Cattle Smuggling

রাতের রাখালেরাই পার করিয়ে দিত গরুর পাল

বিশেষ করে মহখোলা থেকে রাঙ্গিয়ারপোতা, হুদোপাড়া  এলাকায় কাঁটাতার না থাকায় এই এলাকা ছিল কার্যত স্বর্গরাজ্য।

Advertisement
সুস্মিত হালদার
শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২২ ০৯:৫০

প্রতীকী ছবি।

মুর্শিদাবাদ ও উত্তর ২৪ পরগনার মতো না হলেও কয়েক বছর আগেও নদিয়ার সীমান্ত দিয়ে রমরমিয়ে চলত গরু পাচার। কোটি কোটি টাকার লেনদেন হত।

কিন্তু ২০১৪-১৫ সাল থেকেই ছবিটা একটু-একটু করে পাল্টে গিয়েছে। তার একটা কারণ পুলিশ এবং বিএসএফের কড়াকড়ি। যদিও কিছু দিনের মধ্যেই জেলা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে বিএসএফ। তাদের অভিযোগ ছিল, পুলিশ আটকাচ্ছে না বলেই সীমান্ত পর্যন্ত চলে আসছে গরু। তবে সম্প্রতি গরু পাচার মামলায় অনুব্রত মণ্ডলেরা গ্রেফতার হওয়ার পরে পরিস্থিতি আবার পাল্টে গিয়েছে। এক সময়ে মূলত হুগলির পান্ডুয়ার গরুর হাট থেকে লরি বোঝাই গরু ইশ্বর গুপ্ত সেতু দিয়ে কল্যাণী হয়ে চলে আসত ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে। বিরহীর হাট থেকেও লরি বোঝাই গরু চাকদহ চৌমাথা থেকে বনগাঁর রাস্তা ধরত বা হরিণঘাটা হয়ে নগরউখড়ার ভিতর দিয়ে গাইঘাটা চলে যেত বনগাঁ সীমান্তে। আবার কখনও কুপার্স ক্যাম্পের উপর দিয়ে নোকারি, ধানতলা, পানিখালি, দত্তফুলিয়া হয়েও যেত বনগাঁ। কিছু যেত ধানতলার সীমান্তের দিকে। অনেক সময়ে বীরনগর হয়ে ধানতলা অথবা তাহেরপুর, বাদকুল্লা হয়ে হাঁসখালির বগুলা। নবদ্বীপের গৌরাঙ্গ সেতু পেরিয়েও লরি বোঝাই গরু চলে আসত কৃষ্ণনগরের কাছে ঝিটকেপোতা এলাকায়। এর পর কিছু গাড়ি চলে যেত রামনগর, কুমরি, ছুটিপুর সীমান্ত এলাকায়। কিছু যেত দত্তফুলিয়া হয়ে বনগাঁ বা ধানতলার হাবাসপুর ও শ্রীরামপুর সীমান্তে। সেখানে কাঁটাতার না থাকার সুযোগে সীমান্ত পার হয়ে পাচার হত বাংলাদেশ। কৃষ্ণনগর থেকে আবার কিছু লরি ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে যেত ধুবুলিয়া, নাকাশিপাড়া। ধুবুলিয়ার সোনাতলা, কালীনগর ঘাট থেকে রাতের অন্ধকারে জলঙ্গি পার হয়ে পায়ে হেঁটে পৌঁছে যেত চাপড়ার বিভিন্ন এলাকায়। নাকাশিপাড়ার বীরনগর, পেটোয়াভাঙা ঘাট পার হয়েও শয়ে শয়ে গরু হেঁটে চলে যেত হৃদয়পুর পঞ্চায়েত এলাকার বিভিন্ন সীমান্তে। বিহার, বর্ধমান ও হুগলি থেকেও লরি বোঝাই গরু এসে নামত কৃষ্ণনগরের গোহাটে। সেখান থেকে ছোট ছোট গাড়িতে চাপিয়ে হাঁসখালি, কৃষ্ণগঞ্জ ও চাপড়া সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হত। কেউ কেউ হাঁটিয়ে কৃষ্ণনগরের উপর দিয়ে গরু নিয়ে আসত আসত চাপড়ার দিকে। দৈয়েরবাজার হয়ে রানাবন্ধ, বাগমারা-বহিরগাছি হয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে। তবে বেশির ভাগই গাড়ি বা লরি সোজা চাপড়া। এলেমনগর, বাঙ্গালঝি, বালিয়াডাঙা, পীতম্বরপুর, গোখরাপোতা, মান্দিয়া ও দুর্গাপুরের মত গ্রামগুলিতে বিভিন্ন বাড়ির গোয়ালে রেখে দেওয়া হত গরু। তার জন্য টাকা দিতে হত বাড়ির মালিককে। পরে রাতের অন্ধকারে ‘লেবার’ বা রাখালরা সেই সব গরু তাড়িয়ে নিয়ে যেত হাটখোলা, মহখোলা, রাঙ্গিয়ারপোতা, পদ্মপালা, শিকরা কলোনি, মধুপুর, ফুলকলমি, মুজফ্ফরপুর, শিমুলিয়া, বাগানেপাড়া এলাঙ্গি গ্রামে। সেখানেও গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই রাখা হত গরু। অন্ধকার নামলেই অন্য এক দল রাখাল বাগদার বিল, গড়ার বিল, প্রতাপতলার বিল বা জলঙ্গিতলার বিলের ধার দিয়ে গিয়ে কাঁটাতার পার করে গরু পৌঁছে দিত বাংলাদেশ সীমান্তে। মুনশিপুর, কুতুবপুর, হুদোপাড়া, পিরপুর, কল্লো গ্রামে। সেখানেই গরুর গায়ে পড়ে যেত স্ট্যাম্প। বিশেষ করে মহখোলা থেকে রাঙ্গিয়ারপোতা, হুদোপাড়া এলাকায় কাঁটাতার না থাকায় এই এলাকা ছিল কার্যত স্বর্গরাজ্য।

Advertisement

উত্তরে করিমপুর, থানারপাড়া, মুরুটিয়া ও হোগলবেড়ি থানা এলাকাও ছিল কার্যত ‘মুক্তাঞ্চল’। মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা থেকে জলঙ্গি পার হয়ে গরু চলে আসত থানারপাড়ার পণ্ডিতপুর, ফাজিলনগর, পিয়ারপুর, লক্ষ্মীপুরে। সেখান থেকে রাতের অন্ধকারে গরু নিয়ে যাওয়া হত পাকসি, ব্রজনাথপুর, বালিয়াডাঙা সীমান্তে। আবার গোপালপুর দিয়ে জলঙ্গি ও ডোমকল থেকে গরু আসত হোগলবেড়িয়ায়। সেখান থেকে কিছু গরু বাউশমারি এলাকা দিয়ে পদ্মা পার হয়ে চলে যেত বাংলাদেশ। কিছু কিছু আবার কাছারিপাড়া, হোগলবেড়িয়া হয়ে সীমান্ত পার হয়ে যেত। যদিও এখন সে সব অনেকটাই অতীত। তবে পুরোপুরি অতীতও নয়।

আরও পড়ুন
Advertisement