প্রতীকী ছবি।
চার দিন কেটে গেলেও পাটিকাবাড়ির ডোবপাড়ায় জোড়া খুনের কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে গ্রামবাসীরা যাকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিল, সেই আকসার সেখকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েও বুধবার রাত পর্যন্ত পুলিশ আর কাউকে ধরতে পারেনি।
বুধবার নাকাশিপাড়া থানার একটি সূত্রে দাবি করা হয়, স্থানীয় সমাজবিরোধীদের এলাকা দখলদারির জেরেই এই ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে মাওবাদী-যোগাযোগের কোনও বিষয় নেই। যদিও খুনের পরের দিন, সোমবার নিহত তেঁতুল দফাদারের স্ত্রী আমানুর বিবি দাবি করেছিলেন, বর্তমানে তৃণমূলের কর্মী তেঁতুল নকশালপন্থী কাজকর্মে যুক্ত হতে চাইছিলেন না বলেই তাঁকে খুন করা হয়েছে।
রবিবার সাতসকালে পরপর গুলির শব্দ পেয়ে ডোবপাড়ার বাসিন্দারা ছুটে গিয়ে দেখেন, রাস্তায় পড়ে রয়েছে বছর চব্বিশের মহিউদ্দিন শেখের দেহ। তাঁকে গুলি করে কোপানো হয়েছিল। পাশের পাট খেতে পড়ে ছিল তেঁতুলের দেহ। তাঁর থুতনির নীচে গুলি লেগেছিল। এখন পুলিশ বিষয়টিকে সমাজবিরোধীদের সংঘর্ষ বলে চিহ্নিত করতে চাওয়ায় এলাকায় তদন্ত নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। নিহতদের বাড়ি যেখানে, সেই ধনঞ্জয়পুর পঞ্চায়েতের ধাপারিয়া গ্রামের বাসিন্দারা বুঝে উঠতে পারছেন না, ওই দু’জন ‘সমাজবিরোধী’ কবে হলেন। বিশেষত তেঁতুল একটু ডাকাবুকো স্বভাবের হলেও মহিউদ্দিন শান্ত প্রকৃতির ছেলে বলেই এলাকায় পরিচিত। এর আগে কখনও কোনও গোলমালের ঘটনায় ওঁদের নাম জড়ায়নি।
প্রশ্ন আরও আছে।
এক, সমাজবিরোধীদের এলাকা দখলদারির জেরেই যদি এই ঘটনা ঘটে থাকে, কার সঙ্গে কার বিরোধ চলছে? পুলিশের কাছে এই বিষয়ে আগাম কী খবর ছিল? দুই পক্ষের পান্ডা কে কে? পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না কে? এই দুই পক্ষের এক জনকেও কি আগে ধরা হয়েছিল বা সতর্ক করা হয়েছিল? ধাপারিয়ায় শুধু নয়, গোটা ধনঞ্জয়পুরেই এই প্রশ্ন ঘুরছে।
দুই, গ্রামবাসী থেকে শুরু করে তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব প্রথম থেকেই দাবি করে এসেছেন, নিহত দু’জন তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী। গত লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে তাঁরা তৃণমূলের হয়ে কাজ করেছেন। তবে কি তৃণমূল ‘সমাজবিরোধী’দের দিয়েই এলাকার দখল রাখছে?
ধনঞ্জয়পুর পঞ্চায়েতের সভাপতি, তৃণমূলের জাহাঙ্গির বিশ্বাস বলেন, “ওরা যদি কোনও সমাজবিরোধী কাজে যুক্ত থেকে থাকে, গ্রামবাসীরা তো আগে জানবে। তা ছাড়া, এণন কিছু হয়ে থাকলে পুলিশই বা কেন ব্যবস্থা নেয়নি এত দিন?” সেই সঙ্গেই তিনি যোগ করেন, “লোকমুখে শুনেছি, আগে ওরা নকশাল করত। তবে তাদের কোনও কার্যকলাপে ওদের যোগ দিতে আমরা দেখিনি। ওরা আমাদের সঙ্গেই থেকে দল করত। কেন এই খুন, পুলিশ তদন্ত করে দেখুক।”
পুলিশেরই একটি সূত্রের দাবি, গত বছর অগস্ট নাগাদ ধাপারিয়ার কলমা বিলের পাড় দখল করে একটি ঘর নিয়ে চাপে পড়ে গিয়েছিলেন থানার কর্তারা। কেননা ওই ঘরে রাতে নকশালপন্থীদের আনাগোনা চলছে বলে সূত্রে মারফত খবর এসেছিল। গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্রের আরও দাবি, দীর্ঘদিন নকশাল নেতা বলে পরিচিত এক জন এবং তাঁর ছেলেকে এই জোড়া খুনের পরে হন্যে হয়ে খোঁজা হচ্ছে। কিন্তু তাদের নাগাল পাওয়া যায়নি।