TMC

মতিরুলের ‘ক্ষমতা’ তৈরি করে বহু শত্রু

পুলিশ সূত্রের খবর, দীর্ঘ দিন ধরে এলাকায় একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ওঠা মতিরুলের বিরুদ্ধে একাধিক কারণে বিভিন্ন শ্রেণির লোকজন ক্ষুব্ধ ছিল।

Advertisement
সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২২ ০৭:১৫
গত ২৪ নভেম্বর মুর্শিদাবাদের নওদা থানা এলাকায় বোমা ও গুলি বামলায় খুন হন মতিরুল।

গত ২৪ নভেম্বর মুর্শিদাবাদের নওদা থানা এলাকায় বোমা ও গুলি বামলায় খুন হন মতিরুল। প্রতীকী ছবি।

তদন্ত যত এগোচ্ছে নদিয়ার করিমপুর এলাকার খুন হওয়া তৃণমূল নেতা মতিরুল ইসলাম সম্পর্কে নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পুলিশের হাতে উঠে আসতে শুরু করছে।

পুলিশ সূত্রের খবর, দীর্ঘ দিন ধরে এলাকায় একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ওঠা মতিরুলের বিরুদ্ধে একাধিক কারণে বিভিন্ন শ্রেণির লোকজন ক্ষুব্ধ ছিল। খুনের পিছনে সেই ক্ষোভ কাজ করতেই পারে বলে পুলিশের অনুমান। রাজকুমা ও পিঙ্কুর গ্রেফতারের পর সেই অনুমান আরও তীব্র হচ্ছে।

Advertisement

গত ২৪ নভেম্বর মুর্শিদাবাদের নওদা থানা এলাকায় বোমা ও গুলি বামলায় খুন হন মতিরুল। তিনি করিমপুর-২ ব্লকের তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের নেতা ছিলেন। তাঁর স্ত্রী নারায়ণপুর ২ পঞ্চায়েতের প্রধান।

পুলিশ সূত্রের খবর, কখনও চরের জমির দখলদারি, আবার কখনও স্থানীয় মহিলার মৃত্যুর সঙ্গে জড়িয়েছিল মতিরুলের নাম। স্থানীয় ইটভাটা কেনেবেচা থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ পদে কাকে বসানো হবে, সব কিছুতেই তাঁর হস্তক্ষেপ গোষ্ঠী রাজনীতিতে বেশ কিছু শত্রুর জন্ম দিয়েছিল। ব্লক বা জেলা স্তরের রাজনীতির ‘বোড়ে’ হিসাবে তাঁকে একাধিক বার ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ।

নারায়ণপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় জলঙ্গি নদীর চরে বেশ কিছু থাস জমি আছে। সেখানে নারায়ণপুর ছাড়াও কানাইনগর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বেশ কিছু মানুষ চাষ করে আসছেন। অভিযোগ উঠেছিল, নারায়ণপুরের মানুষকে বঞ্চিত করে কানাইনগর এলাকার মানুষ অনেক বেশি জমি দখল করে চাষ করছে। এই দুই এলাকার মানুষের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি হয়।

কানাইনগর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা মতিরুলের বিরোধী গোষ্ঠীর নেত্রী জেলা পরিষদ সদস্য টিনা ভৌমিক সাহার নির্বাচনী কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। মতিরুল নারায়ণপুরের মানুষের পাশে ছিলেন আর টিনা কানাইনগরের। দীর্ঘ টানাপড়েনের পর স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যস্থতায় কানাইনগরের লোকজন নারায়ণপুরের লোকেদের জমি ছাড়তে বাধ্য হন। ফলে কানাইনগরের বাসিন্দাদের অনেকেই মতিরুলের উপর ক্ষুব্ধ হন। মুর্শিদাবাদের দিকেও চরের খাস জমির দখল নিয়ে মতিরুলের সঙ্গে সেই জেলার কিছু লোকের লোকজনের বিবাদ শুরু হয়েছিল। খুনের পিছনে জমি বিবাদ বড় কারণ হতে পারে বলে পুলিশের দাবি। তদন্তে নেমে পুলিশ আরও জানতে পেরেছে, মতিরুলের এলাকায় এক মহিলা খুন হন। মতিরুল নিহত মহিলার বাপের বাড়ির লোকজনের পক্ষে দাঁড়ান। ফলে অভিযুক্তেরা গ্রামে ফিরতে পারছিল না। তারা মরিয়া হয়ে মতিরুলকে সরানোর ছক কষতে থাকে।

তদন্তে নেমে পুলিশ যে সাত জনকে গ্রেফতার করেছে তাদের মধ্যে ইসরাফিল মণ্ডল ওরফে কিতাবকে জমি বিবাদ সংক্রান্ত বিষয়ে, আসান শেখকে ওই মহিলা খুনের ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করে পুলিশ। তদন্তকারীদের দাবি, বাকিদের মধ্যে ডোমকলের এলেম বক্সকে অস্ত্র সরবরাহ করেছে। ব্রজনাথপুরের কিতাবের সঙ্গে পরাণপুরের রবিউল ও জাকিরকে ‘শ্যুটার’ হিসাবে ব্যবহার করে চক্রান্তকারীরা। নওদার বাসিন্দা মনিরুলের বাড়ি থেকে খুনের ঘটনার সময় ব্যবহার করা আগ্নেয়াস্ত্র ও মোটরবাইক উদ্ধার করে পুলিশ।

আরও পড়ুন
Advertisement