরা সবাই এক। আসলে মানুষ বিজেপির মিথ্যার ফাঁদে পা দিয়েছেন। কিন্তু লোকসভা ভোটে গ্রামীণ নবদ্বীপে গত বারের থেকেও বেশি ভোটে লিড পাবে তৃণমূল।” বিরোধীদের শক্তিবৃদ্ধি প্রসঙ্গে তাঁর ব্যাখ্যা, “রাম-বামে ভাই-ভাই হয়ে ভোট করেছে, বোর্ড গড়েছে। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানবিরোধী কিছু ভোট সব সময় থাকেই।” এ প্রসঙ্গে বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য গৌতম পালের দাবি, “পঞ্চায়েত ভোট আর লোকসভা ভোট এক নয়। পঞ্চায়েতে সিপিএম বা তৃণমূলের যত ভোট ছিল তার অন্তত ৫০ শতাংশ লোকসভায় আমরা পাব। কারণ মানুষ জানে, বামেরা শূন্য। আর তৃণমূলের মতো দুর্নীতিসর্বস্ব একটা দলকে কেন লোকে ভোট দেবে?” আর, সিপিএমের স্বরূপগঞ্জ শাখা সম্পাদক সুদীপ দেবনাথের বক্তব্য, “এক দল মন্দির বানাচ্ছে আর এক দল দুর্নীতি করছে। বামেদের এখন কতটা শক্তি, তা সম্প্রতি ব্রিগেড প্রমাণ করে দিয়েছে।”

আরও পড়ুন
Advertisement