Barricade Controversy

নাট্যজনের ঠাঁই নেই কেন, প্রশ্ন থাকছেই

আগের বার কল্যাণী পুরসভা যুক্তি দিয়েছিল, সরকারি স্বনির্ভর মেলা করার জন্যঅই নাট্যদলের বুকিং বাতিল করতে হয়েছে।

Advertisement
দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় 
শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২৩ ০৯:১৮

নিজের জেলা নদিয়াতেই বার বার বিপত্তির মুখে পড়ছে চাকদহ নাট্যজন। নভেম্বরের গোড়াতেই ঋত্বিক সদনে তাদের চার দিনের নাট্যোৎসবের বুকিং বাতিলের কথা জানিয়ে দিয়েছিল তৃণমূল পরিচালিত কল্যাণী পুরসভা। এ বার নবদ্বীপেও তাদের ঠাঁই হল না।

Advertisement

সম্প্রতি দেবেশ চট্টোপাধ্যায়ের পরিচালনায় উৎপল দত্তের ‘ব্যারিকেড’ পুনরায় মঞ্চস্থ করছে চাকদহ নাট্যজন। মঙ্গলবার রাতে সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট থেকে জানা যায়, আগামী বছর ২৩ জানুয়ারি নবদ্বীপ রবীন্দ্র সংস্কৃতি মঞ্চে নাটকটি মঞ্চস্থ করার জন্য তাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিল সায়ক সাংস্কৃতিক সংগঠন। কিন্তু নবদ্বীপ পুরসভা মঙ্গলবার দুপুরে উদ্যোক্তাদের জানিয়েছে, ব্যারিকেড নাটকটি করা যাবে না।

এর সঙ্গেই পোস্ট করা হয় সায়কের প্যাডে লেখা একটি চিঠির ছবি। যাতে দেখা যাচ্ছে, গত ২৮ অগস্ট চাকদহ নাট্যজনকে রবীন্দ্র সংস্কৃতি মঞ্চে ‘ব্যারিকেড’ উপস্থাপন করার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন সায়কের সম্পাদক মোহন রায়। সমাজমাধ্যমে ওই চিঠির ওপর লাল সিলমোহর দিয়ে মোটা করে ‘ক্যানসেলড’ লিখে পোস্ট করা হয়েছে।

প্রত্যাশিত ভাবেই, বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। নাট্যপ্রেমীরা একে নাটকের স্বাধীনতার উপর আঘাত বলেই মনে করছেন। কেননা, গত ২ নভেম্বর শহিদ মিনারে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের ধর্নাস্থলে নাটক করার পরেই সন্ধ্যায় কল্যানী পুরসভার পক্ষ থেকে তাদের চার দিনের নাট্যোৎসবের বুকিং বাতিলের খবর দিয়ে ইমেল এসেছিল। দেবেশ চট্টোপাধ্যায়ের নাট্য নির্দেশনার ৩৫ বছর উদ্‌যাপন করতে সেখানে তাঁর নির্দেশিত ছ’টি নাটক মঞ্চস্থ হওয়ার কথা ছিল। ‘ব্যারিকেড’ ছিল সেই উৎসবের উদ্বোধনী নাটক।

আগের বার কল্যাণী পুরসভা যুক্তি দিয়েছিল, সরকারি স্বনির্ভর মেলা করার জন্যঅই নাট্যদলের বুকিং বাতিল করতে হয়েছে। বুধবার নবদ্বীপের পুরপ্রধান, তৃণমূলে বিমানকৃষ্ণ সাহা আবার দাবি করেন, “অনুমতি দিলে তবে তো বাতিলের প্রশ্ন ওঠে। ‘ব্যারিকেড’ বলে কোনও নাটকের কথাই আমি জানি না। আমার কাছে এমন কোনও আবেদনই আসেনি। নাটক না হতে দেওয়ার প্রশ্ন তো অনেক পরে।”

আবেদনই করা না হয়ে থাকলে অনুমতি না দেওয়ার প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে?

পুরপ্রধান বলেন, “আমি চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি, সায়কের লোকজন পুরসভার অনুমতিপত্র দেখান। আসলে এ হল এক ধরনের নেতিবাচক প্রচার। নাটকে দর্শক টানার কৌশল!” সায়ক সাংস্কৃতিক সংগঠনের সম্পাদক মোহন রায়ের ব্যাখ্যা, “নবদ্বীপে আমরা যে ভাবে নাটক করে থাকি তাতে লিখিত কাগজপত্রের বিশেষ দরকার হয় না। নিয়মিত অনুষ্ঠানেরর জন্য পুরসভার সঙ্গে আমাদের যথেষ্ট বোঝাপড়া আছে। আমরা জানতে পারি, কবে হল ফাঁকা বা বুক আছে। পুরসভার লোকজনের সঙ্গে মৌখিক কথার ভিত্তিতেই চাকদহ নাট্যজনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম।”

মোহনের দাবি, “পরশু আমাকে ‘আনঅফিশিয়ালি’ জানানো হয় যে ব্যারিকেড নাটকটি করা যাবে না। কিন্তু কেন এই নাটক করা যাবে না, সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।” তবে তার পরেও তাঁর সংযোজন, “এর মধ্যে কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে বলে আমার মনে হয়নি।” আর পুরপ্রধানের দাবি, “নাটক বন্ধ করা নিয়ে যা যা বলা হচ্ছে সব মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। আমরা সাত দিন আগে হলের অনুমোদন দিয়ে থাকি।” সেই সঙ্গেই তিনি যোগ করেন, “২৩ জানুয়ারি নেতাজির জন্মদিন। সে দিন অন্য অনুষ্ঠান থাকে, এ বারও আছে।”

কল্যাণী ঋত্বিক সদনে বুকিং বাতিল হওয়ার পরেই চাকদহ নাট্যজনের কর্ণধার সুমন পাল জানিয়েছিলেন, মঞ্চ পাওয়ার জন্য তাঁরা চাকদহ পুরসভার কাছে আবেদন করবেন। তবে এ দিন চাকদহের পুরপ্রধান, তৃণমূলের অমলেন্দু দাস বলেন, এখনও আমরা হল ভাড়া করার আবেদন পাইনি।”

(সহ প্রতিবেদন: সৌমিত্র সিকদার)

আরও পড়ুন
Advertisement