মঙ্গলকাব্যে কথিত দেবী পূজিত হন রাসে

রাসে নবদ্বীপে গঙ্গা মূর্তি পুজো প্রচলন বহু বছরের। পুরাণ কথিত কাহিনী অবলম্বনে ভগীরথের মর্ত্যে মকরবাহিনী গঙ্গা আনয়নের দৃশ্যকল্পই ফুটে ওঠে সুবিশাল প্রতিমার নির্মাণ শৈলীতে।

Advertisement
দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় 
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:৪৯
নজরে রাস, গঙ্গা মাতা, বেগুনিয়া পাড়া। নদিয়ার নবদ্বীপ।

নজরে রাস, গঙ্গা মাতা, বেগুনিয়া পাড়া। নদিয়ার নবদ্বীপ। ছবি: প্রণব দেবনাথ।

নবদ্বীপের রাস উৎসবে এক তিথিতে পূজিত নানা দেবদেবী। এ এক আশ্চর্য মহামিলন বটে। বিশুদ্ধ শাক্ত, বৈষ্ণব, শৈবমূর্তির সঙ্গেই পূজিত হন মিশ্রধারার প্রতিমা। বিরোধ নয় বরং পঞ্চোপাসক সনাতন ধর্মের সার্বিক সমন্বয়ের উৎসবে পরিণত হয়েছে নবদ্বীপের রাস। ঘুরে দেখল আনন্দবাজার।

Advertisement

শবশিবা মাতা
(ব্যাদড়া পাড়া)

মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের অর্থানুকূল্যে শঙ্করনাথ তর্কবাগীশ শক্তিমূর্তি গড়ে রাস পূর্ণিমায় পুজো শুরু করেন ১৭৫২-৫৬ সালের মধ্যবর্তী কোনও এক বছরে। স্থানীয় গবেষকদের মতে, শঙ্করনাথ এলানিয়া কালীর পুজোর পরের বছরই ব্যাদড়াপাড়ার ব্রাহ্মণেরা তাঁদের পল্লিতে শবশিবা পুজো শুরু করলেন। একই মূর্তির পুজো হল আমপুলিয়া পাড়াতেও। সে হিসাবে নবদ্বীপে রাসের দ্বিতীয় প্রাচীন মূর্তিটি হল শবশিবা মাতা। এই প্রসঙ্গে ব্যদড়া পাড়া শবশিবা মাতা পুজো উদ্যোক্তারা জানান, শবশিবা মাতা আদতে কৃষ্ণচন্দ্রের গুরুদেব চন্দ্রশেখর ভট্টাচার্যের ইষ্টদেবী। এখন যেখানে পুজো হয় সেটি ছিল তাঁর ভিটে। আজ থেকে কমবেশি দেড়শো বছর আগে তাঁরা এখান থেকে চলে যান। পুজোর ভার তুলে নেন এই অঞ্চলের বর্ধিষ্ণু ব্রাহ্মণেরা। যাদের মধ্যে অন্যতম পূর্ণচন্দ্র ভট্টাচার্য, তার কন্যা ভগবতীদেবী, নসুজীবন ভট্টাচার্য প্রমুখ। সময়টা ১৮৭০ সালের আশেপাশে। কালক্রমে সকলের যোগদানে পুজো হয়ে ওঠে সর্বজনীন। কালীমূর্তির নীচে পর পর দু’টি শিব। এক দম নীচে শবরূপী শিব। তাঁর উপরে সপ্রাণ শিব। পুজো কমিটির তরফে সৌমিক সিংহ বলেন “ব্যাদড়াপাড়ার অধিবাসী এবং সদস্যদের সহযোগিতায় এই পুজোর আয়োজন হয়। এ বারে পুজোর বাজেট প্রায় দু’লক্ষ টাকা।”

গঙ্গা মাতা
(বেগুনিয়া পাড়া)

রাসে নবদ্বীপে গঙ্গা মূর্তি পুজো প্রচলন বহু বছরের। পুরাণ কথিত কাহিনী অবলম্বনে ভগীরথের মর্ত্যে মকরবাহিনী গঙ্গা আনয়নের দৃশ্যকল্পই ফুটে ওঠে সুবিশাল প্রতিমার নির্মাণ শৈলীতে। একাধিক গঙ্গা মূর্তির মধ্যে অন্যতম বড় প্রতিমা হল বেগুনিয়া পাড়ার গঙ্গা। সেটা ছিল ১৯৭২ সাল। পাড়ার কয়েক জন যুবক গোপাল সেন, সাহেব পাল, গৌড় পাল, কালী পাল প্রমুখদের প্রবল ইচ্ছা, রাসে পাড়ায় একটা পুজো হোক। অনেক খুঁজে শেষে এক পালবাড়িতে গিয়ে দেখা গেল একটি মাত্র গঙ্গা প্রতিমা অবিক্রিত পড়ে আছে। দরদাম করে তিন টাকায় সেই প্রতিমা কিনে শুরু হয় বেগুনিয়া পাড়ার রাস। সেই পুজো এবার ৫২ বছরে পদার্পণ করেছে। সম্পাদক বাসুদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পাড়ার সব পরিবারের সমবেত প্রচেষ্টায় পুজো সম্পন্ন হয়। এ বছর প্রতিমার উচ্চতা প্রায় সাড়ে ২৮ ফুট। সম্ভবত এটি এ বারের রাসে নবদ্বীপের সর্বোচ্চ প্রতিমা।” সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়। পুজোর বাজেট এ বার তিন লক্ষ টাকা।

কমলেকামিনী মাতা (উডবার্ন রোড)

নবদ্বীপের রাসের স্বাতন্ত্র্য তার মূর্তির বৈচিত্র্যে। মঙ্গলকাব্য থেকে উঠে আসা দেবী কমলেকামিনীর দেখা মিলবে রাসে। শ্রীহট্ট থেকে নবদ্বীপে স্মৃতিশাস্ত্র পড়তে আসা অশ্বিনী কুমার স্মৃতিরত্ন এই পুজোর সূচনা করেছিলেন বলে জানান তাঁর পরিবারের উত্তরসূরী সুশান্তকুমার ভট্টাচার্য। তাঁর মতে, “শুরুর সঠিক সাল জানা না-গেলেও বেশ কয়েক বছর পুজোর পর ১৯১৪ সালে অশ্বিনীকুমার মারা যান। তার পর আমার ঠাকুরদা শশীমোহন পুজোর দায়িত্ব নেন।
বর্তমান আমরা পঞ্চম পুরুষ ওই পুজো করছি।” এলাকাবাসীর সাহায্যে হওয়া ওই পুজো
পরিচালনার দায়িত্ব ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত নবদ্বীপ তরুণ সঙ্ঘ গ্রহণ করে। আয়োজকদের তরফে মলয়কুমার সাহা বলেন, “এ বারে আমাদের পুজোর বাজেট প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা।”

আরও পড়ুন
Advertisement