পঞ্চভূতে পঞ্চায়েত/ ২
TMC Internal Conflict

নিষ্কণ্টক তালুকে শাসক নিজেই কাঁটা

দলাদলি আর ভাগাভাগির জটে আটকে গিয়েছে উন্নয়ন। বোর্ডের দখল আর উপসমিতির ক্ষমতার টানাপড়েনে বরাদ্দ অর্থ খরচ করা যাচ্ছে না। ফল ভুগছে সাধারণ মানুষ। কেন এই দুরবস্থা? নদিয়া জেলা জুড়ে খোঁজ নিচ্ছএ আনন্দবাজার। 

Advertisement
সুস্মিত হালদার
শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০২৪ ০৮:২০
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

Advertisement

বিরোধীদের দখলে থাকা গ্রাম পঞ্চায়েতের টাকা খরচ করতে না পারার পিছনে নয় একাধিক কারণ আছে। কিন্তু তৃণমূলের দখলে থাকা গ্রাম পঞ্চায়েত কেন টাকা খরচ করতে পারছে না তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কারণ সে ক্ষেত্রে প্রশাসনিক অসহযোগিতার অভিযোগ কেউই তুলতে পারছে না।

এই ধাঁধাঁর উত্তর খুঁজতে গিয়ে প্রথমেই যে কারণটা সামনে আসছে তা হল তৃণমূলের দখলে থাকা পঞ্চায়েতগুলির মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই সমন্বয়ের অভাব। দ্বিতীয় কারণ গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। শান্তিপুর ব্লকের হরিপুর গ্রাম পঞ্চায়েত গত ১৬ জুলাই পর্যন্ত মাত্র ২.১১ শতাংশ টাকা খরচ করতে পেরেছে। এ ক্ষেত্রে প্রথম থেকেই তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে। প্রার্থী বাছাই নিয়ে তা আরও বেড়েছে। ভোটের পরে প্রধান নির্বাচন নিয়ে সেই বিবাদ চরম আকার নেয়। যার জেরে অঞ্চল সভাপতিকে শো-কজ় পর্যন্ত করা হয়। তবে জেলা প্রশাসনের দাবি, শাসকের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নয়, কিছু কারণে পঞ্চায়েতের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকতে সমস্যা হওয়ায় তারা এতটা পিছিয়ে আছে।

এর পরেই পিছিয়ে আছে চাপড়ার আলফা গ্রাম পঞ্চায়েত। গত ১৬ জুলাই পর্যন্ত সেখানে মাত্র ৫.৫ শতাংশ টাকা খরচ করতে হয়েছে। এখানে তৃণমূলের সদস্যদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবকেই দায়ী করছেন প্রশাসনেরই অনেকে। টাকা খরচের হিসাবে অনেকটাই পিছিয়ে আছে চাকদহের তৃণমূল পরিচালিত শিলিন্দা ২ গ্রাম পঞ্চায়েতও। প্রার্থী বাছাইয়ের সময় থেকে শুরু করে প্রধান নির্বাচন-সব ক্ষেত্রেই সেখানে দলের অন্দরে বিবাদ সামনে এসেছে। একই ভাবে উপদলীয় কোন্দল সামনে এসেছে চাকদহ ব্লকের চাঁদুরিয়া ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষেত্রেও। এই পঞ্চায়েতও টাকা খরচে পিছিয়ে পড়েছে।

কালীগঞ্জ ব্লকে তৃণমূল পরিচালিত রাজারামপুর-ঘোড়াইক্ষেত্র গ্রাম পঞ্চায়েতও ওই সময়ের মধ্যে মাত্র আট শতাংশ টাকা খরচ করতে পেরেছে। এ ক্ষেত্রেও দেখা গিয়েছে, পঞ্চায়েত পরিচালনার ক্ষেত্রে শাসক দলের অন্দরে সমস্যা আছে। বিশেষ করে কাজ নির্বাচনের ক্ষেত্রে সমন্বয়ের অভাব ধরা পড়ছে বলে স্বীকার করে নিয়েছ‌েন স্থানীয় নেতারাই। ওই একই ব্লকের দেবগ্রাম পঞ্চায়েত তৃণমূল একক ভাবে দখল করলেও প্রধান নির্বাচন নিয়ে প্রবল গোষ্ঠী কোন্দল সামনে এসেছে। এই পঞ্চায়েত টাকা খরচের ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকলেও অন্যান্য কিছু পঞ্চায়েতের তুলনায় কিছুটা ভা অবস্থায় আছে। জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে তারা ২৬.৩১ শতাংশ টাকা খরচ করতে পেরেছে। তৃণমূলের পিছিয়ে থাকা গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির মধ্যে অন্যতম করিমপুর ১ ব্লকের পিপুলবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতও। তারা আবার ১৬ জুলাইয়ের মধ্যে ১০ শতাংশ টাকাও খরচ করতে পারেনি।

এমন ভাবে টাকা খরচ করতে না পারা তৃণমূলের গ্রাম পঞ্চায়তের তালিকা নেহাত ছোট নয়। জেলা প্রশাসনের তরফে টাকা খরচ করতে ব্যর্থ যে সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েতের তালিকা তৈরি করা হয়েছে তার মধ্যে প্রায় ৫০টি গ্রাম পঞ্চায়েতই তৃণমূলের দখলে। বৃহস্পতিবার তাদের ডেকে বৈঠক করেছেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। কেন ও কী কী কারণে টাকা খরচ করা যাচ্ছে না, কী ভাবে টাকা খরচ করা সম্ভব তা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। বেশ কিছু নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

আগেও বিডিও থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসনের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকেরা, এমনকী অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) পিছিয়ে পড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের কর্মীদের সঙ্গে একাধিক বার ভার্চুয়াল মিটিং করেছেন। তাতে কাজ বিশেষ হয়নি। এ বার মুখোমুখি বসে এই বৈঠক কতটা সফল হবে তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কারণ, মূল রোগ ধরে তার চিকিৎসা না করতে পারলে কি আদৌ রোগমুক্তি সম্ভব? (চলবে)

আরও পড়ুন
Advertisement