Show Cause to TMC leader

তৃণমূলের শোকজ়, ঠাঁই হল না স্থায়ী সমিতিতে

এ বার জেলার বেশ কিছু গ্রাম পঞ্চায়েতে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ভোটাভুটি হয়েছিল বোর্ড গঠনে। যেমন শালবনির দেবগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েত। এখানে বোর্ড গঠনে ভোটাভুটি হয়েছিল।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০২৩ ০৯:০৫
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

দলবিরোধী কাজকর্ম করলে রেয়াত করা হবে না। আরও এক পদক্ষেপে এটা স্পষ্ট করল তৃণমূল। দলবিরোধী কাজকর্মের অভিযোগে এক নেতাকে শোকজ় করেছিলেন তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব। ওই নেতা শালবনি পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য। এখনও শোকজ়ের জবাব দেননি তিনি। বৃহস্পতিবার ওই পঞ্চায়েত সমিতির স্থায়ী সমিতিগুলি গঠন হয়েছে। জানা গিয়েছে, কোনও স্থায়ী সমিতিতেই ঠাঁই হয়নি ওই নেতার। অর্থাৎ, সমিতির কর্মাধ্যক্ষ হওয়া তাঁর আর হচ্ছে না।

Advertisement

জানা গিয়েছে, তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব বুধবারই ব্লক নেতৃত্বকে স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, ওই নেতাকে কোনও স্থায়ী সমিতির সদস্য করা যাবে না। শোকজ়ের জবাব দেননি, তাই কি দল ওই নেতার বিরুদ্ধে এই কঠোর পদক্ষেপ করল? তৃণমূলের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, ‘‘দলবিরোধী কাজকর্ম, দিনের পর দিন দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা, দলের নেতৃত্বের পিছনে ছুরি মারার প্রচেষ্টা, এ সব বরদাস্ত করা হবে না।’’ শালবনি পঞ্চায়েত সমিতির ওই সদস্যের নাম কাশেম খান। কাশেম জেলা তৃণমূলের সহ সভাপতি ছিলেন। সপ্তাহ খানেক আগে তাঁকে শোকজ় করেছিলেন তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব। শাসক দলের অন্দরের সমীকরণে কাশেম‌ কিন্তু সুজয়ের অনুগামী হিসেবে পরিচিত। বরং তাঁর সঙ্গে ‘বনিবনা’ ছিল না তৃণমূলের শালবনি ব্লক সভাপতি তথা শালবনি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নেপাল সিংহের বলে জল্পনা। সুজয় তাঁর অনুগামীর বিরুদ্ধেই এমন কঠোর পদক্ষেপে সায় দেওয়ায় বিস্মিত দলের অনেকে। সুজয় অবশ্য শোনাচ্ছেন, ‘‘দলে থেকে দলবিরোধী কাজকর্ম যে করবে, তাঁর বিরুদ্ধেই দল ব্যবস্থা নেবে। এখানে কাছের-দূরের ব্যাপার নেই।’’

এ বার জেলার বেশ কিছু গ্রাম পঞ্চায়েতে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ভোটাভুটি হয়েছিল বোর্ড গঠনে। যেমন শালবনির দেবগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েত। এখানে বোর্ড গঠনে ভোটাভুটি হয়েছিল। পঞ্চায়েত ভোটে এখানে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছিল তৃণমূল। তারপরও বোর্ড গঠনে ভোটাভুটি হয়েছিল। কেন? দলেরই এক সূত্রের দাবি, দলের এক সংখ্যালঘু নেতা এলাকায় তাঁর ‘কর্তৃত্ব কায়েমে’র চেষ্টা করেছিলেন। ভোটাভুটি না কি সে জন্যই হয়। দল এখানে যাকে প্রধান হিসেবে মনোনীত করেছিল, তিনি ছিলেন কুড়মি সম্প্রদায়ের। ভোটাভুটিতে অবশ্য দলের মনোনীত প্রার্থী পরাজিত হয়েছিলেন। যিনি প্রধান হয়েছেন, তিনি সংখ্যালঘু। নবনির্বাচিত প্রধান জেলার ওই সংখ্যালঘু নেতার ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। দলের এক সূত্রে খবর, ব্লক থেকে প্রধান হিসেবে তিনজনের নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল। এর মধ্যে যিনি প্রধান হয়েছেন, তাঁর নামও ছিল। দল কিন্তু চেয়েছিল, কুড়মি সম্প্রদায়ভুক্ত সদস্যই প্রধান হোক। কারণ, গ্রামবাসীদের একটা বড় অংশ এই সম্প্রদায়ভুক্ত। দলের হুইপ ছিল, ভোটাভুটিতে যাওয়া যাবে না। সেই হুইপ অগ্রাহ্য করে এখানে ভোটাভুটি হয়েছিল। ঘটনাচক্রে, এরপরই কাশেমকে শোকজ় করেছিলেন তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব।

পশ্চিম মেদিনীপুরে বেশিরভাগ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, সহ সভাপতি নির্বাচন হয়ে গিয়েছিল। বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত সমিতিগুলির স্থায়ী সমিতি গঠন হয়েছে। এদিন স্থায়ী সমিতি গঠন হয়েছে। কিছু দিন পরে সমিতির কর্মাধ্যক্ষ নির্বাচন হওয়ার কথা। পঞ্চায়েত সমিতিতে অর্থ- উন্নয়ন- পরিকল্পনা বাদে ৯টি স্থায়ী সমিতি থাকে। এক-একটি সমিতির সদস্য হন ৫ জন। পরে এঁদেরই একজন সংশ্লিষ্ট স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ হন। সমিতির এক সদস্য সর্বাধিক তিনটি স্থায়ী সমিতির সদস্য হতে পারেন। এর বেশি নয়। পশ্চিম মেদিনীপুরে ২১টি পঞ্চায়েত সমিতি রয়েছে। জানা গিয়েছে, এরমধ্যে কেশিয়াড়ি, নারায়ণগড়, কেশপুর, ঘাটাল, চন্দ্রকোনা- ২, এই ৫টি পঞ্চায়েত সমিতি বাদে বাকি ১৬টি পঞ্চায়েত সমিতির স্থায়ী সমিতি গঠন এদিন হয়েছে। নিয়মানুযায়ী, স্থায়ী সমিতি গঠনের পরে, সমিতির পরবর্তী বৈঠকে কর্মাধ্যক্ষ নির্বাচন হবে। সেপ্টেম্বরের গোড়ার দিকে সমিতির পরবর্তী বৈঠক হতে পারে। জেলা তৃণমূল সূত্রে খবর, শালবনির কাশেম এখনও শোকজের জবাব দেননি। তাঁর বিরুদ্ধে দলবিরোধী কাজের যে অভিযোগ উঠছে, যে অভিযোগের জেরে তাঁকে দল শোকজ় করেছে, তা কি যথাযথ? এ দিন চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি শালবনির ওই নেতার সঙ্গে। তাঁর ফোন বেজে গিয়েছে।

আরও পড়ুন
Advertisement