Bidi industry

রোজ ৫০ কোটি বিড়ি, আয় বাড়ে না শ্রমিকের

বিড়ি শিল্পাঞ্চল হিসেবে সুবিদিত অরঙ্গাবাদের নাম। এলাকার সিংহ ভাগ মানুষের আয়ের প্রধান উৎস বলতে বিড়ি বাঁধাই। তাই ছেলেমেয়ে মানুষ করা থেকে মেয়ের বিয়ে দেওয়া সবেরই জন্য নির্ভর করতে হয় বিড়ির উপর।

Advertisement
বিমান হাজরা
জঙ্গিপুর শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:২৯

প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

মুর্শিদাবাদে শাসক দলের দুই জেলা সংগঠন। তার মধ্যে জঙ্গিপুর জেলা তৃণমূলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতাই বিড়ি মালিক। এখন যিনি দলের জেলা সভাপতি তিনিও বিড়ি মালিক, চেয়ারম্যানও তাই। কিন্তু তার পরেও এই বিরাট শিল্পাঞ্চলে অন্ধকার দূর হচ্ছে না।

Advertisement

বিড়ি শিল্পাঞ্চল হিসেবে সুবিদিত অরঙ্গাবাদের নাম। এলাকার সিংহ ভাগ মানুষের আয়ের প্রধান উৎস বলতে বিড়ি বাঁধাই। তাই ছেলেমেয়ে মানুষ করা থেকে মেয়ের বিয়ে দেওয়া সবেরই জন্য নির্ভর করতে হয় বিড়ির উপর। কিন্তু বিশ্ব জুড়ে তামাক বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়েছে। ভারতও সেই আন্দোলনের শরিক। গত বেশ কিছু দিনে তামাকের উপর নিয়ন্ত্রণ আনতে ভারত সরকার কিছু পদক্ষেপও করেছে। বসেছে ২৮ শতাংশ জিএসটি, যা বিড়িশিল্পে সঙ্কটের অশনি সঙ্কেত বলেও ভাবছেন কেউ কেউ।

অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন শিল্পে যদি সত্যই মন্দা দেখা যায় তাহলে কী করে খাবেন তাঁরা।

তবু তার পরেও অরঙ্গাবাদে শহরে এখনও রয়েছে প্রায় ২০টি মতো বিড়ির বড় কারখানা। পাশের শহর ধুলিয়ান, উমরপুরে আরও গোটা ২০। ছোট কারখানা রয়েছে অন্তত গোটা পঞ্চাশ। যত আশঙ্কাই থাক, দৈনিক অন্তত পঞ্চাশ কোটি বিড়ি তৈরি হয় বিড়ি শিল্পাঞ্চলে।

অরঙ্গাবাদের আব্দুর রাকিব ও তাঁর স্ত্রী মিলে বিড়ি বাঁধাই করে কলকাতায় দুই ছেলের ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানোর খরচ জুগিয়েছেন। বড় ছেলে এখন একটি বড় কোম্পানিতে কর্মরত। মেয়ে কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। তবুও বিড়ি বাঁধাইয়ের কাজ ছাড়তে পারেননি। শুধুমাত্র অরঙ্গাবাদ কলেজ পাড়াতেই অন্তত ২৫ জন এমএ, বিএ পাশ যুবকের দেখা মিলবে যাঁদের পরিবারের আয়ের একমাত্র উৎস বিড়ি বাঁধাই।

সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) টোবাকো নিয়ে বিধি নিষেধ কার্যকরী করার চুক্তিতে সই করে ভারত-সহ ১৭৮টি দেশ। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সমীক্ষায় বলা হয়েছে, এক বছরে ভারতে ১০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয় শুধু ধূমপানের কারণে।

যার অর্ধেকই মারা যান ক্যানসারে। প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয় শুধু তামাকজনিত রোগের পিছনে। যা তামাকজাত উৎপাদন থেকে আদায়ীকৃত রাজস্বের অন্তত চার গুণ বেশি।

অরঙ্গাবাদ কলেজের অধ্যাপক সাধন দাস জানান, ‘‘অরঙ্গাবাদের মূল অর্থনীতিটাই দাঁড়িয়ে রয়েছে বিড়ি শিল্পের উপর। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিধিনিষেধ মেনে ‘তামাক আইন ২০০৩’ কার্যকরী হওয়ায় অরঙ্গাবাদের এই বিপুল বিড়ি শিল্পের উপর তার প্রভাব পড়তে বাধ্য। আশঙ্কার জায়গা সেটাই।” (চলবে)

আরও পড়ুন
Advertisement