Congress

অধীর-ঘনিষ্ঠ কংগ্রেস কাউন্সিলরের বাড়ি ভাঙার নির্দেশ প্রশাসনের! সরকারি জমি দখলের অভিযোগ

সরকারি খাস জমি দখল করে বসবাস করার অভিযোগে বৃহস্পতিবার তাঁর বাড়ি ভাঙার নির্দেশ এসেছে প্রশাসনের তরফে। মহকুমাশাসক এই নির্দেশ জারি করেছেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১২ মে ২০২৩ ২১:৫৩
Row over direction to demolition of Congress councillor’s house in Berhampore

কিছু দিন আগে বহরমপুর পুরসভার হকার পুনর্বাসন প্রকল্পের অধীনে একটি নির্মীয়মাণ বাজারের নির্মাণ কাজ আটকে দেন এই হীরু। —নিজস্ব চিত্র।

কংগ্রেস কাউন্সিলরের বাড়ি ভাঙার নোটিস জারি করল প্রশাসন। আর তারপরই মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপান-উতোর। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী-ঘনিষ্ঠ কাউন্সিলরের অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশতঃ এই কাজ করছে রাজ্যের শাসকদল। অন্য দিকে, তৃণমূলের দাবি, প্রশাসন প্রশাসনের কাজ করছে। এতে দলীয় রাজনীতি নেই।

বহরমপুর পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর হীরু হালদারের বাড়ি কুঞ্জুঘাটা এলাকায়। সরকারি খাস জমি দখল করে বসবাস করার অভিযোগে বৃহস্পতিবার তাঁর বাড়ি ভাঙার নির্দেশ এসেছে প্রশাসনের তরফে। মহকুমাশাসক এই নির্দেশ জারি করেছেন। আগামী ২৯ মে-এর মধ্যে হীরুকে মহাকুমাশাসকের দফতরে প্রয়োজনীয় নথি জমা দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, বহরমপুর পুরসভার চেয়ারম্যান নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায় এবং ভাইস চেয়ারম্যান স্বরূপ সাহার অভিযোগের প্রেক্ষিতেই এই নির্দেশ এসেছে। যদিও সরকারি সিদ্ধান্তের পিছনে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা রয়েছে বলে অভিযোগ করছেন হীরু।

Advertisement

কিছু দিন আগে বহরমপুর পুরসভার হকার পুনর্বাসন প্রকল্পের অধীনে একটি নির্মীয়মাণ বাজারের নির্মাণ কাজ আটকে দেন এই হীরু। সেখান থেকে পুরসভার সঙ্গে কাউন্সিলরের দ্বৈরথ চরমে ওঠে। বিরোধী শিবিরে থেকেও এলাকায় যথেষ্ট প্রভাবশালী হীরু। আদতে মুর্শিদাবাদের নবগ্রামের বাসিন্দা হীরু ২০০৬ সাল নাগাদ মুর্শিদাবাদের কাশিমবাজার স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় সব্জির ব্যবসা শুরু করেন। সেখান থেকে পরিচয় অধীর-ঘনিষ্ঠ কংগ্রেস নেতা নারায়ণ মাহাতোর সাথে। নারায়ণের হাত ধরে বহরমপুরের রাজনৈতিক বৃত্তে প্রবেশ হীরুর। মূলত নারায়ণের মধ্যস্থতায় ২০০৮ সালে ‘বিতর্কিত’ সাড়ে ৮ কাঠা জমির স্বত্ব কেনেন হীরু। খুব অল্প দিনে যুব কংগ্রেসের অন্যতম মুখ হয়ে ওঠেন তিনি। জমি ব্যবসায় হাত পাকিয়ে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক হীরু ২০০৮ সাল থেকেই ঠিকাদারি ব্যবসা শুরু করেন। ২০০৮ সালে তাঁকে পুরসভা ভোটের টিকিট দেয় কংগ্রেস। বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে কাউন্সিলর হন তিনি।

যদিও এই কংগ্রেস কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে খুন, খুনের চেষ্টা, আর্থিক প্রতারণার মতো অভিযোগে ফৌজদারি মামলা চলছে আদালতে। বিরোধী রাজনৈতিক দলে থেকেও ‘প্রভাবশালী’ হীরুর দখলে থাকা জমি নিয়ে খুব একটা উদ্যোগী হতে দেখা যায়নি শাসকদল পরিচালিত পুর বোর্ডকে। তবে বৃহস্পতিবারের সরকারি নির্দেশের পর পুরসভার বর্তমান চেয়ারম্যানের সঙ্গে হীরুর দ্বন্দ্বকেই নির্দেশের অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন জেলার রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা। তাঁর বাড়ি ভাঙার নির্দেশ প্রসঙ্গে হীরু বলেন, ‘‘অনেক চেষ্টা করেও হীরুকে বাগে আনতে পারেনি ওরা। তাই রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করে আমার বাড়ির মাথার ছাদ কেড়ে নিতে চাইছে।’’ তাঁর সংযুক্তি, ‘‘আমি ছাড়া আরও কয়েক হাজার পরিবার ওই জায়গায় আছে। আমার জন্য যেন তাঁদের উপরে কোন প্রতিহিংসা মূলক আচরণ না হয়।’’ অন্য দিকে, পুরসভার চেয়ারম্যান নাড়ুগোপাল বলেন, ‘‘ব্যক্তি মানুষ নিয়ে আলোচনা করি না। আমরা আইনের পক্ষে। কেউ নিজের প্রভাব খাটিয়ে সরকারি জমি অন্যায় ভাবে ভোগ দখল করবে আর পুরসভা সেখানে নীরব দর্শক থাকবে, তা হতে পারে না।’’ এই বিতর্ক এবং কংগ্রেস কাউন্সিলরের বাড়ি ভাঙার নির্দেশ প্রসঙ্গে বহরমপুর মহকুমাশাসক প্রভাত চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের যেখানে বাড়িটি রয়েছে, তা সেচ দফতরের আয়ত্ত্বাধীন জমি।’’ এই পুরো ঘটনায় বহরমপুরে রাজনৈতিক শোরগোল তুঙ্গে।

আরও পড়ুন
Advertisement