বালিকার উপর অ্যাসিড হামলা
Acid Attack

Acid Attack: ক্ষতিপূরণ অধরা, মেয়ের চিকিৎসায় সর্বস্বান্ত পরিবার

বছরখানেক আগে টিউশন থেকে বাড়ি আসার পথে অ্যাসিড হামলা হয়েছিল দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রীর উপর। ঘটনায় পুড়ে গিয়েছিল নাবালিকার জিভ এবং দু’টি হাত।

Advertisement
সুস্মিত হালদার
শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২২ ০৬:৪৯

প্রতীকী ছবি।

অ্যাসিডে পুড়ে গিয়েছে তার গোটা মুখ। দু’টি চোখই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মারাত্নক ভাবে। গরম লাভার মত অ্যাসিড তার মাথা থেকে গড়িয়ে মুখ বেয়ে সোজা গলা পর্যন্ত নেমে এসেছিল। ২০২১ সালের ১৭ জুলাই ঘূ্র্ণির সেই অ্যাসিড হামলার ঘটনায় পুড়ে গিয়েছিল নাবালিকার জিভ এবং দু’টি হাত।

ধারদেনা করে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে মেয়েকে নিশ্চিৎ মৃত্যুর হাত থেকে ফিরিয়ে এনেছেন দরিদ্র ফেরিওয়ালা বাবা। কিন্তু এখন তিনি সর্বস্বান্ত এবং দেনায় জর্জরিত। এখনও চিকিৎসার জন্য প্রতি মাসে মোটা টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে তার একটাই চিন্তা, মেয়ের চিকিৎসার খরচ আসবে কোথা থেকে। ঘটনার পর প্রায় এক বছর হতে চলল, সরকার থেকে এখনও প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ পাননি তিনি।

Advertisement

অথচ, সুপ্রিম কোর্ট ও জাতীয় আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের নির্দেশ আনুযায়ী, অ্যাসিড হামলায় আক্রান্ত হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা। এপিডিআর-এর রাজ্য সহ-সভাপতি তাপস চক্রবর্তী বলছেন, “সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ আছে যে, রাজ্য বাজেট তৈরির সময় এর জন্য আলাদা বাজেট তৈরি করতে হবে। আমরা রাজ্য ও কেন্দ্রের পাশাপাশি কলকাতা হাইর্কোটকেও বিষয়টি নিয়ে একাধিক বার চিঠি করেছি।” তাঁর কথায়, “যত বার আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছি তত বারই তাঁরা জানিয়েছেন যে, তহবিলে টাকা নেই। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। বহু আক্রান্ত অর্থের অভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করাতে পারছেন না।” নদিয়া জেলা আইনি পরিষেবা সচিব সঞ্জিৎ আমবস্তা বলেনন, “বিষয়টি রাজ্য কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত ক্ষতিপূরণ পেয়ে যাবেন।”

বছরখানেক আগে টিউশন থেকে বাড়ি আসার পথে অ্যাসিড হামলা হয়েছিল দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রীর উপর। হামলায় অভিযুক্ত ছিলেন তার স্বামী। নদিয়া জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষ মেয়েটির বাড়ি যায় ও তদন্ত রিপোর্ট তৈরি করে। পুলিশ ও স্বাস্থ্য দফতরের কাছ থেকেও রিপোর্ট নেওয়া হয়। দ্রুত বৈঠক করেন জেলাশাসক, নদিয়া জেলা আইনি পরিষেবা কতৃপক্ষের সচিব, জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ও পুলিশ সুপার। সব দিক খতিয়ে দেখে বোর্ডের তরফ থেকে নাবালিকাকে ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও টাকা পায়নি ওই অ্যাসিড-আক্রান্ত কিশোরী।

মেয়েকে বাঁচাতে গিয়ে অ্যাসিডে দেহের কিছু অংশ পুড়েছিল বাবারও। তিনি বলেন, “মেয়ের চিকিৎসায় এখনও পর্যন্ত প্রায় তিন লক্ষ টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। প্রচুর দেনা হয়ে গিয়েছে। সরকারের থেকে কোনও টাকা পাইনি। এখনও অনেক চিকিৎসা বাকি। করাতে পারছি না।’’

নদিয়া জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষ সূত্রের খবর, বিগত দু’বছরে ওই কিশোরীর মতো আরও সাত জন অ্যাসিড আক্রান্ত ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি। ক্ষতিপূরণ পায়নি ‘পকসো’ মামলার ১৮ জন শিশু ও কিশোরী, যৌন নির্যাতনের শিকার এক কিশোরী, আঘাতজনিত ক্ষতিপূরণ পাননি আরও দু’জন।

আরও পড়ুন
Advertisement