ফাইল চিত্র।
গত কয়েক দিন ধরেই তিনি বারবার শান্তিপুরে আসছেন। রবিবার উপনির্বাচনের প্রচারে এসে তৃণমূল নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে কার্যত হুঁশিয়ারি দিলেন বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
দিন দুয়েক আগেই এখানে প্রচারে এসে পার্থ বলেন, “শুভেন্দু অধিকারী যত বারই আসুন এখানে তৃণমূলই জিতবে।” সেই প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে এ দিন শুভেন্দু দাবি করেন, “পার্থবাবু কয়েক দিন আগে একটা চিটফান্ডের কেসে সিবিআই অফিসারদের হাত ধরে কান্নাকাটি করেছেন, আমি জানি।” তার পরেই তাঁর হুঁশয়ারি, “পার্থবাবু একটু মুখটা কম খুললেই ভাল থাকবেন। বেশি মুখ খুললে আবার ডাকবে ওঁকে।”
পরে এ প্রসঙ্গে পার্থবাবুর কটাক্ষ, “আসলে ওরা হালে পানি পাচ্ছে না।” তাঁর দাবি, “যে যাকেই ডাকুক, এই চারটে উপনির্বাচনে বিজেপি শূন্য হবে। শান্তিপুরে অন্তত ২৫ হাজার ভোটে জিতবে তৃণমূল।”
এ দিন দলীয় প্রার্থী নিরঞ্জন বিশ্বাস, বিজেপির রানাঘাট দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অশোক চক্রবর্তী, সাংসদ জগন্নাথ সরকার ছাড়াও কয়েক জন বিধায়ক এবং অন্য নেতাদের নিয়ে শান্তিপুরের ছ’টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় র্যালি এবং পথসভা করেন শুভেন্দু। বেলগড়িয়া ১ পঞ্চায়েতের মালিপোতা থেকে র্যালি শুরুর সময়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে নন্দীগ্রামের বিধায়ক দাবি করেন, “দুটো দফতর কাজ করে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমি তো মন্ত্রী ছিলাম! একটা কাটমানি দফতর। আরেকটা ভাতা বিতরণ দফতর। আর তৃতীয় কোনও দফতর পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নেই।”
শান্তিপুর সম্প্রতি ভাগীরথীর ভাঙনের কবলে পড়েছে একাধিক বার। সেই প্রসঙ্গেও শাসক দলকেই নিশানা করে রাজ্যের এক সময়কার সেচমন্ত্রী শুভেন্দু দাবি করেন, “যে কোনও সেচ প্রকল্পে পঞ্চাশ ভাগ দেয় রাজ্য, পঞ্চাশ ভাগ দেয় কেন্দ্র। রাজ্য সরকার কোনও পরিকল্পনা করেনি। উল্টে বালি মাফিয়াদের ছেড়ে দিয়েছে। বাঁধগুলো পর্যন্ত কেটে বেচে দিচ্ছে। এর সঙ্গে শাসক দল যুক্ত আছে আর ভূমি রাজস্ব দফতর, তাদেরও যোগসাজস রয়েছে।”
সম্প্রতি বিএসএফের নিয়ন্ত্রণ সীমান্তের পাশে ১৫ কিলোমিটার থেকে বাড়িয়ে ৫০ কিলোমিটার করার কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্র, যা নিয়ে প্রবল আপত্তি জানিয়ে এ দিনই নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সীমান্ত থেকে অনেক ভিতরে রাজ্য পুলিশের নিয়ন্ত্রণ খর্ব করা অসাংবিধানিক বলে ওই চিঠিতে দাবি করা হয়েছে। শুভেন্দু অবশ্য কেন্দ্রের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “ভারত সরকার ইতিমধ্যে গত দু’সপ্তাহ আগে কার্যত ন’টা জেলা বিএসএফ-এর হাতে নিয়ে নিয়েছে। তার অ্যাকশনটা কী ভাবে হবে তার গাইডলাইন বেরোয়নি।” তাঁর দাবি, “অনুপ্রবেশ থেকে শুরু করে মাদক কারবার, গরুর চালান, সমস্ত বর্ডার-কেন্দ্রিক যা কিছু হয় পুলিশ এবং তৃণমূলের যোগসাজসে। আমি অমিত শাহজিকে টুইট করেছি, তাঁর এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তে পশ্চিম বাংলার লোক খুশি।”
চার মাস আগে এই কেন্দ্রে ১৬ হাজারের বেশি ভোটে জিতেছিলেন রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার, যিনি পরে বিধায়ক পদ ছেড়ে দেওয়াতেই এই অকাল নির্বাচন। তাঁরা মুখে যা-ই দাবি করুন, এ বার যে জয় তত সহজ হবে না তা বিজেপি নেতারা ভাল করেই জানেন। সে কারণে প্রচার তুঙ্গে নিয়ে যেতে তাঁরা কোনও কসুর করছেন না। এ দিন তৃণমূল সরকারের অন্যতম জনপ্রিয় ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্প প্রসঙ্গে শুভেন্দু দাবি করেন, “ভোটের আগে পাঁচ কোটি মহিলাকে দেবে বলেছিল। ভোটের পরে পাঁচ কোটির বদলে এক কোটি পঁচাশি লক্ষ মহিলার দরখাস্ত দুয়ারে সরকারে নিয়েছিলেন। বাতিল করতে করতে আশি লক্ষ থেকে এক কোটিতে। কত দিন চলবে, আমরা জানি না। কিন্তু আমরা মনে করি, সব মহিলাকে দেওয়া উচিত।”