JU Student death

নিভল স্বপ্নদীপ, ছেলের মৃত্যুতে স্তব্ধ সকলেই

মামি অপর্ণা কুন্ডু বলেন, “ছোটবেলা থেকেই স্বপ্নদীপ বাংলা পড়তে পছন্দ করত। গল্পের বই পড়তে ভালবাসত। প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পুরস্কার পেত।”

Advertisement
সুস্মিত হালদার
বগুলা শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০২৩ ১০:৩৯
মৃত স্বপ্নদীপ কুন্ডুর বাড়ির সামনে স্থানীয়েরা। বগুলায়। নিজস্ব চিত্র

মৃত স্বপ্নদীপ কুন্ডুর বাড়ির সামনে স্থানীয়েরা। বগুলায়। নিজস্ব চিত্র

স্বপ্নদীপ কুন্ডুর অস্বাভাবিক মৃত্যুসংবাদে কার্যত হতবাক তাঁর স্কুলের শিক্ষক থেকে সহপাঠী। প্রতিবেশীরা ঘটনার পর দিনও বিশ্বাস করে উঠতে পারছেন না। বুঝতে পারছেন না যে, এই দুই-তিন দিনের মধ্যে কী এমন ঘটল, যাতে এ ভাবে মরতে হল শান্ত স্বভাবের ছেলেটাকে? তাঁরা কেউ কোনও দিনই স্বপ্নদীপকে অবসাদে ভুগতে দেখেননি। বরং স্বপ্ন দেখা এক জন পড়ুয়াকে দেখেছেন।

Advertisement

স্বপ্নদীপের মা আদর কুন্ডু এক জন আশাকর্মী। বাবা রামপ্রসাদ কুন্ডু একটি সমবায় ব্যাঙ্কের অস্থায়ী কর্মী। এই বছরই বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক ৭৮ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশ করেন তিনি। সহপাঠী-ঘনিষ্ঠ বন্ধু সৌম্যজিৎ ভৌমিক বলছেন, “ফাইভ থেকে এক সঙ্গে পড়েছি। লাজুক, শান্ত প্রকৃতির ছিল। উচ্চমাধ্যমিকে তেমন নম্বর না পেলেও হতাশ হতে দেখিনি। বরং বাংলা নিয়ে পড়ে ভাল নম্বর পেয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা বলত।”

প্রতিবেশীরা জানান, স্বল্প আয়ের মধ্যেও কুন্ডু দম্পতি তাঁদের সন্তানদের পড়ার জন্য কোনও অভাব রাখতেন না। স্বপ্নদীপ কার্যত বইয়ের মধ্যে ডুবে থাকতেন। উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়লেও তাঁর ভালবাসা ছিল বাংলার প্রতি। অন্য দিকে, স্কুলের শিক্ষকেরা জানিয়েছেন, স্বপ্নদীপ বিজ্ঞান নিয়ে পড়লেও দারুণ মেধাবী ছিলেন না। অঙ্কের শিক্ষক অনুপকুমার পাল বলেন, “স্বপ্নদীপ সাধারণ ছাত্র ছিল। তবে মনযোগী ছিল। পঞ্চম শ্রেণি থেকে পড়াচ্ছি। কোনও দিন ফাঁকি মারতে দেখিনি।” জীববিদ্যার শিক্ষক বিকাশ মণ্ডল বলেন, “ছাত্র হিসাবে যে খুব মেধাবী ছিল, সেটা বলব না। তবে খুবই বাধ্য ছিল। সময়মতো সমস্ত কাজ করে নিয়ে আসত। চেষ্টা ছিল খুবই।”

মুখচোরা শান্ত ছাত্রের নাম করতেই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন বাংলা শিক্ষক প্রণব বসু। তিনি বলছেন, "বিজ্ঞান নিয়ে পড়লেও বাংলার প্রতি এক অদ্ভুত টান ছিল স্বপ্নদীপের। ক্লাসের বাইরেও নানা প্রশ্ন নিয়ে আমার কাছে চলে আসত। প্রশ্ন করত। স্কুলের প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় নিয়মিত অংশ নিত। জানতে চাইত, কী ভাবে লেখাকে আরও উন্নত করা যায়।”

একই কথা বলছেন স্বপ্নদীপের আত্নীয়-স্বজনেরাও। মামি অপর্ণা কুন্ডু বলেন, “ছোটবেলা থেকেই স্বপ্নদীপ বাংলা পড়তে পছন্দ করত। গল্পের বই পড়তে ভালবাসত। প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পুরস্কার পেত।” তিনি বলেন, “চাকরি পাওয়া সহজ বলে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়তে চেয়েছিল। কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে তেমন নম্বর না পাওয়ায় বাংলা নিয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত নেয়।”

রবিবার স্বপ্নদীপের বাবা-মা তাঁকে কলকাতার হস্টেলে রেখে আসেন। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ মার সঙ্গে তাঁর শেষ কথা হয়। বাবা রামপ্রসাদ কুন্ডু বলেন, “ফোন করে বলেছিল— ‘প্রচণ্ড চাপে আছি। মা তুমি এসো, বাবা তুমি এসো। আমায় বাঁচাও। আমি ভয়ের মধ্যে আছি।’ তার কিছু ক্ষণ পরে আমাদের ফোন করে বলা হয় যে, ও পড়ে গিয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।”

খবর পেয়ে রাতেই গাড়ি নিয়ে কলকাতার হাসপাতালে রওনা দেন রামপ্রসাদ। সঙ্গে স্বপ্নদীপের মামা। রামপ্রসাদ বলেন, “আমায় ছেলেকে দেখতে দেওয়া হয়নি। বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি ওর মায়ের সামনে কী করে দাঁড়াব, বুঝতে পারছি না।” এ দিন বিকেল পর্যন্ত স্বপ্নদীপের বাবা-মাকে তাঁদের ছেলের মৃত্যুসংবাদ জানতে দেওয়া হয়নি, বাবাকে হাসপাতাল থেকেই ফেরত পাঠানো হয়েছে রানাঘাটে। তবে ছেলের মারাত্মক কোনও ক্ষতির কথা আঁচ করেছেন বাবা। ওই পড়ুয়ার বাবা-মা দু’জনেই রয়েছেন রানাঘাটে স্বপ্নদীপের মামাবাড়িতে।

প্রাণবন্ত ছেলেটির মর্মান্তিক পরিণতির কথা বিশ্বাস করতে পারছেন না কেউই। প্রতিবেশীদের ধারণা, হস্টেলে র‍্যাগিংয়ের কারণেই এই পরিণতি। প্রতিবেশী সুচিত্রা আচার্য, বুলন আচার্য বলছেন, “অত্যন্ত নরম মনের ছেলে হওয়ায় হস্টেলের র‍্যাগিং নিতে পারেনি। আমরা চাই, প্রকৃত সত্য উঠে আসুক।”

আরও পড়ুন
Advertisement