অভিযানের জন্য রুম্পা দাস ও অসীমকুমার মণ্ডলকে শুভেচ্ছা এভারেস্টজয়ী বসন্ত সিংহ রায়ের। —নিজস্ব চিত্র।
প্রথম বার করোনার কারণে তাঁর স্বপ্নপূরণ হয়নি। এভারেস্ট জয় করতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় শৃঙ্গ জয় না করে মাঝপথেই ফিরতে হয়েছিল। কাঠমান্ডুর হাসপাতালে চলেছিল যমে-মানুষে টানাটানি। কিন্তু তার পরেও স্বপ্ন থামেনি। রুম্পা দাস ঠিক করেছেন, এ বার এভারেস্টের চূড়ায় পতাকা তুলে তবেই ফিরবেন। এমনই প্রত্যয় তাঁর কণ্ঠে। আর তাই এভারেস্ট শৃঙ্গ জয় করে ফেরা ছাড়া অন্য কিছুই ভাবছেন না তিনি।
২০২১ সালে কৃষ্ণনগরের ‘ম্যাক’-এর (মাউন্টেনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ কৃষ্ণনগর) হয়ে এভারেস্ট অভিযানে শামিল হন রুম্পা। দীর্ঘ প্রশিক্ষণ আর অভিজ্ঞতাকে সম্বল করে সে বার অভিযান শুরু করলেও শেষ করতে পারেননি। মাঝপথেই রুম্পার শুরু হয়েছিল শ্বাসকষ্ট। রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কমতে কমতে ৪২-এ নেমে আসে। দ্বিতীয় বেস ক্যাম্প থেকে তাঁকে নামিয়ে আনতে হয়। নেপালের কাঠমান্ডুর হাসপাতালে চলে চিকিৎসা। পরীক্ষায় ধরা পড়ে, করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন রুম্পা। সে বার শৃঙ্গজয় না করেই ফিরতে হয় তাঁকে।
তবে মনের জোর হারাননি। আবার নতুন ভাবে নিজেকে তৈরি করতে থাকেন। শারীরিক সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য আরও জোরকদমে চলে প্রশিক্ষণ। ঠিক হয়, আবার এভারেস্ট অভিযানে যাবেন রুম্পারা। এ বার তাঁর সঙ্গী হয়েছেন কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা ম্যাকের সদস্য অসীমকুমার মণ্ডল। আগামী ৩১ মার্চ তাঁরা হাওড়া স্টেশন থেকে মিথিলা এক্সপ্রেসে রওনা হবেন।
অভিযানের এত টাকা আসবে কোথা থেকে? রুম্পা জানাচ্ছেন, গত বার ঋণ করে, স্বামী-স্ত্রীর সঞ্চয় ভেঙে প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা একত্রিত করে ওই খরচ জোগাড়় করা হয়েছিল। এ বারে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা বাজেট দিয়েছে সংশ্লিষ্ট সংস্থা। গত বারের ধাক্কাই এখনও শামাল দেওয়া যায়নি। তবে এবারেও এগিয়ে এসেছেন তাঁর স্বামী সুমন বসু। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, বাড়ি বন্ধক দিয়ে রুম্পার এভারেস্ট অভিযানের খরচ জোগাবেন।
জানা গেল, ওই মানুষটার হাত ধরেই রুম্পার পাহাড়কে ভালবাসা। সুমন নিজেও পর্বত অভিযানে যান। বিয়ের পর স্ত্রী রুম্পাকে নিয়ে গিয়েছিলেন সান্দাকফু ট্রেকিং-এ। ২০১৫ সালে সুমনের সঙ্গে ম্যাক থেকেই রক ক্লাইম্বিং-এর প্রশিক্ষণ নেন রুম্পা। ওই বছরই ৬১৫৩ মিটার উচ্চতার মাউন্ট স্টক কাংড়ি, ২০১৬ সালে ৬৮৬৪ মিটার উচ্চতার চ্যাংব্যাং, ২০১৭ সালে দুটো পর্বত অভিযান করেন ত্রিশুল-১ (৭১২০ মিটার) ও ব্লাক পিক (৬৩৮৭মিটার)। আবার, ২০১৮ সালে সাসের কাংড়ি (৭৪১৬মিটার) ও গ্যাংস্ট্যাং (৬১৬২ মিটার) এবং ২০১৯ সালে দেবাচেন (৬২৬৫মিটার) অভিযান।
কিন্তু এত টাকা দেনা। তার উপর বাড়িও বন্ধক দিতে হল। নিঃস্ব হয়ে যাবেন না? জবাবে সুমন বলেন, “নিজেকে নিঃস্ব করে না চাইলে যে কোনও কিছুই জয় করা যায় না।” কুপার্স কলোনি হাইস্কুলের ইংরেজির শিক্ষিকা রুম্পা। তিনি বলেন, “গত বারই জয় করেই ফিরতাম। করোনা আটকাল। এ বার আর কোনও প্রতিবন্ধকতাই আমায় আটকে রাখতে পারবে না। এভারেস্ট জয় আমি করবই।”
ম্যাকের সদস্যেরা তাকিয়ে আছেন আরও এক জনের দিকে। তিনি গ্রাম পঞ্চায়েত কর্মী অসীমকুমার মণ্ডল। বর্তমানে তিনি সংস্থার সম্পাদক। দীর্ঘ দিন ধরে পর্বতারোহণের সঙ্গে যুক্ত। ম্যাকের হয়ে একের পর এক শৃঙ্গ জয় করেছেন। প্রথম অসামরিক ক্ষেত্রে এভারেস্ট জয়ী বসন্ত সিংহ রায় এ বার আর সঙ্গে নেই। অভিজ্ঞ পর্বতারোহী অসীমকুমার মণ্ডলের হাতেই অভিযানের ভার দিয়েছে ম্যাক। অসীম বলছেন, “রুম্পাকে দেখে আমরাই অনুপ্রাণিত হই। এই অভিযান এক বাঙালি মেয়ের অদম্য লড়াইয়ের কাহিনি হয়ে লেখা থাকবে। আমরা জয় করেই ফিরব।”