প্রতীকী চিত্র।
দলবদলের স্রোত বইতে শুরু করেছে বিপরীতমুখী হয়ে। গেরুয়া শিবিরের কাছে যেমন চ্যালেঞ্জ সেই ধাক্কা সামাল দিয়েই আসন ধরে রাখা, আবার শাসক তৃণমূলের কাছেও লড়াই চার মাস আগে প্রায় ১৬ হাজার ভোটে হারের ব্যবধান ঘুচিয়ে নদিয়ার দক্ষিণে খাতা খোলা। দুই দলেরই জেলা স্তরের একাধিক নেতৃত্ব দূর্গ আগলাতে ঝাঁপিয়েছেন শান্তিপুরে।
উপনির্বাচনের আগে শান্তিপুরে ক্রমশ বিজেপি থেকে নেতাকর্মীদের তৃণমূলমুখী হওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। চার মাস আগের বিধানসভা ভোটের সময়ে এই স্রোত উল্টোমুখো ছিল। শান্তিপুরে গেরুয়া শিবিরের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা অবশ্য দু’বছর আগের লোকসভা ভোটের সময়েই। এই বিধানসভা এলাকা থেকেই প্রায় ৩৫ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিলেন বিজেপি প্রার্থী জগন্নাথ সরকার। আবার মাস চারেক আগের ভোটে সেই জগন্নাথ সরকারই শান্তিপুরে জিতেছেন প্রায় ১৬ হাজার ভোটে। ফলে লোকসভার তুলনায় বিধানসভা নির্বাচনে অনেকটাই ভোট কমেছে বিজেপির। এ বারের উপনির্বাচনে তাই এই আসন ধরে রাখাও চ্যালেঞ্জ গেরুয়া শিবিরের কাছে।
চার মাস আগে বিধানসভা ভোটে নদিয়া জেলার দক্ষিণে একটি আসনও জেতেনি তৃণমূল। কাজেই এই উপনির্বাচনে জিতে অন্তত দক্ষিণে খাতা খোলাও লক্ষ্য শাসক দলের। ত-তৃণণূলের গোষ্ঠী কোন্দল আগে থেকেই শান্তিপুরে দলের মাথাব্যথার কারন। তবে তা দূর করতে চেষ্টার খামতি রাখেননি নেতৃত্ব। প্রচারে প্রথম থেকেই ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তারা। জেলা স্তরের একাধিক নেতানেত্রী প্রথম থেকেই মাটি কামড়ে পড়ে রয়েছেন। জেলা সভানেত্রী, জেলা সভাধিপতি থেকে শুরু করে রাজ্যের মন্ত্রী, সাংসদের পাশাপাশি শাখা সংগঠনের নেতৃত্বকেও বারবার দেখা যাচ্ছে শান্তিপুরে। সোম এবং মঙ্গলবার টানা দু’দিনের প্রচারে রয়েছেন মমতাবালা ঠাকুর। এর আগেই এক দফা কর্মিসভা সেরে গিয়েছেন যুব তৃণমূলের সভানেত্রী সায়নী ঘোষ।
এর সঙ্গেই চলছে বিজেপির ঘর ভাঙার খেলাও। বিজেপির মণ্ডল সভাপতি, যুব মোর্চার এক মণ্ডল সভাপতির মতো নেতা, বুথস্তরের নেতারাও ইতিমধ্যেই ফুল বদল করে নাম লিখিয়েছেন তৃণমূলে। সেই ধাক্কা ছাড়াও দলের কোন্দল নিয়েও প্রশ্ন ছিল কোনও কোনও জায়গায়। তবে বিজেপি প্রার্থী নিরঞ্জন বিশ্বাসের দাবি, “আমাদের ব্যক্তিনির্ভর দল নয়, কাজেই কারও দলত্যাগের প্রভাব পড়বে না। আর অনেক জায়গায় এক জনকেই একাধিক বার যোগদান দেখানো হচ্ছে। শান্তিপুরের মানুষ আগেও প্রমাণ করেছেন যে তাঁরা আমাদের সঙ্গেই আছেন। এ বারও সেটাই প্রমাণ হবে।”
ইতিমধ্যে প্রচারে জোরকদমেই ঝাঁপিয়েছে পদ্ম শিবির। এক দিনেই শহর এবং গ্রামে কর্মিসভা করে গিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। জেলার বিধায়কদেরও বিভিন্ন দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। জেলা সভাপতি, জেলার পদাধিকারী ও দলের শাখা সংগঠনের পদাধিকারীরাও বিভিন্ন স্তরে প্রচার ও নির্বাচনী নানা দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। মাস চারেক আগের ভোটে শান্তিপুর শহর থেকে অল্প ভোটে হলেও লিড পেয়েছিল তৃণমূল। বাকি ছয়টি পঞ্চায়েত এলাকার মধ্যে এক মাত্র গয়েশপুর ছাড়া বাকি সবগুলিতে এগিয়ে ছিল বিজেপি। শহরাঞ্চলের ভোটের পাশাপাশি গ্রামীণ এলাকার ভোটেও তাই সমান জোর দিচ্ছে সব পক্ষই।
তৃণমূল প্রার্থী ব্রজকিশোর গোস্বামী দাবি করছেন, “মানুষ যে আমাদের সঙ্গে আছেন তা প্রচারে বেরোলেই বোঝা যাচ্ছে। বিশ্বাসঘাতকতার বিরুদ্ধে রায় দেবেন মানুষ। আর এখন বিজেপির থেকেই তো নেতাকর্মীরা আমাদের দলে চলে আসছেন!