BJP

‘দলবদলু’ পার্থসারথী নিয়েও চর্চা

পার্থসারথীকে কি পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারছেন বিজেপির নেতাকর্মীরা?

Advertisement
সম্রাট চন্দ
রানাঘাট শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০২১ ০৫:১৫
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

এর পরে আরও কেউ? নাকি বিধায়কের দলবদল ঠেকাতে পারবে বিজেপি? বিশেষ করে দলবদলু বিধায়কের? শুক্রবার মুকুল রায় তৃণমূলে ফেরার পর বেশি করে এই প্রশ্নটাই ঘুরছে নদিয়ার রাজনৈতিক মহলে। চলছে জল্পনাও। তবে সে সবই উড়িয়ে দিচ্ছেন বিজেপি নেতৃত্ব।

বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্র থেকে সদ্য বিধানসভায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু এই জেলার সঙ্গে তাঁর রাজনৈতিক যোগ বহু পুরনো। তৃণমূলে থাকার সময়ে দীর্ঘদিন নদিয়ার সংগঠন দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন তিনি। কাজেই এখানে তাঁর অনুগামী না হোক, যোগসূত্র ছড়ানো। নির্বাচনের মুখে জেলায় তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যাওয়ার স্রোত বেশি ছিল জেলার দক্ষিণে। আরও নির্দিষ্ট করে বললে রানাঘাট মহকুমায়। মুকুলের পুরনো দলে ফেরার পর এই স্রোত আবার উল্টো মুখে বইতে শুরু করবে কি না সেই প্রশ্নও উঠছে।

Advertisement

নদিয়ায় তৃণমূলের দুই দলবদলু নেতাকে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। কৃষ্ণনগরে মুকুল বাদে রানাঘাট উত্তর পশ্চিমে পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায়। জিতেছেন দু’জনই। মুকুল তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছিলেন বছর চারেক আগে, পার্থসারথী ভোটের ঠিক আগেই জানুয়ারিতে। তাঁর প্রার্থিপদ নিয়ে বিজেপির অন্দরে বিস্তর ঝামেলা-বিক্ষোভ হয়েছে। শেষ পর্যন্ত তিনি জিতেছেন। এখন তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়েও জল্পনা শুরু হয়েছে।

২০০৯ সালে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে গিয়েছিলেন পার্থসারথী, ২০১১ সালে রানাঘাট উত্তর পশ্চিম কেন্দ্র থেকেই বিধায়ক হন। ২০১৬ সালের ভোটে অবশ্য হেরে যান তিনি। ২০২০ সালের মে পর্যন্ত টানা ২৫ বছর ছিলেন রানাঘাটের পুরপ্রধান। এর মধ্যে ১৫ বছর কংগ্রেসের, শেষ ১০ বছর তৃণমূলের। ২০২০ সালের মে মাসে মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে ছিলেন পুর প্রশাসক পদে। এই বছরের গোড়াতেই তৃণমূলের দলীয় পদ থেকে সরানো হয় তাঁকে। আর তার পরেই তিনি পুর প্রশাসক পদ থেকে ইস্তফা দেন। এবং দিন কয়েকের মধ্যেই প্রাক্তন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ আরও কয়েক জনের সঙ্গে চার্টার্ড বিমানে দিল্লি গিয়ে অমিত শাহের কাছে যোগদানের কথা জানান।

পার্থ বিজেপিতে যাওয়ার অনেক আগেই অবশ্য রানাঘাট মহকুমায় তাঁর ঘনিষ্ঠদের অনেকে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। বিধায়ক হওয়ার পরেও বিজেপির একাধিক কর্মসূচিতে অবশ্য নিয়মিত দেখা যাচ্ছে তাঁকে। দলীয় কর্মীরা আক্রান্ত হলে গিয়েছেন, তোপ দেগেছেন নিজের পুরনো দলের বিরুদ্ধে। তবুও গেরুয়া শিবিরে মুকুল ঝরে যাওয়ার পরে আর এক প্রাক্তন তৃণমূল হিসাবে তাঁর নামও চর্চায় আসছেই।

পার্থসারথী অবশ্য দাবি করছেন, “মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করব না। মুকুল রায়কে দেখে তো আমি বিজেপিতে আসিনি। তাহলে ২০১৭ সালেই আসতাম। ২০১৭ থেকেই তৃণমূলের মধ্যে কোন্দলের কারণে খারাপ সময় কাটিয়েছি। তখনই যেতে পারতাম। আজ তা হলে এ সব কথা উঠছে কেন?” তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের একাংশের দাবি, বিজেপিতে এসে এখনও অসম্মানিত হননি। যাদের জন্য দলত্যাগ, তৃণমূলে এখনও তারাই ক্ষমতায়। কাজেই ফেরার প্রশ্ন নেই।

জেলা তৃণমূলের অন্যতম কো-অর্ডিনেটর তথা জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি দীপক বসু অবশ্য দাবি করছেন, “মুকুল রায় পথ দেখালেন। এর পরে শুধু এই জেলা নয়, গোটা রাজ্যেই বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে আসার স্রোত দেখা যাবে। তবে বিধায়কদের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেবেন আমাদের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব।”

এই পরিস্থিতিতে পার্থসারথীকে কি পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারছেন বিজেপির নেতাকর্মীরা?

রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার বলছেন, “উনি এক জন ভদ্রলোক, সম্ভ্রান্ত পরিবারের। মানুষের সঙ্গে বেইমানি করবেন না, এই বিশ্বাস আমাদের আছে। আমাদের দল অটুট থাকবে, সবাই মুকুল রায়ের মত বেইমান নয়।”

আরও পড়ুন
Advertisement