বিষবৃত্ত/ ২
R G Kar Hospital Incident

ফিরোজদের মদতেই অখিলের বাড়বাড়ন্ত?

ঘটনাচক্রে, ওই ২০২০ সালেই টিএমসিপি-র শাখা সংগঠন হিসাবে তৈরি হয়েছিল ‘মেডিক্যাল সেল’। তার সভাপতি হন টিএমসিপি-র বর্তমান রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য।

Advertisement
সুস্মিত হালদার
কল্যাণী  শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৭:৪২
স-বধূ অভীক দে-র (সবুজ পাঞ্জাবি-শাড়িতে) সঙ্গে (বাঁ দিক থেকে) জেএনএমের তদানীন্তন অধ্যক্ষ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়, প্রাক্তন ছাত্র শুভঙ্কর ঘোষ ও ফিরোজ ই আব্বাস,

স-বধূ অভীক দে-র (সবুজ পাঞ্জাবি-শাড়িতে) সঙ্গে (বাঁ দিক থেকে) জেএনএমের তদানীন্তন অধ্যক্ষ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়, প্রাক্তন ছাত্র শুভঙ্কর ঘোষ ও ফিরোজ ই আব্বাস, আরজি করের সিনিয়র রেসি়ডেন্ট (রেডিয়োথেরাপি) সৌরভ পাল এবং শেখ মহম্মদ অখিল। ছবিটি জেএনএম হাসপাতাল সূত্রে প্রাপ্ত।

আরজি কর কাণ্ডের জেরে সাসপেন্ড হওয়া অভীক দে-র বিয়ে সংক্রান্ত অনুষ্ঠানে ভোজের টেবিলে আরও কয়েক জন ঘনিষ্ঠের সঙ্গে দেখা গিয়েছিল নদিয়া জেলার এক সরকারি চিকিৎসককেও। তিনি কল্যাণী জেএনএমের প্রাক্তনী ফিরোজ ই আব্বাস। সহপাঠী শুভঙ্কর ঘোষের মতো তিনিও ওই মেডিক্যাল কলেজে ‘প্রবল প্রভাবশালী’ ছিলেন বলে সূত্রের দাবি।

Advertisement

২০২০ সালে জেএনএম থেকে এমবিবিএস পাশ করার পরে ধুবুলিয়া গ্রামীণ হাসপাতালে ‘মেডিক্যাল অফিসার’ হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন আদতে পলাশিপাড়ার বাসিন্দা ফিরোজ। মাস দুয়েক আগে তিনি কৃষ্ণগঞ্জ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য আধিকারিক (বিএমওএইচ) হয়েছেন। তবে সেই পদের চেয়ে জেএনএম নিয়েই তাঁর বেশি উৎসাহ বলে সহকর্মী ও জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীদের একাংশের দাবি। তাঁদের মতে, পুরোদস্তুর সরকারি চিকিৎসক হয়ে গেলেও ফিরোজের ‘ছাত্রনেতা’ তকমা এখনও কার্যত ঘোচেনি।

ঘটনাচক্রে, ওই ২০২০ সালেই টিএমসিপি-র শাখা সংগঠন হিসাবে তৈরি হয়েছিল ‘মেডিক্যাল সেল’। তার সভাপতি হন টিএমসিপি-র বর্তমান রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য। মুখ্য আহ্বায়ক অভীক দে। সম্পাদক ফিরোজ ই আব্বাস। অন্যতম সাধারণ সম্পাদক জেএনএমে তাঁরই সহপাঠী, বর্তমানে হুগলির তারকেশ্বর গ্রামীণ হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার শুভঙ্কর ঘোষ। সংগঠনের তরফে এই শেষোক্ত দু’জনই জেএনএমে সংগঠনের দায়িত্বে আছেন।

জেএনএম সূত্রের দাবি, এই সংগঠন করতে গিয়েই অভীক দে-র আস্থাভাজন হয়ে উঠেছিলেন ফিরোজ-শুভঙ্করেরা। আবার তাঁদের উত্তরসূরি হিসাবে উঠে আসতে শুরু করে শেখ অখিল ও সালমান হালদারদের নাম। সেই অখিল, জেএনএম হাসপাতাল সুপারের ঘরে টেবিল চাপড়ে যাঁকে এক বর্ষীয়ান আইনজীবীকে শাসাতে দেখা গিয়েছিল। সেই অখিল, স্নাতকোত্তর স্তরের ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও নামের আগে ‘এমডি’ লিখে রোগী দেখার অভিযোগ উঠেছিল যাঁর বিরুদ্ধে।

মেডিক্যাল সেল তৈরি হওয়ার আগেই অবশ্য, ২০১৮ সালে জেএনএমে ‘স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার কমিটি’ তৈরি হলে প্রথম সভাপতি হন ফিরোজ। পরের বছর সেই কুর্সিতে বসেন শুভঙ্কর। তার পরের বছর শেখ মহম্মদ অখিল। তার পরে অর্থাৎ ২০২১ সালে সালমান হালদার। তখন বলা হত অখিল-সালমান জুটি। যদিও তার পরের বছর কোভিডের সময় অখিলের সঙ্গে সালমানের সম্পর্কে ফাটল ধরে। ২০২২ সালে সভাপতি হন অখিলের একান্ত অনুগত আলিম বিশ্বাস। বর্তমান সভাপতি বিচিত্রকান্তি বালাও অখিল-অনুগামী বলেই পরিচিত।

অর্থাৎ ‘উত্তরবঙ্গ লবি’-র বিশ্বস্ত নেতা অভীক দে-র অনুগামীরাই এই মেডিক্যাল কলেজে রাজপাট চালিয়ে আসছে। জেএনএম সূত্রের দাবি, এঁরা এতটাই ক্ষমতাশালী যে কর্তাব্যক্তিরাও সমঝে চলেন। ‘থ্রেট সিন্ডিকেট’ তো চলতই, সুপার পদমর্যাদার চিকিৎসকও যখন-তখন বদলি হয়ে যাওয়ার ভয়ে থাকতেন। অধ্যাপক-চিকিৎসকদের একাংশের দাবি, সদ্য অপসারিত অধ্যক্ষ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় এবং দুই পিজিটি ছাত্র শেখ অখিল ও আলিম বিশ্বাসকে সামনে রেখে ফিরোজ-শুভঙ্কর জুটিই যাবতীয় প্রশাসনিক বিষয়, ছাত্র ভর্তি এমনকী পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ও নিয়ন্ত্রণ করত।

যদিও যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে শনিবার ফিরোজ দাবি করেন,“অভীক দে আমাদের সংগঠনের নেতা। ফলে তাঁর সঙ্গে একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল ঠিকই, তবে কোনও দিন কোনও অনৈতিক কাজের সঙ্গে আমি নিজেকে জড়াইনি।” অখিল-আলিমরা আগাগোড়াই সব অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছেন। এ দিন অভীক দে-কে ফোন করা হলেও তিনি তা ধরেননি, মেসেজের জবাবও তিনি দেননি। ফলে এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি।

(চলবে)

আরও পড়ুন
Advertisement