Child death

হাসপাতালে নেই শিশুদের ভেন্টিলেটর, এক সপ্তাহে শ্বাসকষ্টে ৬  শিশুর মৃত্যু জেএনএমে

শিশুরা প্রত্যেকেই একেবারে শেষ পর্যায়ে হাসপাতালে এসেছিল বলে তাদের দেহে অ্যাডিনোভাইরাস ছিল কিনা, তা পরীক্ষা করার সময় পাওয়া যায়নি বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর।

Advertisement
 অমিত মণ্ডল, সুস্মিত হালদার
শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০২৩ ০৬:৫৫
পর্যাপ্ত ভেন্টিলেশনের অভাবে শিশু মৃত্যু।

পর্যাপ্ত ভেন্টিলেশনের অভাবে শিশু মৃত্যু। প্রতীকী চিত্র।

প্রবল শ্বাসকষ্টে ভোগা শিশুদের চিকিৎসার জন্য কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন অভিভাবকেরা। কিন্তু মেডিক্যাল কলেজ স্তরের এই ‘সর্বোচ্চ পরিকাঠামোযুক্ত’ হাসপাতালে শিশুদের ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা করা যায়নি। কারণ, এখনও পর্যন্ত জেএনএমে শিশুদের কোনও ভেন্টিলেটরই নেই।

যার পরিণতি, গত সপ্তাহে সোম থেকে রবিবারের মধ্যে জেএনএমে শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হওয়া ৬ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালের সুপার চঞ্চলকুমার দলাই বলেন, ‘‘৬ শিশুর মৃত্যুর খবর স্বাস্থ্যভবনে জানানো হয়েছে। ভেন্টিলেটরের অভাবের কথাও জানিয়েছি।” তবে ওই শিশুরা প্রত্যেকেই একেবারে শেষ পর্যায়ে হাসপাতালে এসেছিল বলে তাদের দেহে অ্যাডিনোভাইরাস ছিল কিনা, তা পরীক্ষা করার সময় পাওয়া যায়নি বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর।

Advertisement

নদিয়া জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জ্যোতিষচন্দ্র দাসের দাবি, “জেলায় এখনও পর্যন্ত অ্যাডিনোভাইরাস বা আরএসভিতে কোনও শিশুর মৃত্যু হয়নি।”

জেএনএম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, মৃত শিশুদের এক জনের শ্বাসকষ্টের সঙ্গে মেনিনজাইটিস হয়েছিল। এক জনকে জেলা হাসপাতাল থেকে স্থানান্তর করা হয়েছিল। বাকি চার জনের প্রবল নিউমোনিয়া ছিল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এখন প্রধান চিন্তার কারণ, শিশুদের ভেন্টিলেটর।

একটি মেডিক্যাল কলেজে কেন শিশুদের ভেন্টিলেশনের কোনও ব্যবস্থা নেই? উত্তর মেলেনি। তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যভবন থেকে দ্রুত এই ব্যবস্থা চালুর আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, গত প্রায় দু’বছর ধরে এখানে ১০ শয্যার পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট ভেন্টিলেটর ও অন্য বেশ কয়েকটি যন্ত্রের অভাবে চালু করা যাচ্ছে না। এখন শ্বাসকষ্ট নিয়ে শিশু এলে তাকে রেফার করতে চিকিৎসকেরা বাধ্য হচ্ছেন। ফলে সময়মতো চিকিৎসা না পেয়ে অনেক শিশুর অবস্থা রাস্তাতেই চূড়ান্ত খারাপ হচ্ছে।

জেএনএমে আসা যে শিশুদের অবস্থা খুবই খারাপ হচ্ছে, তাদের কফের নমুনা বেলেঘাটার নাইসেডে পাঠানো হচ্ছে। বুধবারও বেশ কিছু শিশুর নমুনা নাইসেডে পাঠানো হচ্ছে। হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ মঞ্জরী বসু বলেন, “নাইসেডে বেশ কিছু শিশুর নমুনা আগেও পাঠানো হয়েছিল। তাদের অনেকেই অ্যাডিনোভাইরাস আক্রান্ত। আবার কেউ-কেউ ফ্লু ভাইরাস আক্রান্ত। সকলেরই বয়স পাঁচ বছরের নীচে।”

জেএনএমে প্রতিদিন জ্বর, ঠাণ্ডালাগা, কাশি, শ্বাসকষ্ট নিয়ে গড়ে ১৫ থেকে ২০ শিশু ভর্তি হচ্ছে। অধিকাংশেরই বয়স পাঁচ বছরের নীচে। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, শুধু অ্যাডিনোভাইরাস নয়, পাশাপাশি আরএসভি, ইনফ্লুয়েঞ্জা ও প্যারা-ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস ক্রমশই উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠছে। এমন বহু শিশু আসছে যাদের ক্ষেত্রেই উপসর্গগুলি মিলে যাচ্ছে।

জেলা হাসপাতালের এক শিশু বিশেষজ্ঞ বলছেন, গত সপ্তাহে তাঁর বর্হিবিভাগের দিন প্রায় ৩৫৮ জন শিশু এসেছিল। যাদের মধ্যে ২৭০ জনের অ্যাডিনোভাইরাসের উপসর্গ ছিল। তিনি বলছেন, “ভর্তির জন্য দিনে প্রায় দেড়শো শিশু আসছে। যাদের মধ্যে পাঁচ শতাংশকে কিছু দিন নজরদারিতে রেখে ছেড়ে দিচ্ছি। কিন্তু পাঁচ শতাংশকে ভর্তি রাখতে হচ্ছে। এদের অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ এবং বাড়িতে রেখে কোনও ভাবেই চিকিৎসা করা সম্ভব নয়।”

আরও পড়ুন
Advertisement