Ranaghat robbery case

রানাঘাটের ডাকাতিকাণ্ডে বিচারপ্রক্রিয়া শেষ ১ মাস ২২ দিনে! দোষী সাব্যস্ত পাঁচ অভিযুক্ত

রানাঘাটের স্বর্ণবিপণিতে ডাকাতিকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত করা হল পাঁচ অভিযুক্তকে। বৃহস্পতিবার দোষীদের সাজা ঘোষণা হবে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
রানাঘাট শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২৪ ২০:১১

—ফাইল চিত্র।

রানাঘাটের স্বর্ণবিপণিতে ডাকাতিকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত করা হল পাঁচ অভিযুক্তকে। বৃহস্পতিবার দোষীদের সাজা ঘোষণা হবে। বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হওয়ার মাত্র এক মাস ২২ দিনের মধ্যে মামলা শেষ করে দেশের মধ্যে নজির স্থাপন করল রানাঘাট ফাস্টট্র্যাক আদালত। তথ্যপ্রমাণের জন্য প্রথম বার ব্যবহৃত হল ‘বিআইএস কেয়ার’ অ্যাপ। খুনের চেষ্টা, ডাকাতি, একত্রিত হয়ে অপরাধ সংগঠন, অস্ত্র আইন-সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে অভিযুক্তদের। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সরকারি আইনজীবী। পাল্টা উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথা ভাবছেন অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবীরা।

Advertisement

আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর ২৮ অগস্ট রানাঘাট মিশন রোডের পাশে থাকা একটি প্রসিদ্ধ স্বর্ণবিপণিতে ডাকাতির ঘটনায় আট জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার হন তিন জন। তাঁদের মধ্যে এক জনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পুলিশ উদ্ধার করে। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় অন্যতম অভিযুক্ত মণিকান্ত যাদবের। ধৃত চার অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করে তদন্ত শেষ হয়। গত বছর ২৯ নভেম্বর চার্জ গঠনের পর শুরু হয় বিচার প্রক্রিয়া। আট দিনে শেষ হয় ৬৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ। চার্জ গঠনের পর থেকে মাত্র এক মাস ২২ দিনের মধ্যে বুধবার ২৪ জানুয়ারি শেষ হয় বিচারপ্রক্রিয়া। বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে ধৃত চার জনকে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৭, ৩৯৫, ৩৯৭, ৩৫৩, ৪১২, ১২০ (বি ) এবং অস্ত্র আইনের ৩৪, ২৫ ও ২৭ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়। বৃহস্পতিবার রানাঘাট ফাস্টট্র্যাক আদালতের বিচারক মনোদীপ দাশগুপ্তের এজলাসে সাজা ঘোষণা হবে। অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পক্ষে সওয়াল করেছেন সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায়। তদন্তে অসঙ্গতি রয়েছে বলে সওয়াল করে মক্কেলদের বেকসুর খালাসের জন্য উচ্চতর আদালতে আবেদন জানানো হবে বলে জানান অভিযুক্তদের আইনজীবী বাসুদেব মুখোপাধ্যায়।

সরকারি আইনজীবী বিভাস বলেন, ‘‘অনেক দিক থেকে এই মামলাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিচারপ্রক্রিয়ায় মোট ১৬৪টি সাক্ষ্য প্রমাণ গৃহীত হয়েছে। এক সঙ্গে ৪০টি মেটেরিয়াল এভিডেন্স গৃহীত হয়েছে। ৩৫০ পাতার বক্তব্য আমাদের পক্ষ থেকে আদালতে জমা দেওয়া হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের প্রায় ১৫০টি রায় বক্তব্যের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছিল। সেন্ট্রাল সায়েন্স ফরেন্সিক ল্যাবরেটরির বিশেষজ্ঞদের একাধিক তথ্যপ্রমাণ গৃহীত হয়েছিল। সিসিটিভির ফুটেজ অন্যতম প্রমাণ হিসেবে আদালত গ্রহণ করেছে। বিরলতম সংগঠিত অপরাধের ঘটনা হিসাবে অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ সাজার দাবি জানাচ্ছি।’’ আসামি পক্ষের আইনজীবী বাসুদেব বলেন, ‘‘তদন্তে একাধিক অসঙ্গতি রয়েছে। সাক্ষ্যদের বয়ানে স্ববিরোধিতা আছে। সব দিক বিবেচনা করে মক্কেলদের বেকসুর খালাস পাওয়া উচিত ছিল। উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথা ভেবেছি।’’

ডাকাতির ঘটনার ৭২ দিনের মাথায় রানাঘাট আদালতে প্রায় ৯০০ পৃষ্ঠার চার্জশিট আদালতে জমা দেয় পুলিশ। মোট ৬৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। তবে তিন অভিযুক্ত এখনও পর্যন্ত অধরা। তাদের খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। বসিরহাটের বাদুড়িয়ার বাসিন্দা হাসনুর জামান, হাওড়ার বাসিন্দা অঙ্কিতকুমার যাদব, ক্লোজ় সার্কিট ক্যামেরার টেকনিশিয়ান সৌরভ চক্রবর্তী, গয়নার দোকানের কর্মী পম্পা কুণ্ডু ও সুস্মিতা দাস এবং রানাঘাট থানার সাব-ইনস্পেক্টর আলতাব হোসেন সাক্ষ্য দেন। অঙ্কিতকুমার যাদব ও হাসনুর জামান বিচারককে জানান, তাঁদের মোটরবাইকের নম্বর হুবহু এক রেখে পৃথক নম্বর প্লেট ব্যবহার করা হয়েছে। ডাকাতির দিন পুলিশের বাজেয়াপ্ত করা মোটরবাইক দু’টি তাঁদের নয়। তৃতীয় সাক্ষী ছিলেন সৌরভ চক্রবর্তী।

পুলিশের অভিযানে ধরা পড়েন পাঁচ অভিযুক্ত। ধৃতদের নাম কুন্দনকুমার যাদব, রাজুকুমার পাসোয়ান, ছোট্টু পাসোয়ান, মণিকান্ত যাদব ও রিক্কি পাসোয়ান। ধৃতদের প্রত্যেকের বাড়ি বিহারে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গত ৭ সেপ্টেম্বর রাতে কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে মণিকান্তের। তবে তাঁর নাম চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়া হয়নি। পুলিশের দাবি, যে তিন অভিযুক্ত এখনও পর্যন্ত অধরা, তাঁদের বিহারের ঠিকানা পাওয়া গেলেও, সেই ঠিকানায় তাঁরা নেই।

আরও পড়ুন
Advertisement