কেক কেটে নেতার জন্মদিন পালন (উপরে)। নিজস্ব চিত্র।
কেউ বলছেন, দলের অন্যতম এই শীর্ষ নেতা তাঁর ‘অনুপ্রেরণা’। কেউ বলছেন, তিনিই ‘আসল জননেতা’। ‘দাদা’র জন্মদিন উদযাপনে কেউ কাটলেন কেক। কেউ আবার দুঃস্থদের খাদ্যসামগ্রী বিলি করলেন। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের জন্মদিনে সোশাল মিডিয়াও ভেসে গেলে শুভেচ্ছা-বার্তায়।
রবিবার ছিল তৃণমূল সাংসদ তথা দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৩৫তম জন্মদিন। এদিন রাজ্য জুড়ে তাঁর জন্মদিন পালন করেছেন দলীয় নেতারা। মুর্শিদাবাদ জেলাতেও তৃণমূলের ছোট, মেজো, বড় মাপের নেতারা তাঁর জন্মদিনে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন। তালিকায় রয়েছেন একদা পোড়খাওয়া বামনেতা বর্তমানে রাজ্যের শাসকদলের এক বিধায়কও। দলের এই সাংসদকে ‘যুব সমাজের অনুপ্রেরণা’ আখ্যা দিয়ে অভিনন্দন জানাতে ভোলেননি তিনি। তবে রাজনীতির কারবারিদের একাংশ দলনেতার জন্মদিনে দলের ছোট, মাঝারি নেতাদের এই ‘উচ্ছ্বাস’ দেখে মুচকি হাসছেন। তাঁদের মতে, এঁদের অনেকেই নিজেদের পদ চলে যাওয়া নিয়ে শঙ্কিত। নেতার জন্মদিন নিয়ে তাঁদের এই ‘গদগদ’ ভাবের পিছনে সেই ‘শঙ্কাই’ কাজ করেছে।
জঙ্গিপুরের সাংসদ খলিলুর রহমান অবশ্য তা মানতে চাননি। তাঁর মতে, “এটাই শিষ্টাচার। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দলের একজন প্রতিষ্ঠিত নেতা ও সাংসদ। তাঁকে ঘিরে দলের কর্মী-নেতাদের আবেগ থাকাটাই স্বাভাবিক। বিরোধী দলের বহু নেতাকেও জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান আমাদের নেতারা। সেটা তো কিছু পাওয়ার আশায় নয়। সৌজন্য প্রকাশকে এ ভাবে ভাবা ঠিক নয়।” এদিন অভিষেকের ৩৪ বছর পূর্ণ হল। সেই উপলক্ষে জেলা জুড়ে তৃণমূলের কর্মী ও নেতাদের মধ্যে কার্যত চলল সোশ্যাল মিডিয়ায় শুভেচ্ছা, অভিনন্দন জানানোর প্রতিযোগিতা। দলের প্রবীণ মন্ত্রী সুব্রত সাহা, সাংসদ খলিলুর রহমানের মতো নেতারাও অভিনন্দন জানান। সুতির বিধায়ক ইমানি বিশ্বাসের ফেসবুক ওয়াল থেকে ১২টি শুভেচ্ছা বার্তা পোস্ট করা হয়েছে। অভিষেককে সেখানে ‘বাংলার যুবরাজ’ আখ্যা দেওয়া হয়। মুর্শিদাবাদের সাংসদ আবু তাহেরের মতে তিনি ‘আগামীর কান্ডারি’। অভিষেকের প্রশংসায় অন্যের লেখা ১১ লাইনের একটি কবিতাও জুড়ে দেন তিনি নিজের ওয়ালে। মুর্শিদাবাদ ইউনিটে দলীয় সভাপতি শাওনি সিংহরায় শুভেচ্ছা জানান,‘সকল মনোবাসনা পূর্ণ হোক’ লিখে। জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ রাজীব হোসেন অভিষেকের প্রশংসায় নিজের ওয়ালে অন্যের লেখা চার লাইনের কবিতা যোগ করেছেন। তাঁর ওয়ালে অভিষেককে নিয়ে পোস্ট করা হয়েছে একটি গানও। মদনপুরে তৃণমূল সাংসদের জন্মদিন পালিত হয় কেক কেটে। সেখানকার পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি আসিফ আহমেদ কেক কেটে সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ছবি ছড়িয়ে দেন। বহরমপুরের তৃণমূল নেতা নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায়, ডোমকলের বিধায়ক জাফিকুল ইসলাম, জেলা পরিষদ সদস্য অশেষ ঘোষরা শুভেচ্ছা জানান।
রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা জঙ্গিপুরের বিধায়ক জাকির হোসেন অভিষেকের সঙ্গে নিজের একটি ছবি পোস্ট করে ইংরেজিতে তাঁকে ‘ডিয়ার বস’ সম্বোধন করে লিখেছেন, ‘ইয়োর ডেডিকেশন, ডিটারমিনেশন অ্যান্ড ভিশন ইন্সপায়ার আস টু অলওয়েজ় গিভ আওয়ার বেস্ট’ বলে। খলিলুর রহমান তাঁর ওয়ালে অভিষেকের পাঁচটি ছবি দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। জেলার দুই মন্ত্রী আখরুজ্জামান এবং সুব্রত সাহা অভিষেকের সঙ্গে নিজেদের ছবি পোস্ট করে তাঁকে শুভেচ্ছা জানান। শমসেরগঞ্জের বিধায়ক আমিরুল ইসলাম তাঁকে ‘জন্মদিনে আন্তরিক শুভেচ্ছা’ জানান। সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক তথা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তোয়াব আলি বলছেন, ‘‘জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানানো নিশ্চয় সৌজন্য। কিন্তু সৌজন্যের আড়ালে স্তাবকতা চাপা থাকে না। লড়াই, সংগ্রামের মধ্য দিয়ে উঠে আসা ব্যক্তিই কারও অনুপ্রেরণা হতে পারে। আসলে পদ পেতে ও বাঁচাতে প্রতিযোগিতা চলছে শাসকদলে।’’