প্রতীকী ছবি।
ফটাস, ফটাস, ফটাস...
সাতসকালে পরপর গুলির শব্দ পেয়ে ছুটে এসেছিলেন আশপাশের বাড়ির কয়েক জন।
গত রবিবারের ঘটনা, যে দিন নাকাশিপাড়ার পাটিকাবাড়ি পঞ্চায়েত এলাকায় ডোবপাড়া গ্রামের রাস্তায় তেঁতুল দফাদার ও মহিউদ্দিন দফাদার খুন হন। যাঁরা ছুটে এসেছিলেন তাঁদেরই কয়েক জন পিছু ধাওয়া করে আকছার আলি সেখকে ধরে ফেলেন বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি। ধনঞ্জয়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ধাপারিয়া গ্রাম থেকে এই আকছারের সঙ্গে তারই মোটরবাইকে তেঁতুলরা সেখানে এসেছিলেন। সেই ঘটনার পরে ছ’দিন পার হয়ে গিয়েছে। আকছারকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে তদন্ত করেও পুলিশ আর কাউকে ধরতে পারেনি।
পুলিশ একটি বিষয়ে নিশ্চিত। তা হল, এই খুন কারও একার কাজ নয়। এমনকি আকছার সরাসরি খুন করেছে কি না, তা নিয়েও পুলিশের একাংশের সন্দেহ আছে। সে ক্ষেত্রে, আর কারা সে দিন ঘটনাস্থলে ছিল? আকছার ধরা পড়লেও তারা পালাল কী ভাবে?
নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ডোবপাড়ার বেশ কয়েক জন বাসিন্দা শনিবার দাবি করেন, গুলির শব্দ শুনে ছুটে বাড়ি থেকে বেরিয়েও তাঁরা পথে থমকে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। কী ঘটছে তা ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলেন না। সেই সময়েই ঘটনাস্থলের দিক থেকে কয়েকটি বাইকে বেশ কয়েক জন দ্রুত গতিতে তাঁদের সামনে দিয়ে চলে যায়। তাঁরা এগিয়ে দেখেন, ইটপাতা রাস্তার উপরেই এক জন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে (মহিউদ্দিন)। আর একটু সামনে রাস্তার পাশে পাট খেতে পড়ে রয়েছে আরও এক জন (তেঁতুল)। দেখেই আন্দাজ করা যাচ্ছিল যে তাদের গুলি করে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের ধারণা, খুনের সময়ে ঘটনাস্থলে অন্তত দশ-বারো জন ছিল। তাদের বেশির ভাগ বাইকে চেপে পালিয়ে যায়। কয়েক জন পাট খেত দিয়েও পালিয়ে থাকতে পারে। এক জনকে মাঠের মধ্যে দিয়ে ছুটতে দেখে গ্রামবাসীরা কয়েক জন ধাওয়া করে ধরে ফেলেন, সেটাই আকছার। বাকি যারা পালাল, তাদের কি কেউ মুখচেনা? নিজেদের ‘প্রত্যক্ষদর্শী’ বলে যাঁরা দাবি করছেন, তাঁরা কাউকেই চিনতে পেরেছেন বলে জানাননি। তবে স্থানীয় একটি সূত্রের খবর, বহিরাগত লোকজন হাজির থাকলেও ধাপারিয়া বা তার আশপাশের এলাকার কেউ খুনে জড়িত থাকতে পারে।
ধাপারিয়ার একাধিক সূত্রের খবর, খুনের পর থেকে দফাদারপাড়া তো বটেই, পাশের পাড়ারও কয়েক জন বাড়িছাড়া। তারা আবার তেঁতুল ও মহিউদ্দিনের ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। তবে তারা সরাসরি এই খুনের সঙ্গে জড়িত আছে কি না তা এখনও স্পষ্ট নয়। এ দিন পর্যন্ত পুলিশ তাদের নাগাল পায়নি।
নাকাশিপাড়া থানা সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে আকছারকে ঘটনাস্থলে নিয়ে গিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। অথচ পুলিশ দাবি করে চলেছে, জেরায় তার মুখ থেকে কোনও কথাই বার করা যাচ্ছে না। তার মাওবাদী যোগাযোগের কথা অস্বীকার করলেও কী কারণে সে এই ঘটনায় জড়াল, তার কোনও যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যাও পুলিশের থেকে মেলেনি।