লাইসেন্স না থাকলেও তবু বহু দিন লুকিয়ে চুরিয়ে চলেছিল বাজির কারবার। তারপর অরঙ্গাবাদের গ্রামগুলো ক্রমশ অশান্ত হতে থাক। শুরু হল যখন তখন বোমাবাজি। তার পরে পুলিশের উপরে হামলাই কাল হল।
Suti

Bomb: যখন তখন বোমাবাজিই কাল হল

সরকার থেকে বাজি তৈরির লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ হয়ে গেল ৮২ সালের পর থেকে। তারপরেও বাজি তৈরি পুরোপুরি বন্ধ হয়নি।

Advertisement
বিমান হাজরা
সুতি শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২২ ০৬:৫১

বাজি গড়ে সে দিন ইনাম পেত বাজির কারিগররা। এখন বোমা গড়ে কেউ মানুষ মারছে, কেউ জেলে যাচ্ছে। তাই বেড়েছে পুলিশি তৎপরতাও। বাজি তৈরির নামে বারুদ এনে বোমা তৈরি হচ্ছে পাশের বাগানে। বোমা যেন এক সময় কুটির শিল্প হয়ে উঠেছিল আশপাশের কয়েকটি গ্রামের। ফলে বাজি তৈরির পাট তুলে দিতে হয়েছে নতুন চাঁদরা ও দারিয়াপুরকে।

গ্রামের আর এক প্রবীণ ব্যক্তি বলছেন, “৮২ সাল পর্যন্ত সুতিতে লাইসেন্স দেওয়া হত বাজির কারবারিদেরকে। শিবকাশি বা বুড়িমার বাজি তখন কোথায়?দুই গ্রামে তখন বসতি বলতে বড় জোর দু’শো ঘর। অরঙ্গাবাদের বাজির রমরমা বাজার ছিল তখন নতুন চাঁদরার। দু’হাতে পয়সা আয় হত। কেউ বেকার বসে থাকত না গ্রামে। কোন পটকায় কতটা মশলা কেমন করে দিতে হবে বাড়ির কিশোরেরাও তা বলে দিতে পারত।’’

Advertisement

সরকার থেকে বাজি তৈরির লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ হয়ে গেল ৮২ সালের পর থেকে। তারপরেও বাজি তৈরি পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। গোপনে ২০০৯ সাল পর্যন্তও বাজি তৈরি হয়েছে দুই গ্রামেই। বহু থানার কালীপুজোয় পুড়ত অরঙ্গাবাদের বাজি। খদ্দেরও আসত গ্রামে। উৎসব অনুষ্ঠানে আমরাও পৌঁছে দিতাম সে বাজি। এ ভাবেই চলছিল কারবার। তিনি বলেন, ‘‘কিন্তু এই কারবার চিরতরে বন্ধ হয়ে গেল পাশের গ্রাম ইমামবাজারের টানা অশান্তির ফলে।”

নতুন চাঁদরার বাজি তৈরির অন্যতম কারিগর ছিলেন হানিফ সেখ। হানিফের বাজির লাইসেন্স ছিল ১৯৮২ সাল পর্যন্ত। লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়ায় হাইকোর্টে মামলাও করেন হানিফ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অর্থাভাবে সে মামলা আর চালাতে পারেন নি তারা।তাঁর মেয়ে কাইমা বিবি বলছেন, “নতুন চাঁদরায় বাজির তৈরির লাইসেন্স ছিল হানিফ, সুকুরুদ্দিন, ফুসুরুদ্দিন, সাদাকাশ, রিয়াজুদ্দিন ও হাসেন সেখের। দারিয়াপুরে সে ব্যবসা ছিল জান মহম্মদ, সান মহম্মদ, পাঁচু শেখ, সিদ্দিক শেখ ও আব্বাস শেখের। গ্রামবাসীরা সবাই নিজের নিজের বাড়িতে নানা ধরনের বাজি তৈরি করত। কাজ মত মজুরি পেত তারা। নদী ভাঙনে সর্বস্বান্ত হয়ে সরকারি খাস জমির উপর এক কাঠা করে জমি দখল করে ঘর বানিয়ে নিয়েছি আমরা। তবু বাজির কাজ পেয়ে কোনও অভাব ছিল না গ্রামে। তারপর আর লাইসেন্সও মিলল না। ধীরে ধীরে কমতে শুরু হল বাজির বাজার।”

আর এক প্রবীণ মহিলা বলছেন, “লাইসেন্স না থাকলেও তবু বহু দিন লুকিয়ে চুরিয়ে চলেছিল বাজির কারবার। তারপর অরঙ্গাবাদের আশপাশের গ্রাম ক্রমশ অশান্ত হতে শুরু করল। শুরু হত যখন তখন বোমাবাজি। আর তার জেরে পুলিশ ধেয়ে আসত এই গ্রামে। ধরে নিয়ে যেত বাড়ির পুরুষদের।’’

তিনি বলছেন, ‘‘যে টুকু বাজি তৈরি হত তাও বন্ধ হয়ে গেল ২০১০ সালে থানার ওসির উপর বোমা হামলার পর। সেই থেকে বাজি তৈরি পুরোপুরি বন্ধ দুই গ্রামেই। অথচ গ্রামের ছেলে বুড়ো সবাই জানে বারুদের সঙ্গে কোন মশলা কতটা মিশিয়ে আওয়াজ হবে জোর। কী মেশালে আলোর রোশনাই বাড়বে।” কিন্তু পুলিশের উপর হামলাই কাল হয়েছিল ওদের।

আরও পড়ুন
Advertisement