প্রতীকী ছবি।
বাংলা আবাস যোজনার ঘরের তালিকা থেকে প্রায় ২৪ হাজার নাম বাদ গিয়েছে। সংখ্যাটা আরও কিছুটা বাড়তে পারে বলে মনে করছেন জেলার কর্তারা। কর্তাদের লক্ষ্য, যত দ্রুত সম্ভব অযোগ্যদের নাম তালিকা থেকে বাদ দিয়ে ‘পার্মানেন্ট ওয়েটিং লিস্ট’ শূন্যে নামিয়ে আনা। কারণ সরকার বলে দিয়েছে, ওই তালিকা থাকা ইস্তক ‘আবাস প্লাস’ তালিকায় নাম থাকা ব্যক্তিদের ঘর দেওয়া সম্ভব হবে না। আর সেই কারণেই পার্মানেন্ট ওয়েটিং লিস্ট ঝাড়াইবাছাই শুরু করে প্রশাসন। আর তা করতে গিয়েই এই এত সংখ্যক লোকের নাম তালিকা থেকে বাদ চলে গিয়েছে।
২০১১ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে ‘সোশিও ইকনমিক কাস্ট সেনসাস’-এ সমীক্ষা করে ওই তালিকা তৈরি করা হয়েছিল। ২০১৬ সালে সেই তালিকা অনুযায়ী কত জন বাংলা আবাস যোজনার ঘর পাওয়ার যোগ্য তার ‘পার্মানেন্ট ওয়েটিং লিস্ট’ হয়। কেন্দ্র অবশ্য এই প্রকল্পের নাম দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (গ্রামীণ)। নদিয়া জেলায় ওই তালিকায় নাম ছিল ১ লক্ষ ৭৫ হাজার ৮৬৩ জনের। ২০১৬ থেকেই তালিকা অনুযায়ী ঘর তৈরি করে দেওয়া শুরু হয়।
কিন্তু ‘পার্মানেন্ট ওয়েটিং লিস্ট’ প্রকাশিত হওয়ার পর প্রচুর অভিযোগ আসতে থাকে। দেখা যায়, ঘর পাওয়ার যোগ্য অথচ তালিকায় নাম নেই এমন পরিবারের সংখ্যা প্রচুর। আবার বিপরীত উদারণও কম নয়। ফলে সরকারের নির্দেশে ২০১৮ সালে আবার নতুন করে তালিকা তৈরি হয়। সে তালিকার নাম দেওয়া হয় ‘আবাস প্লাস’। জেলায় আবাস প্লাস তালিকায় নাম রয়েছে ২ লক্ষ ৯৮ হাজার ২৫৬ জনের। তাঁদের এখনও ঘর দেওয়া শুরু হয়নি।
নদিয়া জেলা পরিষদের এক কর্তা জানান, তালিকায় নাম থাকলেই ঘর পাওয়া যাবে না। গ্রাম পঞ্চায়েতের কর্মীরা তালিকা ধরে সমীক্ষা করছেন। যদি দেখা যায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পাকা বাড়ি আছে, অর্থাৎ তিনি ঘর পাওয়ার যোগ্য নন তা হলে তাঁর নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে। আগে ওই সব ব্যক্তিকে ঘর না-দেওয়া হলেও তাঁদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছিল না। রাজ্য সরকারের নির্দেশ আসার পর অযোগ্যদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া শুরু হয়। বছরখানেক আগে থেকেই কাজটা শুরু হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের কর্তারা বলছেন, ২০১১ সালে যখন কেন্দ্রীয় সরকার সমীক্ষা করেছিল, তখন হয়ত যাদের পাকা বাড়ি ছিল না পরবর্তী কালে তাদের অনেকে নিজেরাই পাকা বাড়ি তৈরি করে নিয়েছে। আবার অনেকে অন্য সরকারি প্রকল্প থেকে ঘর পেয়েছে। তালিকায় নাম থাকা অনেকে আবার পরিবার নিয়ে অন্য রাজ্যে চলে গিয়েছে কাজের সন্ধানে। আবার তালিকায় এমন অনেকের নাম ছিল যাদের আগে থেকেই পাকা বাড়ি আছে, অর্থাৎ তারা যোগ্যই নয়। এই সব নামই বাদ দেওয়া হয়েছে।
কর্তারা জানিয়েছে, একেবারে প্রথমে নদিয়া জেলায় পার্মানেন্ট ওয়েটিং লিস্টে নাম ছিল ১ লক্ষ ৭৫ হাজার ৮৬৩ জনের। এখনও পর্যন্ত অযোগ্যদের নাম বাদ দেওয়ার পর সংখ্যাটা দাঁড়ায় ১ লক্ষ ৫১ হাজার ৬৬৩ জন। এর মধ্যে জেলা থেকে ১ লক্ষ ৫০ হাজার ৬৬৩ জনের ঘরের অনুমোদন করে দেওয়া হয়েছে। বাকি এক হাজার জনের ক্ষেত্রে সার্ভে হচ্ছে। সেখান থেকেও কিছু নাম বাদ যাবে বলে মনে করছেন কর্তারা।
জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত ১ লক্ষ ৩৩ হাজার ৮২৩ জনকে দুটো কিস্তির টাকা দিয়ে দেওয়া হয়েছে যাদের ঘর পুরোপুরি তৈরি হয়ে গিয়েছে। জেলার এক কর্তা বলেন, “২০১৮ সালে তৈরি হয়েছে আবাস প্লাসের তালিকা। দেখতে দেখতে তিন বছর হয়ে গেল। এখন যেমন ‘পার্মানেন্ট ওয়েটিং লিস্ট’ থেকে অযোগ্যদের নাম থেকে বাদ দেওয়ার হচ্ছে, তেমনই যোগ্যদের দ্রুত ঘর তৈরি করে দেওয়ার কাজ চলছে।” বিভিন্ন ব্লকে আবাস প্লাসের তালিকা ধরে সমীক্ষা শুরু হয়েছে। জেলা পরিষদের সভাধিপতি রিক্তা কুণ্ডু বলেন, “আমরা সব পঞ্চায়েতকে বলে দিয়েছি, কোনও অযোগ্য ব্যক্তি যেন বাংলা আবাস যোজনার ঘর না পান।”