Death

হাঁসখালি: ‘দেখলাম অন্ধকারের মধ্যে রাস্তায় পড়ে আছে মেয়েটা, তার পর যা ঘটে গেল...’

নির্যাতিতাকে বাড়ি পৌঁছে সাহায্যই করেছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর নামে যে ভাবে কুৎসা করা হচ্ছে, তাতে অত্যন্ত ব্যথিত বছর চব্বিশের পলি।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
হাঁসখালি শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২২ ২২:৪০
হাঁসখালিতে নির্যাতিতার বাড়ি।

হাঁসখালিতে নির্যাতিতার বাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।

তখন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা বাজে। মামাবাড়ি যাওয়ার জন্য বেরিয়ে বাসস্ট্যান্ডের কাছে বড় রাস্তার একপাশে নির্যাতিতাকে পড়ে থাকতে দেখেছিলেন তিনি। চলার ক্ষমতা নেই শুনে তিনিই নাবালিকাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছিলেন। নদিয়ার হাঁসখালিতে ধর্ষণ-কাণ্ড নিয়ে চাপানউতরের আবহে আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে গত সোমবারের ওই ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিলেন গাজনা গ্রাম পঞ্চায়েতের শ্যামনগর এলাকার বাসিন্দা পলি বিশ্বাস। নির্যাতিতাকে বাড়ি পৌঁছে সাহায্যই করেছিলেন তিনি। কিন্তু এর পরেও তাঁর নামে যে ভাবে কুৎসা করা হচ্ছে, তাতে যে তিনি অত্যন্ত ব্যথিত, গোপন করেননি বছর চব্বিশের পলি।

শ্মশান পাড়ার কাছে পলির মামাবাড়ি। তিনি জানান, যাওয়ায় সময় শ্যামনগর বাসস্ট্যান্ডের কাছে বড় রাস্তার পাশে একটি বাড়ির সামনে নির্যাতিতাকে পড়ে থাকতে দেখেছিলেন তিনি। পাশে মেয়েটির সাইকেলটিও পড়েছিল। পলি বলেন, ‘‘ওই সময় বাড়িটি থেকে দুই ব্যক্তি বেরিয়ে এসে জানতে চাইল, আমি মেয়েটিকে চিনি কি না। আমি বললাম, না চিনি না। এর পর আমি নিজেই মেয়েটিকে ওঁর নাম জিজ্ঞেস করলাম। কী হয়েছে, কেন এ ভাবে রাস্তার উপর পড়ে রয়েছে, সব জানতে চাইলাম। ও বলল, ‘দাদার বার্থডে পার্টিতে গিয়েছিলাম। শরীর খারাপ লাগছে। তাই বেরিয়ে এসেছি। মাথাটা ভীষণ যন্ত্রণা করছে। তুমি একটু বাড়ি পৌঁছে দাও।’ আমি ওকে বললাম, ‘তুমি সাইকেল নিয়ে চল। আমি পিছন পিছন যাচ্ছি।’ ও রাজি হল না। আমাকেই সাইকেল চালিয়ে দিয়ে আসতে বলল। তখনই আমার সন্দেহ হয়।’’

নাবালিকার কথায় রাজিও হয়ে গিয়েছিলেন পলি। পাশের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসা দুই ব্যক্তিকেও সঙ্গে যেতে অনুরোধ করেছিলেন তিনি। পলি বলেন, ‘‘ওই দুই ব্যক্তির এক জনের নাম আনিস মণ্ডল। ওঁর বয়স ৩৩। আর অন্য এক জনের নাম অনিমেষ মণ্ডল। ওঁর বয়স ৩৭। আর একটা বাচ্চা ছেলেও বেরিয়ে এসেছিল। ওঁর নাম গুড্ডু। ভাল নাম জানি না।’’ নির্যাতিতাকে বাড়ি পৌঁছে দিতে পলির সঙ্গে তাঁরা যেতে রাজি হয়েছিলেন। পলির কথায়, ‘‘মেয়েটিকে নিয়ে আমরা যে দিকে যাচ্ছিলাম, ওটা খুব একটা ভাল জায়গা নয়। আমি মেয়ে মানুষ। আমার একটু ভয়ই করছিল। তাই ওঁদের আমার সঙ্গে যেতে বলেছিলাম।’’

Advertisement

এর পর মেয়েটি সাইকেলে বসতে যাওয়ার সময় তার প্যান্টে রক্তের দাগ দেখতে পান পলি। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথমে বলছিল, মাথা যন্ত্রণা। পরে রক্ত দেখে বুঝলাম, নিশ্চয় গুরুতর কিছু। আমার তখন আবার সন্দেহ হল। জিজ্ঞেস করেছিলাম ওঁকে। কিন্তু ও বলল, ‘কিছু না।’ শুধু বাড়ি পৌঁছে দিতে বলল। তাই, আমিও আর বেশি প্রশ্ন না করে নিয়ে এলাম। ওই দু’জনও আমাদের সঙ্গেই এল। এক জন সাইকেলে। আর এক জন বাইকে চেপে।’’

পলি জানান, নাবালিকা তাঁকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতে চাইছিল না। বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে নামিয়ে দিতে বলছিল। তিনি বলেন, ‘‘কিন্তু আমি তো ও ভাবে ছাড়তে পারব না। মেয়ে এ ভাবে রাস্তার পাশে পড়ে রয়েছে, ওঁর মাকে গোটা ঘটনা বলা আমার কর্তব্য। তাই, আমি বাড়ি পৌঁছে গিয়েছি ওঁদের।’’ নাবালিকার বাড়ি গিয়ে মেয়েকে ডাক্তার দেখানোর কথাও বলেছেন পলি। কিন্তু পলি জানান, তাঁর কথা না শুনে তাঁকেই পাল্টা প্রশ্ন করা শুরু করে মেয়েটির পরিবার। তাঁর কথায়, ‘‘আমি শুধু বললাম, মেয়েকে ডাক্তার দেখান। গায়ে পায়ে রক্ত দেখেছি। এটা শুনে ওঁরা আমাকেই প্রশ্ন করা শুরু করল, আমি কে, কোথায় থাকি ইত্যাদি। এর পর আমি আর কথা না বাড়িয়ে বেরিয়ে এসেছে ওখান থেকে। তার পর দিন থেকে যা যা শুনছি আর দেখছি!’’

সোমবার রাতের ওই ঘটনা যে এমন মোড় নেবে, তা কল্পনাই করেননি পলি। তিনি শুধু সাহায্যই করেছিলেন ওই নাবালিকাকে। এর পরেও যে ভাবে তাঁর নামে ‘কুৎসা’ হচ্ছে এই ঘটনায়, তাতে খানিক অবাক তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আমি তো বাড়ি পৌঁছে দিয়েছিলাম মেয়েটাকে। আমার কী দোষ বুঝতে পারছি না।’’

আরও পড়ুন
Advertisement