Krishnanagar Paddy buying

চাষির অ্যাকাউন্ট ‘ভাড়া’ নিয়ে ধান বিক্রির নালিশ

অন লাইনে ধান বিক্রির আবদনের একটা বড় অংশ বেলা বারোটার পর জমা পড়ছে। আর সেই ধান মান্ডিতে আনা হচ্ছে বিকেল চারটের পর।

Advertisement
সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণনগর  শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:৫৮

—ফাইল চিত্র।

একেবারে শেষ বেলায় মান্ডিতে ঢুকছে শ’য়ে শ’য়ে বস্তাভর্তি ধান। কিন্তু সেই ধানের মালিক কে বা কারা, তা নিয়েই সন্দেহ প্রকাশ করছেন খোদ মিল মালিকরাই। কারা সেই ধান বিক্রি করছে তা খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

Advertisement

অন লাইনে ধান বিক্রির আবদনের একটা বড় অংশ বেলা বারোটার পর জমা পড়ছে। আর সেই ধান মান্ডিতে আনা হচ্ছে বিকেল চারটের পর। অর্থাৎ সন্ধ্যে নামার কিছু আগে। অথচ সেখানে চাষিদের দেখা মিলছে না। বরং কিসান মান্ডি বা ‘সেন্ট্রালাইজ পারচেজ সেন্টার’- এর ভিতরে দেখা যাচ্ছে হাতে গোনা কয়েকজন। এমনই অভিযোগ মিল মালিকদের। এখানেই প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কারা ওই ধান নিয়ে আসছে? তারা কি প্রকৃতই চাষি নাকি অন্য কেউ। কেন একেবারে শেষ মুহূর্তে অনলাইনে আবেদন করছে আর কেনই বা প্রায় সন্ধে নাগাদ মান্ডিতে ধান নিয়ে আসা হচ্ছে?

মিল মালিকদের অভিযোগ, শীতকাল বলে চারটের পর আলো বেশ কমে যায়। প্রায় অন্ধকারে ধানের গুনগত মান পরীক্ষা করে দেখা সম্ভব হয় না। আর তাই সুযোগ নিয়ে নিম্নমানের ধান গছিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আরও অভিযোগ, চাষিরা নয়, ধানের বস্তা নিয়ে আসছে ফড়েরা।

নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট রাইস মিলারস অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক সুমন ঘোষ বলেন, “যারা সন্ধ্যার আগে আগে ধান নিয়ে আসছে তারা কারা? কেনই বা সেই সময় চাষিদের দেখা মিলছে না এটা খতিয়ে দেখার দাবি জানাচ্ছি প্রশাসনের কাছে। আমাদের সন্দেহ এরা ফড়়ে বা মধ্যস্বত্ব ভোগী।”

চাষির বায়োমেট্রিক বা আঙুলের ছাপ দিয়ে ধান বিক্রি করতে হয়। তাহলে কী ভাবে চাষির পরিবর্তে অন্য কেউ ধান বিক্রি করবে? কী ভাবেই বা ফড়েদের মাধ্যমে ধান কেনা সম্ভব? মিল মালিক থেকে চাষিদের অনেকের অভিযোগ, কিসান মান্ডিগুলিতে একটা চক্রে কাজ করছে। তারা এমন পরিকল্পিত ভাবে সব সাজিয়ে রেখেছে যে সহজে প্রমাণ করা সম্ভব নয়। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে চাষিদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ‘ভাড়া’ দেওয়ার বিষয় নিয়ে। কী ভাবে তা হচ্ছে?

জানা যাচ্ছে, একজন চাষি তাঁর জমির পরিমাণ অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৯০ কুইন্টাল করে ধান বিক্রি করতে পারেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চাষিরা সাধারণত ৩০ কুইন্টাল করে ধান বিক্রি করছেন। আর এখানেই লুকিয়ে আসল গল্প। মিল মালিক থেকে শুরু করে ধান বিক্রি করতে আসা চাষিদের অনেকেই জানাচ্ছেন, বেশিরভাগ চাষি ৩০ কুইন্টাল বা তার বেশি ধান বিক্রি করেন না। অনেক ক্ষেত্রে কেউ পাঁচ, এমনকী দশ কুইন্টাল ধান বিক্রি করেন। আর সে ক্ষেত্রে সেই চাষির হয়ে বাকি পরিমাণ ধান বিক্রি করছে ফড়েরা। জেলার এক মিল মালিকের কথায়, “ফড়েরা চাষিদের নামে ধান বিক্রি করে। অনেক সময় চাষি এসে ফড়ের হয়ে বায়োমেট্রিক দিয়ে যাচ্ছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে কোনও চাষির অ্যাকাউন্টে ধান বিক্রির টাকা জমা হলে তা থেকে কিছু টাকা অ্যাকাউন্ট ভাড়া হিসাবে কৃষককে দেওয়া হচ্ছে।”

কিন্তু চাষিরা কেন অপেক্ষাকৃত কম দামে ফড়েদের কাছে ধান বিক্রি করবেন? চাষিদেরই একাংশ জানাচ্ছেন, বাড়ি থেকে কিসান মান্ডি পর্যন্ত ধান বয়ে আনায় সমস্যা অনেক। তা ছাড়া সরকার থেকে ধান নিয়ে আসার জন্য যে পরিবহণ খরচ দেওয়া হয় বাস্তবে খরচ হয় তার চেয়ে বেশি। তার উপর একটা দিন পুরো নষ্ট হয়। বদলে ফড়েরা বাড়িতে হাজির হয়ে ধান কিনে নিয়ে যায়। তা ছাড়া, ধান বিক্রির টাকায় দেনা শোধের পাশাপাশি পরবর্তী চাষের খরচ জোগাড় করার জন্যও অনেক চাষি ফড়েদের কাছে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হন।

নদিয়ার জেলাশাসক এস অরুণ প্রসাদ অবশ্য বলছেন, “বায়োমেট্রিক দিয়ে ধান বিক্রি করতে হয়। ফলে চাষি ছাড়া অন্য কারও পক্ষে ধান বিক্রি করা সম্ভব নয়। তবে অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হবে।”

আরও পড়ুন
Advertisement