প্রতীকী ছবি।
বাম বনাম কংগ্রেসের লড়াই দীর্ঘদিন দেখে এসেছে শান্তিপুর। তবে নয়ের দশকের গোড়ার দিক থেকেই শান্তিপুরে আধিপত্য ছিল কংগ্রেসের। এক সময়ে বামেদের তরফে শান্তিপুরে প্রার্থী দিয়ে এসেছে আরসিপিআই। তাদের বিমলানন্দ মুখোপাধ্যায় রাজ্যে বাম সরকারের মন্ত্রীও ছিলেন। নয়ের দশক থেকে অবশ্য জয় অধরা রয়ে গিয়েছে বামেদের। মাঝে ২০০৬ সালে এবং ২০১৪ সালের উপনির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছিল সিপিএম। তবে হারতে হয়। ২০০১ সালে আরসিপিআই প্রার্থী থাকার পরেও নির্দল প্রার্থী দাড় করানোর অভিযোগও উঠেছে বড় শরিকের বিরুদ্ধে।
কংগ্রেসের সঙ্গে টানা লড়াইয়ে হারতে হলেও ২০১৬ সালে বাম-কংগ্রেস জোটের হাত ধরে শান্তিপুরে প্রার্থী দেয় কংগ্রেস। জয় পেলেও সেই কংগ্রেস বিধায়ক অবশ্য পরে তৃণমূল হয়ে পাড়ি দেন বিজেপিতে। চার মাস আগের নির্বাচনেও মোর্চার তরফে শান্তিপুরে প্রার্থী ছিল কংগ্রেসের। তবে তা নিয়েও আগে সিপিএমের সঙ্গে টানাপড়েন স্পষ্ট ছিল। আগে দেওয়াল লিখনও শুরু করে দেয় সিপিএম। পরে জোটের সমঝোতায় তারা পিছু হটে। প্রার্থী দেয় কংগ্রেস। বেশ কিছু দিন বাদে এ বারে বিধানসভার লড়াইয়ে ফের সম্মুখ সমরে বাম ও কংগ্রেস। বামেদের তরফে প্রার্থী দিয়েছে সিপিএম।
সম্প্রতি প্রয়াত অজয় দে নয়ের দশকের গোড়ার দিকে বিধায়ক হওয়ার পর থেকেই শান্তিপুরে টানা দীর্ঘদিন জিতেছেন কংগ্রেস প্রার্থী হিসাবে। তিনি তৃণমূলে চলে যাওয়ার পর থেকেই শান্তিপুরে ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু হয়েছে কংগ্রেস। বারবার দলবদলের ধাক্কায় কমেছে সাংগঠনিক শক্তিও। ২০১১ সালে কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের তরফে শান্তিপুরে জয়ী হন কংগ্রেসের অজয় দে। ২০১৩ সালে তিনি দলত্যাগের পরে ইস্তফা দেন। ২০১৪ সালের উপনির্বাচনে বামেদের তরফে প্রার্থী দেয় সিপিএম। সিপিএমের সঙ্গেই তৃণমূলের লড়াই হয়। কংগ্রেস প্রার্থী থাকলেও তাদের ঠাঁই হয় তৃতীয় স্থানে। আরও পিছনে ছিল বিজেপি।
আবার ২০১৬ সালে বাম কংগ্রস জোটের তরফে শান্তিপুরে প্রার্থী দেয় কংগ্রেস। সেবারে জয়ী হয় তারা। প্রাপ্ত ভোট ছিল প্রায় ৫১.৭৬ শতাংশ। আবার দু’বছর আগের লোকসভা নির্বাচনে আলাদা লড়াই করে বাম ও কংগ্রেস। সে বারে কংগ্রেসের ভোট নেমে আসে ১.৬৬ শতাংশ এবং সিপিএমের ৫.৫৫ শতাংশে। প্রবল উত্থান হয় বিজেপির। মাস চারেক আগের বিধানসভা ভোটে মোর্চার তরফে কংগ্রেস প্রার্থী পান ৪.৪৮ শতাংশ। ওই কেন্দ্রে জেতে বিজেপি। দ্বিতীয় স্থানে তৃণমূলের অজয় দে।
কিন্তু চার মাস আগের সেই হিসেব এ বার ওলোটপালট হয়ে যেতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। দীর্ঘ সময় জয়ের থেকে দূরে থাকলেও এ বার কিন্তু বামেরা সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপাচ্ছে শান্তিপুরে। সাংগঠনিক ভাবে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে কংগ্রেস। এর আগের ভোটে দেখা গিয়েছে বাম ভোট যতটা কমেছে তত বৃদ্ধি হয়েছে বিজেপির। এ বার সেই ভোট ফিরিয়ে আনাও লড়াই বামেদের কাছে। তারা তা পারলে পাটিগণিতের হিসেবেই বিজেপির দুর্বল হওয়ার কথা। তবে বিজেপিকে তারা পিছনে ফেলে দিতে পারবে কি না, সেটা পরের প্রশ্ন।
কংগ্রেসের হাত ছেড়ে আলাদা লড়াইয়ে কী প্রভাব পড়তে পারে? সিপিএমের জেলা সম্পাদক তথা জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক সুমিত দে-র দাবি, “নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া কিছু হবে না। কারণ মানুষের সাড়া দেখে বোঝা যাচ্ছে, তৃণমূল এবং বিজেপিকে হারাতে তাঁরা বামেদের হাত ধরবেন।” তবে কংগ্রেস প্রার্থী তথা শান্তিপুর শহর কংগ্রেস সভাপতি রাজু পালের আশা, “এখানকার মানুষ আগেও বহু বার কংগ্রেসের সঙ্গে ছিলেন, তাঁদের সমর্থন কংগ্রেসের সঙ্গেই থাকবে।”