প্রতীকী ছবি।
দিন কয়েক থেকেই ক্ষোভে ফুঁসছে জলঙ্গির খয়রামারি গ্রাম পঞ্চায়েতের বড় অংশের তৃণমূল সদস্য থেকে একাংশের গ্রামবাসীরা। তৃণমূল প্রধান সেলিনা বিবির বিরুদ্ধে দলেরই একাংশের অভিযোগ, পঞ্চায়েতের বেশ কিছু দামি মালপত্র লোপাট করেছেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে ব্লক প্রশাসনের কাছে অভিযোগও দায়ের হয়েছে কিছু দিন আগে। আর বৃহস্পতিবার সেই অভিযোগ তুলেই একেবারে পঞ্চায়েত চত্বর ঘিরে মহিলা প্রধানকে মারধরের অভিযোগ উঠল গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য সহ কিছু গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে। প্রধানের তরফে বিষয়টি নিয়ে বিডিওর কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এক দিকে মহিলা প্রধান তাঁকে মারধরের অভিযোগ করেছেন, অন্যদিকে প্রধানের বিরুদ্ধে পঞ্চায়েতের মালপত্র লোপাটের অভিযোগ জমা পড়েছে। গোটা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।
বিধানসভা নির্বাচনে বড় ব্যবধানে জয় হয় তৃণমূলের। আর তারপর থেকেই নিজেদের মধ্যে কোন্দল চরমে উঠেছে জলঙ্গির খয়রামারি গ্রাম পঞ্চায়েতে। যদিও বিরোধীদের দাবি, গোটাটাই ভাগবাটোয়ারার গন্ডগোল। নির্বাচনের আগেও প্রধানের সঙ্গে গ্রাম পঞ্চায়েতের একাংশ সদস্যের গন্ডগোল ছিল। কিন্তু বিষয়টি তখন খুব বেশি মাথাচাড়া দিতে পারেনি। অভিযোগ, বিধানসভা নির্বাচনে বড় ব্যবধানে জেতার পর ১৭ জন সদস্যের মধ্যে ১১ জন সদস্যরা একেবারে উঠে পড়ে লেগেছেন গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সেলিনা বিবিকে সরাতে। রাজনৈতিক মহলের দাবি, খয়রামারি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সেলিনা বিবি বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী আব্দুর রাজ্জাকের বিরোধিতা করেছিলেন। ফলে নির্বাচনে জেতার পরে প্রধানের বিরুদ্ধে গোষ্ঠী বিধায়ককে পাশে পেয়ে উৎসাহী হয়ে প্রধানের দুর্নীতি নিয়ে সরব হয়েছে।
তবে প্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ কেবল গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যদের নয়, গ্রামবাসী থেকে ব্লক প্রশাসনের একটা অংশের দাবি, পঞ্চায়েত প্রধান পঞ্চায়েতের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু সামগ্রী পঞ্চায়েত থেকে সরিয়ে নিজের হেফাজতে রেখেছেন। নিজের প্রতি অনাস্থার আঁচ পেয়ে তিনি ওই কাজ করেছেন বলে অভিযোগ। ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য মোজাম্মেল সেখের দাবি, ‘‘পঞ্চায়েত প্রধান অনাস্থার আঁচ পেয়ে পঞ্চায়েতের বেশ কিছু দামি সামগ্রী ল্যাপটপ থেকে সিসি ক্যামেরার মেশিন, ফ্যান, চেয়ার টেবিল সরিয়ে নিয়ে গিয়েছেন নিজের হেফাজতে। সেগুলোকে বিক্রি করে দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন তিনি। বিষয়টি জানতে পেরেই আমরা ব্লক প্রশাসনকে জানিয়েছি।’’
যদিও তৃণমূল প্রধান সেলিনা বিবির দাবি, ‘‘কিছু সামগ্রী খারাপ থাকায় সেগুলো মেরামতির জন্য বাইরে পাঠানো হয়েছে, কিছু দিনের মধ্যেই পঞ্চায়েতে পৌঁছে যাবে।’’ যা শুনে বিরোধীরা বলছে, চাপে পড়েই পঞ্চায়েত প্রধান এখন মেরামতির তত্ত্ব খাড়া করছেন। এই ঘটনা নিয়ে সিপিএমের জলঙ্গি এরিয়া কমিটির সম্পাদক ইমরান হোসেন বলছেন, ‘‘আমরা আগাগোড়াই বলে এসেছি এই ঘটনা ভাগবাটোয়ারার গন্ডগোল। কাটমানি ঠিকঠাক ভাগ হলে সব সমস্যা মিটে যাবে।’’
অন্যদিকে ঘটনার প্রতিবাদে এদিন পঞ্চায়েতের সামনে গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যদের সঙ্গে বেশ কিছু গ্রামবাসীও ধর্নায় বসে। আর তা নিয়েই পঞ্চায়েত চত্বরে শুরু হয় গন্ডগোল, শেষে তা গড়াই হাতাহাতিতে। সেলিনা বিবির অভিযোগ, ‘‘বেশ কিছু গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যরা কিছু গুন্ডা এনে আমাকে মারধর ও হেনস্থা করেছে। গোটা বিষয়টি বিডিওকে জানিয়েছি।’’
জলঙ্গির বিডিও শোভন দাশ বলছেন, ‘‘প্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার পরে তদন্ত শুরু হয়েছে, পঞ্চায়েতে থাকা বেশ কিছু সামগ্রী নিখোঁজ হওয়ায় আমরা প্রধানের কাছে বিষয়টি জানতে চেয়েছি। তারপরেও এদিন উত্তেজিত জনতা পঞ্চায়েত চত্বরে এসে গন্ডগোল পাকায়। আমি এবং সাগরপাড়া থানার ওসি ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিয়ে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছি প্রধানকে।’’
আর গোটা পরিস্থিতিতে অস্বস্তিতে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। জেলা তৃণমূল সভাপতি আবু তাহের খান বলছেন, ‘‘বড় ব্যবধানে জেতার পরেও কেন এমন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে বুঝে উঠতে পারছি না। এদিন কী হয়েছে আমার জানা নেই, খোঁ জ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।’’