— প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
সবে সন্ধ্যা নেমেছে। বই নিয়ে পড়তে বসেছিল নবম শ্রেণির ছাত্রীটি। তখনই সে বাড়ির বড়দের কাছে শুনল, পাত্র দেখা হয়ে গিয়েছে। এ বার বিয়ের জন্য প্রস্তুত হতে হবে তাকে। কখন বিয়ে? নাবালিকার প্রশ্নে বাড়ির লোক জানিয়ে দেন, আজই! মুর্শিদাবাদের সাগরপাড়ার গ্রামের বাড়িটিতে তখন ভিড় জমতে শুরু করেছে আত্মীয়দের। এত আয়োজন ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি মেয়েটি। খবর এল, কয়েকটা বাড়ি পরে মামার বাড়িতে চলছে ভোজের আয়োজন। ১৪ বছরের মেয়েকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ের পিঁড়িতে বসানোর সমস্ত প্রস্তুতিই নিয়ে ফেলেছে পরিবার। ঠিক তখনই বিয়েবাড়িতে হাজির হলেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী, আশাকর্মী এবং পুলিশের আধিকারিকেরা। নাবলিকা কনে মারফত খবর পেয়ে বিয়ে আটকাতে যান তাঁরা।
চকিতে বদলে যায় বিয়েবাড়ির পরিবেশ। বিয়েতে রাজি না হওয়া মেয়েটি জানায়, বান্ধবীকে দিয়ে সে-ই চাইল্ড লাইনে ফোন করিয়েছিল। ঘটনাক্রমে পুলিশ, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, চাইল্ড লাইনের লোকজনের প্রশ্নের মুখে পড়েন নাবালিকার অভিভাবকেরা। পুলিশ দেখে ভয়ে অনেকেই তখন বিয়েবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। বিয়ে বন্ধ করা নিয়ে বেশ খানিক ক্ষণ বাদনুবাদ চলে। কিন্তু প্রশাসনের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, কোনও ভাবেই নাবালিকার বিয়ে দেওয়া যাবে না। জোর করে বিয়ে করতে গেলে পাত্র গ্রেফতার পর্যন্ত হতে পারেন বলে জানিয়ে দেয় পুলিশ।
শেষে পাত্রীর বাবা মুচলেকা দিয়ে জানান, মেয়ে সাবালিকা হলে তবেই তার বিয়ে দেবেন। তখন বর নিয়ে বাড়ি ফিরে যান বরপক্ষের লোকজন। বিয়ে রুখে দিয়ে চলে যায় পুলিশও।
কিন্তু এখানেই শেষ হয়নি। আবার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে নাবালিকা। সে জানায়, বিয়ে রুখে দেওয়ায় বাড়ির লোক তাকে হুমকি দিচ্ছেন। খবর পেয়ে আবার ওই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি। তারা জানাচ্ছে, পদক্ষেপ করা হচ্ছে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্য অর্পিতা মণ্ডল বলেন, ‘‘ওই নাবালিকার এক সহপাঠী ফোন করে জানিয়েছিল বান্ধবীকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। খবর পেয়ে এক জন সিভিক ভলান্টিয়ার ও এলাকার আশাকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে নাবালিকার মাকে বোঝানোর চেষ্টা করি। নাবালিকার মা বিয়ে ভেঙে দিতে রাজি হন। আমরা ওই নাবালিকার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।’’