প্রতীকী ছবি।
বিধানসভা ভোটের আগে থেকে ঐক্যে ফাটল সামনে চলে আসে। পুরসভা ভোটে সেই ফাটল প্রকট হল। দুই পক্ষের তোপে উত্তাপ ছড়াল। হয়তো বিধানসভায় বেলডাঙা পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান ভরত ঝাওর ভেবেছিলেন তৃণমূলের টিকিট পাবেন। কিন্তু দল সেই টিকিট দেয় নদিয়ার কালীগঞ্জের বিধায়ক হাসানুজ্জামান শেখকে। ভরত প্রকাশ্যে দলের প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে মুখ খোলেন। তারপর তার সঙ্গে তৃণমূল বিছিন্ন হয়ে যায়।
পুরসভা এলাকায় দলের বাঁধন আলগা হয়ে যায় এর পরে। কিন্তু ভোটে জিতে বিধায়ক হওয়ার পর সেই দলকে নিজের হাতের মধ্যে আনেন বিধায়ক হাসানুজ্জামান। তারপর পুরসভা ভোটের প্রার্থী নির্বাচন থেকে ভোটের প্রচার সবেতেই হাসানুজ্জামানকে সক্রিয় অংশ নিতে দেখা গিয়েছে।
এ দিকে ভরত ঝাওর তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে রুষ্ট হন। তাঁর ভাই সন্তোষ ঝাওরের নাম তৃণমূলের প্রথম তালিকায় প্রকাশ হলেও পরে সেই নাম পরিবর্তন করা হয়। নানা ভাবে ক্ষুব্ধ ভরত ঝাওরের নেতৃত্বে বেলডাঙা পুরসভার ৫টি ওয়ার্ডে ভরত পন্থী নির্দলরা মই চিহ্নে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। অন্য দিকে হাসানের নেতৃত্বে ১৪টি ওয়ার্ডেই প্রার্থী দেয় তৃণমূল।
ভোটের ফলে দেখা যায় ৭টি আসন পেয়ে বেলডাঙা পুরসভায় তৃণমূল প্রথম নিজের প্রতীকে সর্ব বৃহৎ দলের মর্যাদা পায়। ২২ মার্চ বোর্ড গঠন হয়। একক গরিষ্ঠতা না পেয়েও তৃণমূল বোর্ড গড়তে সমর্থ হয়। পুরবোর্ড গঠনের সময় পুরপ্রধান হিসাবে দুই প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। নির্দলের ভরত ঝাওর ও তৃণমূলের অনুরাধা হাজরা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে ভোটাভুটিতে অনুরাধা জয়ী হন ৮-৬ ভোটে। যাঁরা ওই রুদ্ধদ্বার কক্ষে ছিলেন তাঁরা জানাচ্ছেন তৃণমূলকে বাড়তি ভোট দিয়েছেন এক নির্দল।
কারণ ভরত ঝাওর ৬ টি ভোট পান। মনে করা হচ্ছে, ভরতের দখলে থাকা ৩ নির্দলের সঙ্গে বিজেপি থেকে জেতা ৩ প্রার্থী তাঁকে ভোট দিয়েছেন। মঙ্গলবার যারা রুদ্ধদ্বার ঘরে ছিলেন তাদের মধ্যে ২ নম্বর ওয়ার্ডের অনুরূপা ভাদুড়ি ছিলেন। তিনি বলেন, “এক নির্দল প্রার্থী প্রথম থেকেই তৃণমূলের সঙ্গে আছেন। মঙ্গলবার তাঁকে তৃণমূলের সমর্থকদের সঙ্গে পুরসভা যেতে দেখা গিয়েছে। তিনি বোর্ড মিটিং চলাকালীন তৃণমূলের সদস্যদের সঙ্গে বসে ছিলেন। ফলে তাঁর ভোটেই তৃণমূল বোর্ড গঠন করেছে। তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রী বলছেন তাঁদের সঙ্গে দলের সম্পর্ক নেই। কিন্তু স্থানীয় নেতৃত্ব তাতে গুরুত্ব দিচ্ছে না। একে দ্বিচারিতা ছাড়া কী বলা যাবে।”
এই প্রসঙ্গে বেলডাঙার বিধায়ক হাসানুজ্জামান একটি ভিডিও বার্তায় বলেন, “বেলডাঙা পুরসভার আগে যিনি চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি (ভরত) বিধানসভা ভোটেও বিজেপি করেছেন। পুরসভা গঠনে তিনি প্রার্থী হয়েছিলেন, বিজেপি তাঁকে ভোট দিল। তিনি বিজেপির সঙ্গে আছেন বিজেপিই করছেন এটা তার বড় প্রমাণ।”
তিনি বলেন, “আমি আগেই দাবি করেছিলাম বেলডাঙা পুরসভা তৃণমূলই গঠন করবে। এক জন নির্দল যিনি নিজেই দাঁড়িয়েছিলেন, তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের স্বার্থে ভোট দিয়েছেন। ফলে ৮ টি ভোট পেয়ে আমাদের পুর বোর্ড গঠন হয়েছে।”
এই প্রসঙ্গে ভরত ঝাওর বলেন, “মানুষের ইচ্ছায় আমরা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি। মানুষ আমাদের ভোট দিয়েছে। আরও কয়েকটি আসন পেলে আরও ভাল হত। আমরা তৃণমূলকে সমর্থন করব বলেছিলাম। কিন্তু তৃণমূল আমাদের বিরুদ্ধে সরাসরি আক্রমণে গিয়েছে। এমনকী আমাদের জেতা ওয়ার্ডে হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে। কে এসব করাচ্ছে মানুষ জানে।” তৃণমূল অবশ্য জানিয়েছে, এ সবের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নেই।