তোজাম্মেলকে ঘিরে পড়শিরা। নিজস্ব চিত্র
একমাত্র ছেলে তোজাম্মেল হক আনসারি ইউক্রেনের কিভ মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারি পড়তে গিয়ে যুদ্ধের মধ্যে আটকে পড়েছিলেন সেখানে। দশ দিনের আতঙ্ক, বিপদ কাটিয়ে হাঙ্গেরি সীমান্ত পেরিয়ে রবিবার সকালেই ফিরেছেন জঙ্গিপুরের বাড়িতে। আর বাড়ি ফিরতেই যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের দশ দিনের সেই গল্প শুনতেই ভিড় করলেন পড়শিরা তাঁর বাড়ির দাওয়ায়। ৬ বছরে আরমান থেকে ৬০ বছরের বৃদ্ধ গফুর মহম্মদ সকলেই হাজির।
কোথায় ইউক্রেন, ৬ হাজার কিলোমিটার দূরে। একের পর মিসাইলে বিধ্বস্ত সেই ইউক্রেনে এখন মায়ের হাত ধরে শিশুরা ঘুরছে, একটু খাবারের জন্য। জলের জন্য। সেই গল্পই শুনলেন তোজাম্মেলের শতাধিক পড়শি। কারও চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে জল, কেউ বা নিজের কোলের ছোট্ট শিশুর মধ্যেই রাস্তায় খাবারের জন্য ঘুরে বেরানো ইউক্রেনীয় শিশুকে খুঁজে পেয়ে বুকে জাপটে ধরল তাকে।
তোজাম্মেল বলছেন, “২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সব ঠিক ছিল সেখানে। যথারীতি ক্লাসও করেছি। তার পরদিন থেকেই গোলাগুলির শব্দে আতঙ্ক নেমে আসে। টানা ৫টা দিন বেসমেন্টে। রাস্তায় ঘুরছে যুদ্ধের ট্যাঙ্ক। মাইনাস ৪ ডিগ্রি ঠান্ডা আর না পেরে বেরিয়ে পড়লাম। বিপদ এড়াতে প্রত্যেকের হাতে ভারতের জাতীয় পতাকা। সেই পতাকা দেখে আর কেউ বাধা দেয়নি আমাদের। এভাবেই তাঁরা পৌঁছন কিভ সেন্ট্রাল স্টেশনে। সেখান থেকে ট্রেনে ৬০০ কিলোমিটার পেরিয়ে পৌঁছন লাভিজে। কিন্তু কোনও ট্রেনেই চাপতে দেওয়া হয়নি তাঁদের সেখানে। তাঁর কথায়, ‘‘ভোর হতেই স্টেশন থেকে বেরোলাম, যদি কোনও ব্যবস্থা করতে পারি। নিজেরাই ক্যাব ভাড়া করে ২৬০ কিলোমিটার পেরিয়ে যাই হাঙ্গেরির সীমান্তে। বার বার পথ আটকেছে সেনারা। কিন্তু ভারতীয় ছাত্র বলে ছেড়ে দিয়েছে। অবশেষে পেরোলাম হাঙ্গেরির সীমান্ত।” আনসারির বিবরণ সকলেই শুনছেন মন্ত্রমুগ্ধের মতো। হাঙ্গেরির সেনাবাহিনীর প্রশংসা করে আনসারি বলেই চলেন, “সীমান্ত পেরোতেই প্রত্যেকের জন্য প্রথমেই শুকনো খাবার দেয় তারা। চিকিৎসার পর তারাই নিয়ে যায় পুলিশ স্টেশনে। পরে আমাদের রিসিভ করে ভারতীয় দূতাবাস। হোটেলে রাখে তারা। সেখান থেকে বেরিয়ে ট্যাক্সি ধরে বিমানবন্দর। সেখান থেকে বিমানে মুম্বই।’’