অমৃত কুম্ভের সন্ধানে
75th Independence Day

Independence Day 2022: ‘স্বাধীনতা বুড়ো হল, ধর্মযুদ্ধ চলছেই’

দেশের স্বাধীনতার আগে থেকে বহরমপুরের বাসিন্দা হলেও, তাঁদের আদি নিবাস ছিল ডোমকল থানার বেনেখালি পঞ্চানন্দপুরে।

Advertisement
বিদ্যুৎ মৈত্র
বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০২২ ০৮:৫৫
স্বাধীনতার ৭৫ বছর উপলক্ষে মুখ্য ডাকঘরে চিত্র প্রদর্শনী। বহরমপুরে।

স্বাধীনতার ৭৫ বছর উপলক্ষে মুখ্য ডাকঘরে চিত্র প্রদর্শনী। বহরমপুরে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক

দেশের স্বাধীনতার ৭৫ বছর উপলক্ষে তৃপ্তির হাসি হাসছেন অশীতিপর বৃদ্ধ অমৃত গুপ্ত। আজও দেশের স্বাধীনতার কথা উঠলে চোখের পাতা ভারি হয়ে যায় তাঁর। তাঁর আক্ষেপ, “স্বাধীনতা বুড়ো হল, কিন্তু ভেদাভেদ ভুলে দেশ বড় হতে পারল না। ধর্মযুদ্ধে আজও কষ্ট পাই।”

দেশের স্বাধীনতার আগে থেকে বহরমপুরের বাসিন্দা হলেও, তাঁদের আদি নিবাস ছিল ডোমকল থানার বেনেখালি পঞ্চানন্দপুরে। সেখানকার বিখ্যাত গুপ্ত পরিবারের সন্তান তিনি। অমৃতবাবু বলেন, “অখণ্ড ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার কংগ্রেসের প্রথম জেলা সভাপতি ব্রজভূষণ গুপ্ত সম্পর্কে আমার জ্যাঠামশায়। বাবা অন্নদাপ্রসাদ গুপ্ত ছিলেন কবিরাজ।” তাঁদের পরিবারের প্রায় সকলেই দেশের স্বাধীনতাকামী কোনও না কোনও সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। খাগড়া বড়মুড়ির ধারে প্রায় লুপ্ত ব্রজভূষণ গুপ্তের বাড়িতে এসেছিলেন সুভাষ চন্দ্র বসুর মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা।অমৃতবাবুর পরিবারের একাধিক সদস্য পরবর্তীতে অনুশীলন সমিতিতে নাম লিখিয়েছিলেন। তাঁর সেজদা নিতাই গুপ্ত ছিলেন অনুশীলন সমিতির সক্রিয় সদস্য। পরে মুর্শিদাবাদ জেলায় আরএসপি-র জেলা সম্পাদক হয়েছিলেন তিনি। ওই পরিবারের আর এক সদস্য জনমত পত্রিকার সম্পাদক রাধারঞ্জন গুপ্তও (গোষ্ঠ) ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী ও আরএসপি-র অন্যতম নেতা। সে তথ্য ভাগ করে অমৃতবাবু বলেন, “নোয়াখালিতে দাঙ্গার সময় মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গেও ছিলেন সেজদা নিতাই গুপ্ত। ১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তিনি জেলও খেটেছিলেন।”

Advertisement

১৯৪৪ সালে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে নিতাই গুপ্ত ও জ্ঞানেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত মুর্শিদাবাদ জেলা প্রগতি লেখক ও শিল্পী সঙ্ঘের উদ্যোগে একটি প্রগতি সাহিত্য সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন সৈদাবাদ কুঠিবাড়িতে। সেখানে অঙ্কন প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছিলেন অমৃতবাবু। কিন্তু সেই সম্মেলন মঞ্চ থেকেই স্বদেশ প্রেমে দীক্ষিত হন অমৃতবাবু। কণ্ঠে আজও সক্রিয় স্বদেশী গান।

তবে ১৯৪৭ সালে সেই অগস্টের সন্ধ্যায় যে বার্তা তাঁরা পেয়েছিলেন, সেই বার্তা তাঁদের খুশি করতে পারেনি। কারণ, দু’টি দেশে ভাগ হয়ে ভারতবর্ষ স্বাধীন হবে, সে কথা তাঁরা মন থেকে মেনে নিতে পারেননি বলে দাবি অমৃতবাবুর। যদিও তা ছিল ক্ষণস্থায়ী।

অমৃতবাবু বলেন, “শুনেছিলাম মহারাজা শ্রীশ চন্দ্র নন্দী ও নবাব বাহাদুর ওয়াসেফ আলি মির্জার দৌলতে এই মুর্শিদাবাদ ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়।”

তবে জেলার প্রবীণ ইতিহাস চর্চাকারী রমাপ্রসাদ ভাস্কর বলেন, “তাঁদের সেই আবেদনের ভিত্তিতেই মুর্শিদাবাদ ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কারণ যাঁরা এই ভাগ করেছিলেন, তাঁদের কোনও অঞ্চলের আবেগের গুরুত্ব দেওয়ার মতো সময় ছিল না। তবে পদ্মা ও ভাগীরথী নদী দু’টিই পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাচ্ছিল। আর তা হলে ভৌগোলিক সমস্যা দেখা দিতে পারে, এই তথ্যও বিবেচিত হয়েছিল র‌্যাডক্লিফের কাছে। তাই মুর্শিদাবাদ জেলা ও নদিয়ার একাংশকে ভারতে ফিরিয়ে আনা হয় ১৮ অগস্ট।”

আরও পড়ুন
Advertisement