প্রতীকী ছবি।
ধুলিয়ানে পুরবোর্ড গঠনের ঘটনায় দলীয় রাজনীতিতে আরও বিপাকে পড়লেন জঙ্গিপুরের তৃণমূল জেলা সভাপতি খলিলুর রহমান। এই ঘটনায় তাঁর সঙ্গে দলের শমসেরগঞ্জের বিধায়ক আমিরুল ইসলামের সঙ্গে ফারাক আরও বাড়ল তাই নয়, ধুলিয়ানের পুরবোর্ডের সঙ্গেও দূরত্ব বাড়ল।
২১ আসনের ধুলিয়ানে ১১টি আসন পেয়েছে তৃণমূল। ৭টি কংগ্রেস ও ৩টি নির্দল। শাসক দল হিসেবে তাই ধুলিয়ানে বোর্ড গঠন যখন প্রায় নিশ্চিতই ছিল, তখন দলের মধ্যে ভাঙনের ঘটনায় প্রকাশ্যে এসেছে খলিলুর রহমানের নাতি তৃণমূল কাউন্সিলর মোস্তাক আজাদের নাম। বোর্ড গঠনের বৈঠকে তাঁর প্রস্তাবেই তৃণমূলের কাউন্সিলর সাজাহান মহলদার পুরপ্রধান পদে বিক্ষুব্ধ প্রার্থী হয়েছেন। সেক্ষেত্রে খলিলুর রহমানকে রাজ্য নেতাদের কাছে দলবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করার পথটি আরও সহজ হয়ে গেল আমিরুলের কাছে।
তৃণমূলের এক নেতা বলেন, “খলিলুর রহমান হয়ত এর সঙ্গে জড়িত নেই। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে তাঁর পক্ষে দলীয় নেতাদের তা বোঝানো কষ্টকর। তা ছাড়া তিনি বোর্ড গঠনে দলের বিরোধিতার কথা জেনেও ২৪ ঘণ্টা পরেও জেলা সভাপতি হিসেবে কোনও পদক্ষেপ করেননি। তৃণমূলের যে ৫ কাউন্সিলর দলের অফিসিয়াল প্রার্থীর বিরোধিতা করে ভোট দিয়েছেন তাঁদের দল থেকে বহিষ্কারও করেননি। যদি তা করতেন তা হলে অন্তত একটা “সাফাইয়ের” বার্তা দিতে পারতেন তিনি দলের কাছে। সে চেষ্টা তিনি করেননি।”
আমিরুলের সঙ্গে খলিলুরের বিবাদ বহু দিনের। তবে খলিলুরের ভাই জইদুর কংগ্রেস প্রার্থী হয়ে আমিরুলের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর ঘটনা থেকেই এই বিবাদ চরম আকার নেয়। প্রকাশ্যে তা নিয়ে আক্রমণও করেন খলিলুরকে আমিরুল। তবে সে ঘটনা খুব দূর পর্যন্ত যেতে পারেনি।
কিন্তু ধুলিয়ানে পুরবোর্ড গঠনে দলের ৫ কাউন্সিলরের বিদ্রোহ, যার সঙ্গী খলিলুরের নাতি, ভাল চোখে নেবেন না দলনেত্রীও। আর খলিলুরের বিপদ এখানেই। তা ছাড়া শুধু আমিরুল নন, দলের একাধিক বিধায়ক ও মন্ত্রীর সঙ্গে খলিলুরের দূরত্ব ক্রমশ বেড়েই চলেছে। মন্ত্রীর অনুগত এক নেতা বলছেন, “তিনি সাগরদিঘিতে এলে মন্ত্রীর যারা ঘোর বিরোধী তাঁদের নিয়ে ঘুরে বেরান। দলের ব্লক সভাপতি নুর জামালের সঙ্গে সাপে নেউলে সম্পর্ক মন্ত্রীর। সেটা জেনেও নুরজামালকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন খলিলুর রহমান। একই অবস্থা জঙ্গিপুর পাড়েও। সেখানেও মন্ত্রীর যাঁরা বিরোধী তাঁদের সঙ্গে ওঠাবসা খলিলুরের। যাকে খোদ দলনেত্রী দল থেকে বহিষ্কার করেছেন, আমিরুলের বিরোধী সেই জেলা পরিষদ নেতাকে রাজনৈতিক প্রশ্রয় দিচ্ছেন। আসলে খলিলুর রাজনীতির লোক নন। তার ভালমানুষির সুযোগ নিচ্ছে কিছু সুবিধাবাদী। তাতেই পা ফেলে নিজেই নিজের বিপদ ডেকে এনেছেন খলিলুর। দলের কোনও সভা সমিতিতে তাই তিনি সর্বোচ্চ নেতৃত্বে থেকেও ডাক পান না।”
এই অবস্থায় খলিলুর রহমানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে। জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলায় তার বিকল্প কেউ নেই এটাও ঠিক। খলিলুর রহমান অবশ্য বলছেন, “দলের ভাল হোক এটাই আমি চেয়েছি। সব সময় রাজনীতির দৃষ্টিকোণ দিয়ে আমি দেখতে অভ্যস্ত নই। অতি শত্রুও কাছে এলে তাকে কটু কথা বলে ফিরিয়ে দিতে পারি না। এটাই আমার বড় সমস্যা। তাই কোনও কিছুতে জড়িত না থেকেও চিহ্নিত হতে হচ্ছে “গদ্দার”, “বেইমান” বলে। এ রকম চললে পদ ছেড়ে দেব।”